বৈচিত্র্যময় ব্লাউজ
শাড়ির সঙ্গে অবধারিতভাবে যে পোশাকের নামটি উচ্চারিত হয়, সেটি ব্লাউজ। যতটা না ফ্যাশনের জন্য তার চেয়ে বেশি প্রয়োজনেই এর ব্যবহার। তবে হালফ্যাশনে ব্লাউজের নকশা শাড়ির চেয়ে কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। হালফ্যাশনে কখনো শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে ব্লাউজ নির্বাচন করা হয়, তো কখনো আবার ব্লাউজটাই হয়ে ওঠে মুখ্য, যার সঙ্গে ম্যাচিং করা হয় বারো হাত শাড়িটিই! দারুণ ডিজাইনের ব্লাউজে ফুটিয়ে তুলুন শাড়িটি। ফ্যাশনে বৈচিত্র্যময় ব্লাউজের খোঁজ জানাচ্ছেন,রওনক বিথী-
কথা হয় বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী এবং ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহার সঙ্গে। তিনি মনে করেন, বাঙালি নারীদের যে কোনো ফ্যাশনের মতো নকশা করা ব্লাউজের চলটাও শুরু হয় ঠাকুরবাড়ির নারীদের হাত ধরেই; যা আজও আমাদের ফ্যাশনের অন্যতম অংশ। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ তো মিলিয়ে পরা হয়-ই কখনো দেখা যায় ব্লাউজের সঙ্গেও শাড়ি মেলানো হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ ব্লাউজ এখন মূল পোশাক হিসেবেই গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই ফ্যাশনের সঙ্গে চলতে কালার, মোটিফ, ট্রেন্ড বুঝে ব্লাউজ নির্বাচন করা উচিত।
ব্লাউজে বৈচিত্র্য আনতে চাইলে ব্লাউজের প্যাটার্ন নয়তো মোটিফ যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন বিপ্লব সাহা। আর প্যাটার্ন এবং মোটিফ দুটোতেই ডিজাইন করতে চাইলে একটু সচেতন থাকতে হবে। নয়তো ব্লাউজটি জবরজং মনে হতে পারে বলে জানালেন। তিনি আরও বলেন, শাড়ি, ঋতু, উৎসব, শারীরিক গড়ন বুঝে ব্লাউজের নকশা নির্বাচন করতে হবে।
গরমে বোটনেক, পেছনে ও হাতায় কাটা, বড় গলা, ‘ভি’ গলার স্লিভলেস, শর্ট স্লিভ ব্লাউজ আরামদায়ক হবে। এ ধরনের প্যাটার্নের সঙ্গে পাইপিং, প্রিন্ট, চেক ব্যবহার করা যেতে পারে। জমকালো সাজে এম্ব্রয়ডারি, চুন্দ্রি, স্টোন সেটিং ব্লাউজে গর্জিয়াস লুক আসে। গর্জিয়াস ব্লাউজের সঙ্গে একরঙা কিংবা হালকা কাজের শাড়ি নজর কাড়বে। ট্র্যাডিশনাল উৎসবে তাঁত, সুতি শাড়ির সঙ্গে কাঁথাস্টিচ, টাইডাই, প্যাচওয়ার্কের নকশা প্যাটার্নের ব্লাউজ খুব ভালো মানায়। একরঙ বা চেক কাপড়ে ফিতা, পাইপিং, কুঁচি দেওয়া ব্লাউজও এ ধরনের উৎসবে নতুনত্ব আনে।
ফ্রিল দেওয়া ব্লাউজ-
পাতলা কাপড় দিয়ে ফ্রিল দেওয়া ব্লাউজ এখন জনপ্রিয়। স্টাইলটি যে কোনো ধরনের গলার ডিজাইনের সঙ্গেই ভালো লাগে। কম বয়সী মেয়েদের জন্য মানানসই এ ব্লাউজ।
নেট বোটনেক ব্লাউজ-
