পছন্দের রঙে চুল
নিজেকে নতুনভাবে সাজাতেই হোক কিংবা স্টাইলে ভিন্নতা আনতেই হোক, পছন্দের রঙে চুল রাঙিয়ে নেওয়ার স্টাইল এখন রীতিমতো ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। ছোট, বড়, স্ট্রেট কিংবা কার্লি সব ধরনের চুলই চাইলে রাঙিয়ে নিতে পারেন বর্ণিল রঙে। পরামর্শ দিয়েছেন জারা’স বিউটি লাউঞ্জের কর্ণধার ও রূপ বিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি। লিখেছেন কেয়া আমান।
একটা সময় ছিল, যখন চুল রঙ করার কথা মেয়েরা ভাবতেন চুলে পাক ধরতে শুরু করলে। সময় বদলেছে। চুলের রঙ এখন আর নেহাতই প্রয়োজনে নয়, বরং শখে এবং সৌন্দর্য বাড়াতে এখন বর্ণিল রঙে চুল রাঙাতে পছন্দ করেন অনেকে। তবে চুলে রঙ করার আগে কী রঙ মানাবে, কীভাবে যত্ন নিতে হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। নয়তো চুল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
নানা রকম হেয়ার কালারঃ
হেয়ার হাইলাইট-
চুলে খুব নাটকীয় কিছু বদল না এনেও চেহারা এবং চুলে নতুনত্ব আনতে চাইলে রেড, পার্পল, ডিপ পিংক থেকে শুরু করে ইচ্ছামতো রঙে চুলে হাইলাইট করতে পারেন। ট্রেন্ডি আর স্টাইলিশ দেখাবে। হাইলাইট করার পর যদি মনে হয় মানাচ্ছে না, তবে চট করে চুলটা আবার রঙ করে নিলেই হলো!
পার্মানেন্ট হেয়ার কালার-
এর অন্য নাম হেয়ার ডাই। দীর্ঘ সময় ধরে চুলের রঙ ধরে রাখতে পার্মামেন্ট হেয়ার কালার লাগানো হয়। পাকা চুল ঢাকতেও পার্মানেন্ট হেয়ার কালার দারুণ উপযোগী। পার্মানেন্ট হেয়ার ডাই যেহেতু কিউটিকল ভেদ করে চুলের ভেতর পৌঁছায়, তাই এটি ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত।
টেম্পোরারি হেয়ার কালার-
যারা চুলের রঙ নিয়ে নিরীক্ষা করতে চান, তাদের জন্য সবচেয়ে সহজপথ টেম্পোরারি হেয়ার কালার। এতে শুধু চুলের বাইরেটাই রঙ হয়, চুলের করটেক্সে কোনো রঙ প্রবেশ করে না। শ্যাম্পু করে ফেললেই কালার উঠে গিয়ে চুলের আসল রঙ ফিরে আসে।
অর্গানিক হেয়ার কালার-
রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে চুলে রঙ করতে চাইলে অর্গানিক কালার সবচেয়ে ভালা। হেনা, কফি বা চায়ের মতো প্রাকৃতিক উপাদানের নির্যাস থেকে তৈরি হয় এ রঙ।
হেয়ার কালার করার আগের টিপস-
- চুল কালার করার কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে থেকে চুলে কোনো কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা যাবে না।
- চুল রঙ করার একদিন আগে চুল ভালো করে অয়েল ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু করে নিন।
- চুল রঙ করার তিন-চার সপ্তাহ আগে থেকেই চুল ময়েশ্চারাইজড করার চেষ্টা করুন।
কার চুলে কেমন রঙ-
- চুলের জন্য এমন কালার বেছে নিন, যা ত্বকের রঙের সঙ্গে মানানসই হয়। নয়তো দৃষ্টিকটু লাগবে।
- শ্যাম বর্ণের ত্বকের অধিকারীদের চুলে ব্রাউন, চকোলেট ব্রাউন, মেহগনি বা চেস্টনাট, কপার, জিঞ্জার, অ্যাশ, নীলচে লাল, বারগেন্ডি কালার ভালো লাগবে।
- উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারীদের ভালো লাগবে গোল্ডেন কপার, হালকা লাল, তামাটে লাল, বারগেন্ডি প্রভৃতি।যাদের ত্বক হলুদাভ উজ্জ্বল তারা হলুদ, কমলা হাইলাইটস এড়িয়ে অ্যাশ, গ্রে ব্যবহার করুন।
- গোলাপি বর্ণের অধিকারীরা পিংক, মেজেন্টা হাইলাইটস এড়িয়ে বারগোন্ডি, ডার্ক ব্রাউন বেছে নিন।
- চুলের স্বাভাবিক রঙের থেকে এক বা দুই শেড হালকা অথবা গাঢ় হেয়ার কালার নির্বাচন করুন।
যত্ন-
- রঙ করার পর চুলের যত্ন না নিলে চুল রুক্ষ ও ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চুল রঙ করার পর নিয়মিত যত্ন নিন।
- রঙ করা চুলের জন্য বাজারে বিশেষ ধরনের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার পাওয়া যায়। এ ধরনের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে চুলের রঙ অনেক দিন স্থায়ী হবে।
- কালার করা চুলে সপ্তাহে দুদিন হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করতে হবে। এক চা-চামচ অলিভ অয়েল, এক চা-চামচ ক্যাস্টার অয়েল, এক চা চামচ কোকোনাট অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম করে এর সঙ্গে একটি ভিটামিন ই ক্যাপ মিশিয়ে চুলের স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন এবং পুরো চুলেও লাগিয়ে নিন। ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
- চুলে হেয়ার ড্রায়ার, হেয়ার আয়রন, কার্ল মেশিন যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন। কারণ এগুলো চুল রুক্ষ করে তোলে।
- হেয়ার কালারের পর সপ্তাহে দুদিন প্রোটিন প্যাক এবং মাসে একবার হেয়ার স্পা, ডিপ কন্ডিশনিং করুন।
হেয়ার মাস্ক-
কালার করা চুলে সপ্তাহে অন্তত এক-দুদিন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। এ জন্য আধা কাপ টকদই, আধা কাপ মধু ও একটি ডিম ব্লেন্ড করে নিন। এবার প্যাকটি চুলে লাগিয়ে রেখে ২০ মিনিট পর শ্যম্পু করে ফেলুন। এরপর ডিপ কন্ডিশনিং করুন। অবশ্যই ডিপ কন্ডিশনিং করতে হবে। কারণ কালার চুলে নরমাল কন্ডিশনার তেমন কাজ করে না।
সতর্কতা-
শিশুদের চুলে হেয়ার কালার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
ঘরে বসে চুল রঙ করতে চাইলে রঙটা ভালো ব্র্যান্ডের কিনা এবং রঙের মেয়াদ আছে কিনা দেখে কিনুন।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়
ছবিঃ সংগৃহীত