 
                                                                    
                            রোজার দিনে ত্বকের যত্ন
পবিত্র মাহে রমজান মাস এলেই বাড়ে ব্যস্ততা। তাই বলে ত্বকের পরিচর্যার কথা ভুললে তো চলবে না।
শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। যারা রোজা রাখেন তাদের জীবনযাপনে এ মাসে আসে পরিবর্তন। রমজান মাস এলে প্রতিদিনের বেড়ে যায় ব্যস্ততা। এতো কিছুর মধ্যেও ত্বকচর্যার কথা ভুললে তো চলবে না। রমজান মাসে দক্ষ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে প্রতিদিনের রূপ রুটিন জেনে নিন ও তদানুযায়ী ত্বকের পরিচর্যা করে ধরে রাখুন ত্বকের স্বাভাবিকতা।
ত্বকের সমস্যা এড়াতে-
রমজান মাসে দীর্ঘক্ষণ পানি পান থেকে বিরত থাকতে হয়। ফলে মানবদেহের ত্বকে ডিহাইড্রেশন (শুষ্ক), টান টান অনুভব এবং ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই এ মাসে ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রচুর পানি পান করা। কেননা, মানবদেহে প্রায় ৬০ শতাংশ পানি প্রয়োজন এবং প্রতিটি অঙ্গ পানির ওপর নির্ভরশীল। তাই রমজান মাসে নিত্যদিনের ব্যস্ততার মাঝেও ত্বকের সমস্যা এড়ানো ও স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে পানি অপরিহার্য। অর্থাৎ শুধুমাত্র নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য নয়, সুন্দর ত্বক পেতেও ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত অল্প অল্প (ঘণ্টায় এক গ্লাস) করে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
পানি শূন্যতারোধে করণীয়-
রমজান মাসে দীর্ঘক্ষণ পানি পান থেকে বিরত থাকার ফলে মানবদেহে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। তাই ইফতার থেকে সাহরির শেষ সময় পর্যন্ত যতটা সম্ভব পানি (ঘণ্টায় অন্তত এক গ্লাস), ফল, ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ, দুধ এবং দই ইত্যাদি খেতে পারেন। ইফতার এবং সাহরিতে শরবতের সঙ্গে সাগুদানা, ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেতে পারেন।
রমজান মাসের খাদ্যাভাস-
পবিত্র রমজান মাস এলেই বেড়ে যায় মসলাদার ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ সুন্দর ত্বক পেতে সংশ্লেষযুক্ত চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরনের খাবার থেকে এসিডিটি হতে পারে। আর এসিডিটি থেকে ত্বকে তৈলাক্ত ভাব এবং ব্রণ ইত্যাদি হতে পারে। যেহেতু প্রচন্ড গরম, তাই বেশি বেশি সবজি এবং ফলমূল খাওয়া উত্তম। এসব হালকা খাবার শরীরেরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে। সাদা চিনির পরিবর্তে স্টিভিয়া জাতীয় বিকল্প চিনি খেতে পারেন। এটি ত্বককে প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করবে। প্রতিদিনের ইফতারে খেজুর খান। সাহরি ও ইফতারে বাইরের ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে ঘরেই তৈরি করে নিতে পারেন স্বাস্থ্যকর খাবার।
কেমন হবে রূপ রুটিন-
অন্যান্য দিনের মতো রমজান মাসে ত্বকে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এবার পবিত্র রমজান মাস গরমের মধ্যে পড়েছে, তাই বাইরে বেরোনোর আগে ভালোমানের সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হবে। আর রোদ থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর এসপিএফ ৫০ যুক্ত সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া প্রতিদিনের গোসলে সাবানের পরিবর্তে মাইল্ড বিউটি সোপ ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে, সাহরির পর বা সকালে কাজে যাওয়ার আগে এবং দুপুরে ত্বকের ধরন বুঝে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীপ্তিময় এবং প্রাণবন্ত ত্বক পেতে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। ভিটামিন সি এবং আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ ত্বককে ফ্রেশ রাখতে সহায়তা করে। মুখ পরিষ্কার করার পর টোনার দিয়ে টোনিং করতে হবে ভালোমতো। টোনার লাগানোর পর সময় বুঝে ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। দিনের বেলায় ডে-ক্রিম ও এসপিএফ ৫০ যুক্ত সানব্লক ব্যবহার করুন। রাতে ফেস সেরাম বা নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি ওজু শেষে নামাজ পড়ার আগে অথবা পরে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজড লোশন ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি ঠোঁটকে সুরক্ষিত রাখতে ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ লিপ বাম ব্যবহার করুন। এটি ত্বকে সুরক্ষা স্তর তৈরি করে ত্বককে রাখে আর্দ্র। মনে রাখতে হবে ত্বক যেন সবসময় হাইড্রেট (অনার্দ্র) থাকে।
ত্বকে ব্রণের সমস্যা এড়াতে-
ত্বকে ব্রণের সমস্যা এড়াতে সবসময় মুখ ধোয়ার অভ্যেস করুন। ত্বকে দাগ বা ক্ষত তৈরি করে এমন স্ক্রাব ব্যবহার করবেন না। ত্বকে তৈলাক্ততা, ব্রণ নিরাময়ে ভিটামিস সি ও নিম সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী এড়িয়ে সব সময় প্রাকৃতিক গুণে ভরপুর প্রসাধন ব্যবহার করুন।
ঘরোয়া টোটকা-
প্রতিদিন ইফতারের আগে মুখ ধোয়ার সময় ৫ মিনিট আলাদা করে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে একটু ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিলে ত্বকের যতেœর অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। এ ছাড়া সপ্তাহে অন্তত একদিন দুধ ও চালের গুঁড়া দিয়ে মুখত্বক এবং হাত-পা ভালোভাবে স্ক্রাবিং করতে পারেন। এরপর গোলাপ জল বা নিমপাতা সেদ্ধ করা পানি ঠান্ডা করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন মধু। এ ছাড়া রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিমপাতা বাটা, কাঁচা হলুদ বাটা, চন্দন গুঁড়া, জাফরান এবং টকদই এক সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করাই ভালো। তবে প্যাকটি কোনো ত্বক বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায় থাকা অবস্থায় ব্যবহার করবেন না।
চুলেরও সঠিক যত্ন নিন-
রমজান মাসে শুধুমাত্র মুখ-ত্বকই নয়, চুলের সঠিক যত্ন নিতে হবে। এ সময় কোনোভাবেই চুল ময়লা রাখা যাবে না। প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে চুলে ময়লা জমতে পারবে না। ফলে চুল নিয়ে বেশির ভাগ সমস্যাই কমে যাবে।
খেয়াল রাখুন-
প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বাসায় বা অফিসে থাকার চেষ্টা করুন। কারণ এ সময়টাতে তাপমাত্রা সব থেকে বেশি থাকে। প্রয়োজনে বাইরে বেরোলে মাথায় হিজাব বা ওড়না ব্যবহার করুন। সঙ্গে সানগ্লাস, ছাতা রাখুন।
সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন
ছবিঃ সংগৃহীত
 
                                                                                             
                                                                                             
                                                                                             
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                                                                                         
                            
                     
                        
                         
                        
                         
                        
                         
                        
                        