গলাটা কাঁধ পর্যন্ত উঠানো আর ব্লাউজের ওপরের অর্ধেকটা অংশে নকশা করা নেটের কাপড় জুড়ে দেওয়া এ ধরনের ব্লাউজই হচ্ছে নেট বোটনেক ব্লাউজ। বেশ জমকালো ধাঁচের এ ব্লাউজগুলো একরঙ কিংবা হালকা কাজের শিফন, সিল্ক, মসলিন শাড়ির সঙ্গে ভালো লাগবে।
স্টোন সেটিং-
ব্লাউজের পেছনে, গলায়, হাতায় স্টোনের কাজ করতে পারেন কিংবা স্টেনের কাজ করা নেটের কাপড় জোড়া দিয়ে জমকালো স্টোন সেটিং ব্লাউজ তৈরি করতে পারেন। স্লিভলেসের সঙ্গে কাঁধের কাছে স্টোনের ভারী নকশা ভালো লাগবে।
টিউব চোলি-
এ ধরনের ব্লাউজে কোনো শোল্ডার ও স্লিভ থাকে না। এ ব্লাউজের প্রধান অংশ হচ্ছে জিপার। ড্রামাটিক লুক পেতে জিপারের জায়গায় কলার বিডও ব্যবহার করতে পারেন।
কোটি ব্লাউজ-
কোমর পর্যন্ত লম্বা কোটি ব্লাউজগুলো এখন ফ্যাশনে দারুণ জনপ্রিয়। ব্লাউজের ওপর আলাদাভাবে কোটি পরার চলও এসেছে। যা দেখতে ব্লাউজের নকশাই মনে হয়। এ ধরনের ব্লাউজের সঙ্গে শাড়ির আঁচল পেছন থেকে সামনে এনে পরলে বেশি ভালো দেখায়।
হাতায় বৈচিত্র্য-
হাইনেক ও বোটনেক গলায় নেটের ফুলস্লিভ নকশাদার ব্লাউজ পরতে পছন্দ করেন মডেল ও কোরিওগ্রাফার বুলবুল টুম্পা। এ ধরনের ব্লাউজ সিম্পল শাড়ির সঙ্গেও জমকালো লুক আনে বলে মনে করেন তিনি। জানান, ফুলস্লিভ, স্লিভলেস, শর্ট স্লিভ ঘটি হাতা, মেগি হাতা ব্লাউজে খুব সহজেই বৈচিত্র্য আনে। একটু ফোলানো ঘটি হাতার ব্লাউজ ট্র্যাডিশনাল শাড়ির সঙ্গে ভালো লাগবে। ফিউশন আনতে চাইলে জর্জেট বা সিফনের সঙ্গে ঘটি হাতা পরতে পারেন। যদি বড় হাতা হয় তবে হাতার শেষে পাড় না লাগিয়ে মাঝ বরাবর পাড় লাগিয়ে নিলে নতুনত্ব আসবে।
গড়ন বুঝে ব্লাউজ-
স্লিম স্বাস্থ্যের অধিকারীদের কলার, হল্টার নেক, হাইনেক গলার সঙ্গে স্লিভলেস, শর্ট স্লিভ হাতার ব্লাউজ মানাবে। বেশি শুকনা হলে স্লিভসহ ফোলানো ব্লাউজ পরুন। ভারী গড়নের নারীদের জন্য স্লিভলেস ব্লাউজ অতটা মানানসই নয়। এ ক্ষেত্রে ভালো লাগবে থ্রি-কোয়ার্টার কিংবা ফুলহাতার ব্লাউজ। ঘাড় এবং হাতা মেদহীন ও লম্বা হলে স্লিভলেস ব্লাউজ পরা যাবে অনায়াসে।
জেনে নিন-
ব্লাউজের ফিটিং ভালো হওয়া খুব জরুরি। তা না হলে ব্লাউজের পুরো সৌন্দর্যটাই ম্লানন হয়ে যেতে পারে।
মসলিন, জর্জেট বা সিল্কের ব্লাউজের ভেতরে সুতি লাইনিং দিতে না চাইলে ব্লাউজের কাপড় দিয়েই ডাবল লাইনিং দেওয়া যেতে পারে।
ব্লাউজের নেক লাইনে কাজ থাকলে গলায় গয়না পরা থেকে বিরত থাকুন। এতে ব্লাউজের সৌন্দর্য বজায় থাকবে। এ ক্ষেত্রে কানে ভারী গয়না পরুন। নকশা করা ব্লাউজের সঙ্গে মিলিয়ে জুয়েলারি নির্বাচন করুন।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়
ছবিঃ সংগৃহীত