নতুনত্ব এসেছে জিন্স প্যান্টের ফ্যাশনে
ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে জিন্সপ্যান্ট অনেকটা বন্ধুর মতোই। বন্ধুত্বের মতো জিন্সপ্যান্ট যত পুরনো হয়, এর প্রতি টান ততই গাঢ় হতে থাকে। সঙ্গে শুধু বেছে নেওয়া একটা টপ। অন্যান্য পোশাকের মতো নতুনত্ব এসেছে জিন্সপ্যান্ট আর টপসেও।
ফ্যাশনে জিন্সের আবেদন সব সময় একইরকম। অনেককে দেখা যায় ১০-১৫ বছরের পুরনো জিন্সও আগলে ধরে রাখেন। এর একটি অন্যতম কারণ হলো জিন্সের যে কোনো নকশা সব সময়ই স্টাইলিশ, আর জিন্স যত পুরনো হয় ততই আরামদায়ক হয়। ফ্যাশনে তাই এখন জিন্স প্যান্ট আর স্টাইলিশ টপস এবং আরামদায়ক ক্যাজুয়াল পোশাক।
একটা সময় জিন্স মানেই ছিল অনেক মোটা কাপড় আর শীতের সময়ে আরামদায়ক এমন পোশাক। কিন্তু এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে জিন্স। যেহেতু তরুণ-তরুণীরা দিনের অনেকটা সময় বাইরে থাকে, তাই তাদের আরামের কথা ভেবেই বর্তমানে জিন্সের প্যান্ট তৈরি করা হয়। রঙ ও সুতার ব্যবহারে এখন মাথায় রাখা হয় ঋতু। তাই শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই জিন্স প্যান্ট এখন আরামদায়ক। ফলে জিন্স এখন অনেক বেশি জনপ্রিয়।
জিন্স প্যান্টের মধ্যে দুই ধরনের জিন্স পাওয়া যায়। একটি সাধারণ জিন্স প্যান্ট এবং অপরটি স্কিনি জিন্স প্যান্ট। সাধারণ জিন্সের চেয়ে বর্তমানে স্কিনি জিন্স প্যান্টই বেশি জনপ্রিয়। স্কিনি জিন্স দুই ধরনের ছাঁটে তৈরি হচ্ছে। একটি নিচের দিকে বেলবটমের মতো ছাঁট, যা হাঁটুর ওপরের অংশ একদম আঁটসাঁট। একে ‘স্কিনি ফিট বেলবটম’ বলা হয়। অন্যটির পায়ের নিচের দিকটি চুড়িদার সালোয়ারের মতো চাপা। একে ‘ন্যারো’ শেপ বলা হয়। ফ্যাশনে তরুণ-তরুণীদের কাছে ন্যারো শেপ জিন্স বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একটু মাঝবয়সীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে স্লিম ফিট জিন্স।
ন্যারো জিন্স প্যান্ট ছাড়াও তরুণীদের জন্য রয়েছে সেমিন্যারো, বুটকাট, স্ট্রেটকাট, ক্রেপ, বেগি নানা ধরনের জিন্স। বর্তমানে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘সুপার স্কিনি জিন্স’। সুপার স্কিনি জিন্সে দোমড়ানো-মোচড়ানো জিন্সের কাপড়টা স্ট্রেচ করা থাকে বলে জানালেন কান্ট্রিবয়ের কর্ণধার ও ডিজাইনার বিটু খান। বিটু খান আরও বলেন, ‘সুপার স্কিনি জিন্সে কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পা দুটিকে যেন মুড়ে রাখে শক্ত করে। দেখলে মনে হয়, জিন্সের কাপড়টি পায়ের সঙ্গে লেগে আছে। গোড়ালির কাছে ভাঁজগুলো যেন চুড়িদার সালোয়ারের মতো। একে ‘লো-ওয়েস্ট সিনক প্যাটার্ন’ও বলা হয়। কিছু জিন্সের ফেব্রিক ভাঁজ ভাঁজ করা থাকে, একে বলা হয় ক্রেপ জিন্স। আবার কিছু থাকছে মসৃণ। তরুণীদের জিন্স প্যান্টে বৈচিত্র্য আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে এমব্রয়ডারি, চুমকি, বোতামসহ বিভিন্ন ধাতব অলঙ্করণ।
