 
                                                                    
                            নিজেকেও ক্ষমা করুন
এমনকি কখনো হয়, যখন কিছু পরিস্থিতিতে আমাদের নিজেদেরই ক্ষমা করতে হয় ? কথায় বলে, ‘মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়’। হ্যাঁ, প্রতিনিয়তই আমরা এই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাই। তাই কিছুদিন আগেও যে আচরণ আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হতো, ঠিক সেটিই এখন আপনার কাছে ‘অপরাধ’ মনে হয়! আর নিজের মনের মধ্যে শুরু হয়ে যায় একটি দ্বন্দ্ব, যেখানে হয়তো অনেক সময় ভুল শোধরানো বা ক্ষমা চাওয়ার সময়টাও থাকে না।
আর এমন পরিস্থিতিতে নিজেই নিজের বন্ধু হিসেবে ভূমিকা পালন করুন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন নিজের প্রতিই।
বুঝতে শিখুন নিজেকেও-
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলর অ্যানি বাড়ৈ বলেন, ‘কোনো মানুষই চিরদিন একরকম থাকে না। এটাকে আপনি ইতিবাচকভাবেই দেখতে পারেন। বয়স, পরিবেশ আর সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখা দেয় মানুষের মাঝেও। নিশ্চয়ই আপনি স্কুলে যেমন আচরণ করতেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তেমন করবেন না। কেননা আপনি নিজে থেকেই বুঝতে শিখবেন কোনটি ঠিক।’
এমনও হতে পারে, আপনার শেখার গতি একটু মন্থর বা কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আপনি এখনো আচরণ করেন সেই কৈশোরের মতো। কিন্তু তাই বলে এমনও নয় যে, আপনার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি।এই বয়স কিংবা পরিস্থিতিই আপনাকে অনুধাবন করায়, অতীতে ভুল ছিল আপনারও। আর সেই অনুযায়ী ক্ষমা করতে পারেন নিজেকেও। হয়তো আরেকটু চেষ্টা করলেই পরীক্ষায় এমন অকৃতকার্য হতে হতো না। একটু বুঝতে পারলেই হয়তো সম্পর্কটা এই পথে মোড় নিত না। তাই বলে সুযোগ এবং সময় কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। তিনি বলেন, ‘নিজের ভুল ছিল, এই উপলব্ধি অনেক বড়। তাই অতীতে আটকে না থেকে এই মুহূর্ত থেকেই শুরু করুন নতুন পরিকল্পনা। আর ক্ষমা করুন নিজেকে।’
সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি-
সময় ও সুযোগ কখনো শেষ হয়ে যায় না। চেষ্টা আর বিশ্বাসের মাধ্যমেই সুযোগকে নিয়ে আসতে হয়। পরীক্ষায় খারাপ করেছেন, তো কী হয়েছে? আপনার চলার পথ ওখানেই শেষ হয়ে যায়নি। সামনে আরও অনেক পরীক্ষা আছে। তাই প্রস্তুতি নিন সামনের জন্য।
একই ভুল বারবার নয়-
আপনি ভুল করেছেন। একবার, দুবার কিংবা সর্বোচ্চ তিনবার ? কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই এ রকম সব সময়ই করবেন না। এতে অন্যরা যেমন আপনাকে নেতিবাচকভাবে নেবে, তেমনি আপনি নিজেও নিজের কাছে দোষী থেকে যাবেন।
সুযোগ থাকলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া-
কলেজের সেই বন্ধুটির সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিলেন বলে এখনো অনুতাপ হচ্ছে? তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন। প্রযুক্তির যুগে এটা নানাভাবেই হতে পারে। দেখবেন, এতে আপনারই সবচেয়ে স্বস্তি লাগছে।
যদি এমন পরিস্থিতি না থাকে-
অনেক সময় দেখা যায়, সেই মানুষ বা পরিস্থিতি থাকে না। ক্ষতি হয়ে যায় বেশি। সে ক্ষেত্রে নিজেকেই বোঝাতে শিখুন। যুক্তি দিয়ে চিন্তা করুন, আপনি কেন অমন আচরণ করেছিলেন? আপনিও কি কোনো ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন? সময় কিংবা বয়স কোনোটা আপনার পক্ষে ছিল না? অন্য পক্ষেরও দোষ থাকতে পারে। সেই হিসেবেই সামনে এগিয়ে চলুন।
নিজ রীতিনীতি এবং মূল্যবোধ মেনে-
কিছু ক্ষেত্রে হয়তো আপনি নিজেও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বেন। প্রিয় মানুষটির কিছু আচরণ হয়তো আপনার জীবনের সঙ্গে মিলছে না। তখন আপনি কী করবেন? সঙ্গীটিকেও সময় দিন এবং অবশ্যই নিজের মূল্যবোধগুলো মেনে চলুন। এটা খুবই স্বাভাবিক, দুজন মানুষের মানসিকতা এক হয় না, যত কাছের মানুষই হোক না কেন। সে ক্ষেত্রে দুজন আলোচনা করতে পারেন। যদি আপনার নিজের বা পরিবারের খুব ক্ষতি না হয়, তবে সঙ্গীকেও কিছু দূরত্ব দিন।
সময় দিন নিজেকেও-
অন্যকে বোঝার আগে চেষ্টা করুন নিজেকে বুঝতে। নিজের প্রতিই সমানুভূতি আগে গড়ে তুলুন। নিজের প্রতি আস্থা না থাকলে মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকবে। হয়তো এ কারণেই আপনি সঙ্গীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসতে পারেন। এর জন্য কিন্তু দিন শেষে আবারও আপনি নিজেকেই দোষী বলবেন।
কিছু বিষয় যেতে দিন-
আমাদের চলার পথে অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে সব সময়ই ভালো হবে, এমন না। কেননা ভালো আর মন্দ দুটা মিলিয়েই আমাদের জীবন। তাই আপনি পারেননি বা সামনেও পারবেন না, এমন মনোভাব ঝেড়ে ফেলুন।
নেতিবাচক মানুষ এড়িয়ে-
একেকজনের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই বিচার করুন এবং বিশ্বাস রাখুন নিজের প্রতি। আপনি যদি মনে করেন, নিজেকে শুধরে নিয়ে কাজ করলে সফল হবেন, তাহলে চেষ্টা করতেই পারেন। কেননা আপনি যেভাবে চিন্তা করবেন, আপনার কাজেও ঠিক সে রকমই প্রভাব পড়বে।
 
তাই সবার আগে হাত বাড়িয়ে দিন নিজের প্রতি।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, নকশা
ছবিঃ সংগৃহীত
 
                                                                                             
                                                                                             
                                                                                             
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                        
                         
                        
                         
                        
                         
                        
                        