ফুল দিয়ে ত্বকের যত্ন

ফুল দিয়ে ত্বকের যত্ন

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ত্বকের জৌলুস ধরে রাখতে ফুলের নির্যাস ও তেল কার্যকর। ঘরে বসে সহজলভ্য ফুল দিয়ে ত্বকচর্চার উপায় জানাচ্ছেন পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান।

 

গোলাপ-

 

সারা বছর সহজলভ্য গোলাপ। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও কালচে ভাব কমাতে দারুণ কার্যকর। এ ছাড়া বলিরেখা দূর করে ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। গোলাপের কয়েকটি পাপড়ি কাঁচা দুধে ভিজিয়ে রেখে আধা ঘণ্টা পর পেষ্ট করে নিন। এর সঙ্গে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। পুরো মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ত্বককে করে তুলবে কোমল ও মসৃণ।

 

গোলাপ ও কমলা খোসার ফেস প্যাকও ত্বকের জন্য উপকারী। এ জন্য গোলাপের পাপড়ি ভালো করে পেস্ট করে ২ টেবিল চামচ কমলার খোসা গুঁড়া মিশিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে যোগ করতে হবে এক টেবিল চামচ দই। মুখে ও গলায় মেখে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে নিলেই হবে। এই ফেস প্যাক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা সন্ধ্যায় ব্যবহার করাই ভালো।

 

ত্বকে দাগছোপ থাকলে ব্যবহার করুন চন্দন ও গোলাপের প্যাক। গোলাপের পাপড়ির পেস্টের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়া আর এক চা চামচ গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ৪০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

 

মৃতকোষ সরিয়ে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কভাব দূর করে ত্বককে কোমল ও উজ্জ্বল করতে গোলাপ ও ডিমের ফেস প্যাক দারুণ। এ ক্ষেত্রে একটি ডিমের সাদা অংশ ও ১ টেবিল চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। সঙ্গে যোগ করতে হবে তাজা গোলাপের পাপড়ির পেস্ট। প্যাকটি আধ ঘণ্টার জন্য রেখে দিতে হবে ত্বকে।

 

এ ছাড়া গোলাপজল সব ধরনের ত্বকের জন্যই খুব ভালো টোনারের কাজ করে। ত্বক পরিষ্কারের পর গোলাপজল তুলার বল দিয়ে লাগান। শুকিয়ে গেলে তার পর ময়েশ্চারাইজার লাগান। দিনে দুবার করুন। ত্বকের লোমকূপ বড় হয়ে যাওয়া সমস্যায় গোলাপের টোনার চমকপ্রদ ফল দেবে।

 

 

গাঁদা-

 

এই ফুল খুবই কার্যকর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। ব্রণের সমস্যা দূর করতে অব্যর্থ। কয়েকটি পাতাসহ গাঁদা ফুল থেঁতো করে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখুন ঘণ্টাখানেক। নিয়মিত করলে উপকার মিলবে।

 

সানবার্ন ও ত্বকের কালো ছোপ দূর করতে গাঁদা ফুলের পাপড়ি বাটা, চন্দন গুঁড়া ও গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগান। এতে দাগ দূর হবে আর উজ্জ্বলতাও বাড়বে।

 

ত্বকের টান টান ভাব ফিরিয়ে আনতে কয়েকটি গাঁদা ফুলের পাপড়ির সঙ্গে গুঁড়া দুধ, টক দই, মধু ও গাজরকুচি একসঙ্গে পেস্ট করে রাখুন। ত্বকে প্রথমে অল্প দুধের সরের সঙ্গে এক টেবিল চামচ চন্দন বাটা, চার ফোঁটা গোলাপজল, দুই ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করে নিন। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে আগে তৈরি করে রাখা ফুলের মিশ্রণ দিয়ে ম্যাসাজ করুন। এটি ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। ত্বকের মৃত কোষ দূর করে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

 

 

জবা-

 

ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধে জবা প্রাচীনকাল থেকেই জনপ্রিয়। অ্যান্টি অক্সিডেন্টযুক্ত ফুলটি ত্বকের কোষকে পুনরুজ্জীবিত রাখতে সাহায্য করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে বাঁচায়। ফলে ত্বক থাকে উজ্জ্বল ও দাগমুক্ত। ব্যবহারও সহজ। লাল জবা ফুল থেঁতো করে চালের গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। ত্বকে মেখে রাখুন ১০ মিনিট। তারপর আলতো করে ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। মৃত কোষ দূর করে ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করবে এ প্যাক। এ ছাড়া জবা ফুলের পেস্টের সঙ্গে চালের গুঁড়া, অ্যাসেনশিয়াল অয়েল যেমন ভিটামিন ‘ই’ আর অল্প পানি দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে মেখে নেওয়া যেতে পারে মুখে। মুখ থেকে ময়লা, দূষণ আর তেল থেকে মুক্তি পেতে এটি দারুণ।

 

 

পদ্ম-

 

ক্লিনজার, টোনার ও ময়েশ্চারাইজার—তিনভাবেই কার্যকর পদ্ম ফুলের রস। প্যাক বানাতে পদ্ম ফুলের পাপড়ি বেটে রস ছেঁকে নিন। ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে এই রস তুলায় ভিজিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। ত্বক পাবে পরিপূর্ণ পুষ্টি। ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে পদ্ম পাপড়ি চটকে চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পদ্ম ফুলের পাপড়ি ভালো করে ধুয়ে পানিতে ৪ মিনিট সিদ্ধ করে পেস্ট করতে হবে। সঙ্গে মেশান টক দই আর মধু। সন্ধ্যা বা রাতে ত্বক পরিষ্কার করে এই প্যাক লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। ত্বক উজ্জ্বল হবে। পদ্ম ফুলের পাপড়ি পানিতে ফুটিয়ে যেকোনো ফেস প্যাকের সঙ্গে এটি মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খুব বেশি স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয় পদ্ম।

 

 

রজনীগন্ধা-

শুষ্ক, রুক্ষ ত্বকে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে রজনীগন্ধা। এ জন্য ফুলের পাপড়ি পেস্টের সঙ্গে সামান্য মাখন ও মধু মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেললেই চলবে।

 

 

বেলি-

 

ত্বক টান টান ও মসৃণ করতে বেলি খুব কার্যকর। নিয়মিত ব্যবহারে বলিরেখাও দূর হয়। বেলি ফুল থেঁতো করে নিয়ে এর সঙ্গে অ্যালোভেরার রস ও মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে প্যাক। যাদের শুষ্ক ত্বক, তারা এটি মুখে সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। এটি ত্বকের শুষ্কতা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।

 

এ ছাড়া বেলি ফুলের পাপড়ি ফুটন্ত পানিতে তিন থেকে পাঁচ মিনিট রাখার পর পানি ছেঁকে দুধের মালাইয়ের সঙ্গে পেস্ট করে নিয়েও তৈরি করা যায় প্যাক। মসৃণ ত্বকের জন্য দারুণ কাজ করে এটি। যাদের সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল ত্বক, তারা টক দইয়ের সঙ্গে ব্লেন্ড করে মুখে লাগান বেলি। সপ্তাহে একবার করলেই চলবে। বেলি ফুলে অ্যালোভেরা মিশিয়ে ত্বকে লাগালেও ত্বক টান টান ও মসৃণ হয়ে উঠবে।

 

 

জুঁই-

এক মুঠো জুঁই ফুল পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে পানিটা আলাদা করে রেখে দিন। আর সিদ্ধ ফুলগুলো পেস্ট করে টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে মাখতে হবে ১৫ মিনিটের জন্য। মুখ ধুয়ে তার পর জুঁই ফুল ফোটানো পানিটি টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন। সেনসেটিভ বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এই ফেস প্যাক ও টোনার খুবই ভালো।

 

 

শাপলা-

 

শাপলা ফুল, নিমের তেল ও তিল বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণ সমস্যার সমাধান হয় সহজেই।

 

 

 

খেয়াল রাখুন-

♦    প্যাক তৈরির আগে ফুল ভালো করে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। ফুল কখনোই সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়। অবশ্যই অন্য কোনো ত্বকবান্ধব উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

♦    ফুলের তৈরি প্যাক টাটকা অবস্থায় ব্যবহার করুন। বেশি সময় রেখে দিলে এতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।

♦    ফুলের প্যাক ব্যবহার করার আগে হাতের কোনো অংশে মেখে দেখে নেওয়া উচিত এর থেকে ত্বকে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় কি না।

 

 

 

 

 

 

সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ

ছবিঃ সংগৃহীত