জিন্স প্যান্টে ছেঁড়া নকশা আগে দেখা গেলেও এখন ছেঁড়া নকশায় এসেছে নতুনত্ব। এখন ছেঁড়া নকশার জিন্স প্যান্টে হাঁটুর ওপর বেশ কিছুটা অংশ কাটা রাখা হচ্ছে। কখনো শুধু ছেঁড়া রেখে দেওয়া হচ্ছে, কখনো অন্য রঙের কাপড় লাগিয়ে করা হচ্ছে বিশেষ নকশা। মেয়েদের জিন্সে ছেঁড়াফাটার সঙ্গে ব্যবহার হচ্ছে ফুল-পাতা, সিকোয়েন্স, এমব্রয়ডারি, চুমকি, বোতাম, বিডস প্রভৃতি। নীল ছাড়াও কালো, খাকি, ধূসর নানারঙে মিলবে ডেনিমের জিন্স প্যান্ট।
প্লাস পয়েন্টের কর্ণধার বিপুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ জিন্স প্যান্টের পাশাপাশি ছেঁড়া জিন্স এখন তরুণ-তরুণীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এ ধরনের জিন্সের বিভিন্ন স্থানে ছোট থেকে বড় আকারের ছেঁড়া তৈরি করে ডিস্ট্রেসড লুক দেওয়া হয়। তরুণীদের ছেঁড়া জিন্সে শর্ট জিপারের লো রাইজ, সুপার লো রাইজ, রেগুলার রাইজ, হাইওয়েস্ট প্যান্ট ইত্যাদি চলছে। ছেলেদের স্কিনি জিন্স প্যান্ট পছন্দ। পাশাপাশি ন্যারো শেপের ছেঁড়া নকশার জিন্স প্যান্টের প্রতিও আগ্রহ রয়েছে।’
ফ্যাশনে কোমরে কুঁচি, লেয়ার, ইলাস্টিক অথবা বেল্ট দিয়ে নিচের দিকে ঘের দেওয়া, কোমর থেকে আলাদা রঙের কাপড়, লোহাইট কাট, অসমান কাট প্রভৃতি প্যাটার্নের টিউনিক, টপ স্টাইল ও আরামে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। টপস ও কুর্তিতে গর্জিয়াস লুক আনতে লেয়ারের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন ব্লক, লেইস ও পাথর প্রভৃতি। খুব বেশি লম্বা টপের সঙ্গে জিন্স না পরাই ভালো। এতে করে জিন্সের আসল সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যাবে। বরং ছোট টপ, ক্রপ টপ, ছোট কাটের ফ্লোয়ি টপ বেশ মানাবে।
জিন্সের মূল কথাই হলো, রাফ অ্যান্ড টাফ। তাই জিন্সের খুব বেশি যতেœর প্রয়োজন হয় না। তবে ধোয়ার সময় ঠা-া পানিতে ধোয়া উচিত। রোদে শুকানোর সময় উল্টো করে শুকাতে দিন। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফ্রিল্যান্ডের ডেনিমের জিন্সের দাম পড়বে ১৮০০-৩৫০০ টাকা। আরমানি, ডেভিসন, এডুইন, হোপম্যান, ইনফিনিটিতে নকশাদার ন্যারো ডেনম জিন্স প্যান্ট ৩০০০-৬০০০ টাকা, নন-ব্র্যান্ড ৭০০-২০০০ টাকা। ক্রপ টপ ১২০০-৩০০০ টাকা, টিউনিক ১০০০-২৫০০ টাকা। বাজারে দেশি এবং বিদেশি দুই ধরনের জিন্স প্যান্ট ও টপস পাওয়া যাবে। দেশি ব্র্যান্ডের জিন্স ও টপস কিনতে যেতে পারেন ইয়োলো, ওয়েসটেক্স, ওটু, ফ্রিল্যান্ড, ক্যাটস আইসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমে। বিদেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে জনপ্রিয় লেভিস, আরমানি, ডিজেল ও ডিঅ্যান্ডজি। এসব ব্র্যান্ডের জিন্স চীন ও থাইল্যান্ড থেকেই বেশি আমদানি হয়। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের জিন্স বেশ উন্নতমানের। এ ছাড়া একটু কম দামে নন-ব্র্যান্ডের জিন্স ও টপস পাওয়া যাবে বঙ্গবাজার, ধানম-ি হকার্সসহ বিভিন্ন মার্কেটে।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়