শীত শেষে হেয়ার স্পা
সুস্থ ও সুন্দর চুল মানে বাড়তি সৌন্দর্য। বর্তমানে চুল পরিচর্যার এক জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে হেয়ার স্পা। শীতে চুল রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। রুক্ষ, নিষ্প্রাণ ও নিস্তেজ চুলকে প্রাণোচ্ছল করতে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে হেয়ার স্পা। চাইলে ঘরে বসেই হেয়ার স্পা করতে পারেন। ঘরে বসে কীভাবে হেয়ার স্পা করবেন পরামর্শ দিয়েছেন রেড বিউটি স্যালনের সিইও, রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন।
হেয়ার স্পার উপকারিতা-
আমাদের শরীরের যেমন প্রোটিন দরকার, তেমনই চুলেরও প্রোটিন দরকার। এর অভাবেই চুল পড়া শুরু হয়। আর এই চুল পড়া রোধে হেয়ার স্পা খুবই কার্যকরী। শীতে প্রকৃতির শুষ্কতার কারণে বাইরে ধুলাময়লার পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে শীতকালে চুল অনেক বেশি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। শীত শেষে হেয়ার স্পা করে নিলে চুল আবার আগের মতো প্রাণবন্ত, চকচকে আর ঝলমলে হয়ে উঠবে। চুলকে বাউন্সি আর সিল্কি করতেও হেয়ার স্পার জুড়ি নেই। হেয়ার স্পা চুলের ভলিউম বাড়াতে এবং চুলকে সোজা রাখতেও সাহায্য করে। আমরা চুলকে বিভিন্নভাবে সাজাই, কখনো কার্ল, কখনো সোজা, কখনো বা কালার করি। এসব হেয়ার স্টাইল করতে চুলে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করা হয় এবং তাপ দেওয়া হয়। এতে চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। চুলের আগা ফেটে যায়। কিন্তু আমরা যদি হেয়ার স্পা করি, তাহলে চুল ফেটে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ হবে। কারণ হেয়ার স্পা চুলে পুষ্টি জোগায়, যা চুলের আগা ফাটা নিয়ন্ত্রণ করে। চুল পড়া কমায়। এ ছাড়া খুশকির সমস্যা থেকেও মুক্তি মিলবে হেয়ার স্পার মাধ্যমে।
হেয়ার স্পার ধাপগুলো-
- অয়েল ম্যাসাজ
- স্টিমিং
- কিঞ্জিং
- হেয়ার প্যাক এবং
- কন্ডিশনিং
যা যা প্রয়োজন-
- নারকেল তেল
- কুসুম গরম পানি
- তোয়ালে
- বড় দাঁতের চিরুনি
- হারবাল শ্যাম্পু
- হেয়ার প্যাক (হেয়ার প্যাক তৈরি করতে লাগবেÑ ডিম, লেবুর রস, ক্যাস্টার অয়েল, গ্লিসারিন ও মধু)
- প্লাস্টিক শাওয়ার ক্যাপ
- কন্ডিশনার (ঘরোয়া কন্ডিশনার তৈরি করতে লাগবেÑ চায়ের লিকার ও লেবুর রস)
কীভাবে করবেন-
- প্রথমে স্ক্যাল্পে নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন। তেল ম্যাসাজের পর কুসুম গরম পানিতে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে চুলে পেঁচিয়ে রাখুন। এতে গরম পানির ভাপে মাথার ত্বকের লোমকূপের মুখ খুলে যায়; যা ত্বকের গভীরে তেল পৌঁছাতে এবং মাথার ত্বকে সৃষ্টি হওয়া দূষিত পদার্থ বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। ২০ মিনিট পর তোয়ালে খুলে নিন।
- এবার শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার করুন। এই ধাপে শুধু একবার শ্যাম্পু করুন। ভাপ দেওয়ার কারণে মাথার ত্বকে জমে থাকা ময়লা অনেকটা আলগা হয়ে আসবে। শ্যাম্পু করার মাধ্যমে তা সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
- শ্যাম্পু করার পর মাথায় তোয়ালে জড়িয়ে রাখুন। চুল ভিজে ভাব কমে এলে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান। প্রথমেই গোড়া থেকে জট ছাড়াতে যাবেন না। চুলের আগা থেকে জট ছাড়ানো শুরু করুন।
- এই ধাপে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। ১টি ডিম, ১টি লেবুর রস, ১ চা-চামচ ক্যাস্টার অয়েল, ১ চা-চামচ গ্লিসারিন ও ১ চা-চামচ মধু খুব ভালো করে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে নিন। এরপর ওই প্যাকটি চুলের গোড়ায় ও পুরো চুলে ভালো করে লাগিয়ে প্লাস্টিক ক্যাপ দিয়ে চুল আটকে রাখুন ১ ঘণ্টা। এবার চুল খুলে আরও একবার শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নিন।
- এবার চুল কন্ডিশনিং করুন। কন্ডিশনার তৈরি করতে ৩ টেবিল চামচ চা পাতা এক মগ পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এবার ওই পানির সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। এরপর এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
হেয়ার স্পা করার পর-
- সপ্তাহে অন্তত দুদিন চুলে অয়েল ম্যাসাজ করুন।
- প্রতিবার অয়েল ম্যাসাজের পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নেবেন।
- শ্যাম্পুর পর নারিশিং ময়েশ্চারাইজিং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। মাসে একবার ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
- তৈলাক্ত চুলে ঘন কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন না। এ ক্ষেত্রে চা পাতার লিকার ছেঁকে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়
ছবিঃ সংগৃহীত