ত্বকের যত্নে নিশ্বাস
একজন মানুষের বয়স, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বোঝা যায় তার মুখের দিকে তাকিয়ে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং বয়সের ভারে মানুষের মুখে ক্লান্তি ও বয়সের ছাপ পড়ে। বয়সের জন্য ত্বক কুঁচকে যায় এবং মুখে বলিরেখা পড়ে। ব্রণের সমস্যা তো রয়েছেই। ত্বকে তারুণ্যের উজ্জ্বলতা চাইলে শুধু ফেসিয়ালই যথেষ্ট নয়। ত্বকের অন্যান্য যত্নের সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম নিয়মিত করলে উপকার হয়। কারণ, এটি দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দিয়ে ত্বকে অক্সিজেনপ্রবাহ বাড়ায়।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
নিশ্বাসের ব্যায়াম—সে আবার কী জিনিস? ভাবতে পারেন অনেকেই। পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ফারজানা খানম বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন। বললেন, ‘শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ত্বকের নিচের পেশিগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করে, ফলে চামড়া কুঁচকে যায় না বা ঝুলে পড়ে না। চেহারায় বয়স্ক ভাব কমাতে সাহায্য করে।’
এর বাইরেও মুখের ব্রণ, কালো দাগ, বলিরেখা চলে যায় এই ব্যায়ামে। প্রতিদিন সকালে একবার হলেও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারলে ভালো। সঠিকভাবে নিশ্বাস না নেওয়ার কারণে ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়। যোগব্যায়াম প্রশিক্ষকদের মতে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে চার ধরনের ব্যায়াম করে ত্বকের নানা রকম সমস্যা দূর করা যায়।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম যেভাবে-
নিচে ব্যায়াম করার চারটি পদ্ধতি এবং সেগুলোর উপকারিতা তুলে ধরা হলো।
নাড়ি শোধন প্রাণায়াম-
পদ্ধতি: সহজ প্রাণায়ামের মতো করে বসে বাম হাঁটুর ওপর জ্ঞান মুদ্রায় হাত রাখতে হবে। হাতের তালু ওপরের দিকে থাকবে। হাত একদম টানটান রাখতে হবে। ডান হাতের বুড়ো আঙুল থাকবে নাকের ডান দিকের শ্বাস নেওয়ার জায়গায়। অনামিকা আর কনিষ্ঠা থাকবে বাম দিকের নাকের মাথায়।তারপর ডান পাশ দিয়ে নিশ্বাস নিয়ে তর্জনী দিয়ে চেপে ধরে বাম পাশ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়তে হবে।একইভাবে বাম পাশ চেপে ডান পাশ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়তে হবে। এভাবে ছয় থেকে আটবার করতে হবে।
উপকার: রক্ত সঞ্চালনে ত্বকে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ে বলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
সহজ প্রাণায়াম-
পদ্ধতি: প্রথমে পদ্মাসন ভঙ্গিতে বসে নিন। মেরুদণ্ড সোজা, আলতো করে চোখ বন্ধ এবং হাত থাকবে জ্ঞান মুদ্রায়। নাক দিয়ে লম্বা নিশ্বাস নিতে হবে এবং মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। নেওয়ার তুলনায় দ্বিগুণ শ্বাস ছাড়তে হবে। এভাবে ছয়বার করতে হবে।
উপকার: এই প্রাণায়ামের ফলে ঘুম ভালো হয় বলে মুখের ব্রণ দূর হয়। চোখের নিচে কালো দাগ দূর হয়। মুখে কালো ছোপ পড়ার সমস্যা দূর হয়।
শীতলী প্রাণায়াম-
পদ্ধতি: সোজা হয়ে বসতে হবে। এমনকি চেয়ারেও বসা যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে মেরুদণ্ড সোজা থাকে। এই প্রাণায়ামে গলা দিয়ে নিশ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। মুখ সামান্য ফাঁকা থাকবে। আস্তে আস্তে নিশ্বাস নিতে এবং ছাড়তে হবে, যাতে একটা শাঁ করে শব্দ হয়, যা শুধু ধ্যানকারী শুনতে পাবে। খুব মনোযোগ দিয়ে আট থেকে দশবার এটা করতে হবে। তবে যাঁদের হার্টে ব্লক বা রিং পরানো আছে, তাঁদের এই আসন না করাই ভালো।
উপকার: চেহারা থেকে ক্লান্তি, বয়স্কভাব কেটে যায়।ত্বক পরিষ্কার ও টানটান হয়।
সূর্যভেদ প্রাণায়াম-
পদ্ধতি: আসনে বসে ডান হাতের বুড়ো আঙুল থাকবে নাকের ডান দিকের শ্বাস নেওয়ার জায়গায়। অনামিকা আর কনিষ্ঠা দুটি থাকবে নাকের বাম পাশের মাথায়। ডান পাশ দিয়ে নিশ্বাস নিয়ে তর্জনী দিয়ে চেপে ধরে বাম দিক দিয়ে নিশ্বাস ছাড়তে হবে। নাক পুরো চেপে না ধরে সামান্য চাপ দিতে হবে, যাতে একটু খোলা থাকে। তারপর পাঁচ সেকেন্ড নাকের দুই পাশেরই নিশ্বাস বন্ধ রাখতে হবে। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাঁরা নিশ্বাস বন্ধ করার প্রক্রিয়ায় যাবেন না। এভাবে নিশ্বাস নিলাম, ধরে রাখলাম, ছেড়ে দিলাম করে ১৫ বার পর্যন্ত করা যাবে।
উপকার: এই প্রাণায়ামের ফলে অক্সিজেন ত্বকের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে যায় বলে বলিরেখা, ত্বক ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যার সমাধান হয়।
প্রাণায়ামগুলো শেষ করে বিশ্রাম নিতে হবে। প্রতিবার প্রাণায়ামের পর আসনেই শুয়ে পড়া যায় এক মিনিটের জন্য। তাহলে সহজভাবে চারটি প্রাণায়াম শেষ করা যায়। নিয়মিত করার ফলে ত্বক থাকবে সুস্থ ও সুন্দর। তবে মনে রাখতে হবে, এগুলো এক দিনেই কোনো পরিবর্তন এনে দেয় না। দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া বলে মনঃসংযোগ থাকতে হবে।
Source: The Daily Prothom Alo
Image: Collected