উজ্জ্বল বসনে বসন্ত দিন

উজ্জ্বল বসনে বসন্ত দিন

মসলিনে গামছার নকশা, ক্রুশের আঁচলে ভিন্নতা এলেও হলদে রং ছড়িয়ে দিচ্ছে বসন্তের বার্তা

শহরে কি বসন্ত বাতাস বয়? ফুলে ফুলে প্রজাপতির ওড়াউড়ি কি চোখে পড়ে? শহুরে প্রকৃতির বেলায় হয়তো না তবে নাগরিক বসনে ঠিকই টের পাবেন, দুয়ারে বসন্ত

হলুদ আর কমলায় মাখামাখি হয়ে বসন্তের একটা আলাদা রং দাঁড়িয়ে গেছে। পয়লা ফাল্গুনের ভোরে চারুকলার বকুলতলা থেকে ভেসে আসবেআহা আজি বসন্তে, কত ফুল ফোটে...’ বাসন্তী রঙা পোশাক পরে তরুণ-তরুণীরা ভিড় করবেন সেখানে। সারা দিন ঘোরাঘুরি, বইমেলা, রেস্তোরাঁয় খাওয়া, বন্ধু, আড্ডার মধ্য দিয়েই বরণ হবে ফাল্গুনের প্রথম দিন। তরুণেরাও এদিন পরবেন উজ্জ্বল রঙের কোনো পাঞ্জাবি, শার্ট বা টি-শার্ট

পয়লা ফাল্গুন মানেই যেন বাসন্তী রঙের মেলা। কিন্তু হলুদ আর বাসন্তীর ভিড়ে হারিয়ে যেতে না চাইলে এবার বসন্তে পরার জন্য বেছে নিতে পারেন সবুজ, কমলা, গোলাপি বা পেস্তা রঙের পোশাক। এমনকি সাদা বা চাপা সাদার মাঝে এই রংগুলোও দেখাবে দারুণ উজ্জ্বল

আমাদের দেশে উৎসবের পোশাক মানে শাড়ি আর পাঞ্জাবি। এবার পয়লা ফাল্গুনেও কী তাই চলবে ? নাকি শাড়ি, পাঞ্জাবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলবে কুর্তা আর টি-শার্টও ? আড়ংয়ের হেড অব ডিজাইন রাজেশ খাজুরিয়ার মতে, ‘আধুনিক পোশাক মানেই পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক নয়। ঐতিহ্যবাহী পোশাককে নতুন করে উপস্থাপন করাই হলো আধুনিকতা।ফ্যাশন-প্রেমীরা চান ভিড় থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে। তাঁরা চিরাচরিত তাঁত আর সুতি পোশাক পরেই ফ্যাশনে ভিন্নতা আনতে পারেন

কোরাল ক্লজেটের ডিজাইনার রুপো শামস বললেন, আঁচলে ফ্রিল দেওয়া শাড়ির এখন খুব চল। বাটিক টাইডাইও পুরোনো হয়ে যায়নি। তবে পুরো পোশাকে বাটিকের কাজ না করলেই চলে। শাড়ির বেলায় শুধু পাড় বা কুঁচির জায়গায় বাটিক থাকতে পারে। কামিজে বাটিক না করতে চাইলে বাটিকের কাজ করা ওড়না বা পায়জামা বেছে নিতে পারেন। এখন এমব্রয়ডারিও খুব জনপ্রিয় বলে জানালেন এই ডিজাইনার। সালোয়ার-কামিজ ব্লাউজে তাই পুরো এমব্রয়ডারির কাজ থাকতে পারে

ছাড়া শাড়ির ওপর কেপ, কোট বা হাতা কাটা কটি পরেও স্টাইলে ভিন্নতা আনা যায়। বিবিয়ানার ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার মনে করেন, কামিজের কাটছাঁট আর ব্লাউজের বৈচিত্র্যই পোশাকে এনে দিতে পারে আলাদা বৈশিষ্ট্য। এক রঙের সুতি শাড়ির সঙ্গে ফুলেল ছাপা, রিকশা পেইন্ট বা গামছা প্রিন্টের ব্লাউজ পরতে পারেন

আবার লা রিভের ডিজাইন ক্রিয়েটিভ পরিচালক মন্নুজান নার্গিস পরামর্শ দিলেন, এখন বেল স্লিভ, পাফ ট্রামপেট হাতার চল। কামিজ ফতুয়ার পাশাপাশি ব্লাউজেও এই কাটছাঁট চলতে পারে। স্ক্রুজ কাটের ব্লাউজ বা আঁচলে এই কাজও ভালো দেখাবে। আজকাল দুই ধরনের কাপড় দিয়েও পোশাকে নকশার চল এসেছে

তাঁতের লম্বা অথবা সেমি লম্বা ফ্রক ছাঁটের কামিজ কিশোরী তরুণী সবাইকেই ভালো দেখাবে। মেয়েদের কামিজ আর ছেলেদের পাঞ্জাবিতে থাকতে পারে জামদানির মোটিফ। এখন ছেলেদের পাঞ্জাবিতে মোটা লম্বা স্টাইপের রাজত্ব চলছে। এর পাশাপাশি ফুলেল নকশার পাঞ্জাবিও ফাল্গুনে মানিয়ে যাবে। ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফটের প্রধান নির্বাহী খালিদ মাহমুদ খান বলেন, ছিমছাম আরামদায়ক কাটছাঁটে ছেলেদের জন্য এবার বসন্তের পোশাক নকশা করা হয়েছে। ছেলেদের উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবি ব্যান্ড কলার ফতুয়ার গলা এবং বুকের কাছে থাকতে পারে সুতার কাজ। টি-শার্ট পরতে যাঁরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাঁদের জন্যও ফ্যাশন হাউসগুলো এনেছে বসন্তের টি-শার্ট। নিচের দিকে এক কোনায়, নয়তো শুধু বুকের কাছে স্ক্রিন প্রিন্ট অ্যাম্বুসের নকশা এনেছে নতুনত্ব। আবার ডিজিটাল প্রিন্টের পাঞ্জাবিও চোখে পড়ছে এখন

ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেল এবার বসন্তের পোশাক সংগ্রহে প্রাকৃতিক উপাদানগুলো উঠে এসেছে। পোশাকে প্রাকৃতিক রঙেরও এখন অনেক কদর। আর শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ পাঞ্জাবিতে হাতের কাজ চোখে পড়ার মতো। তবে পেটানো কাজ নয়। নকশাকে ফুটিয়ে তুলতে ছোট ছোট মোটিভে তোলা হচ্ছে নকশিকাঁথার ফোড়। কয়েক বছর ধরেই গামছা শাড়ি চলতি ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে। এবার এই ধরনের শাড়িতে অ্যাপ্লিক আঁচলে ঝুল দিয়ে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্লক স্ক্রিন প্রিন্টের পোশাকে আফসান হালকা কারচুপি করে আনা হয়েছে উৎসবের আমেজ

হাফ সিল্ক, সিল্ক, তাঁত, সুতি আর খাদির সঙ্গে ক্রেপ জর্জেটের পোশাক এই মৌসুমের জন্য বেশ আরামদায়ক হবে। পোশাক যেটিই পরুন, তার সঙ্গে মিলিয়ে শীতের কাপর নিতে ভুলবেন না যেন। বিকেলের দিকে হালকা ঠান্ডা অনুভূত হলে গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন পোশাকের সঙ্গে মানানসই কোনো পাতলা শাল। আর ছেলেদের জন্য আছে প্রিন্স কোট

 

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, নকশা

ছবিঃ সংগৃহীত