নতুন চাকরি, কি কি মনে রাখবেন
অনেক অভিজ্ঞ চাকরিজীবীকে বলতে শোনা যায়—‘ঠেকে শিখেছি, ঠকে শিখেছি, কেউ শিখিয়ে দেয়নি।’ আসলে ভুলগুলো যদি কেউ ধরিয়ে দিত সেদিন! কেউ যদি বলে দিত—কোন পথে বিপদ ঘাপটি মেরে আছে, কোন কোন পথে কাঁটা বিছানো আছে! তাহলে কর্মজীবন আরো সফল হতে পারত। তাই আজকের নতুন কর্মজীবীদের জন্য এখানে রইল ১০ পরামর্শ।
১. ১০ বছর পরে আমি কী হতে চাই—তা আজকেই ঠিক করতে হবে। ঠিক করতেই হবে। স্রোতে ভাসমান কচুরিপানার মতো ভেসে চলা যাবে না। নিজের ভবিষ্যৎ ঠিকানা বসের হাতে সঁপে দেওয়া যাবে না। নিজের যোগ্যতা, ভালো লাগা, আগ্রহের জায়গাটা নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। আলোচনা করুন, পরামর্শ নিন, ভাবুন, যোগ-বিয়োগ করুন, যা ভালো মনে হয় সবটা করুন; কিন্তু নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিন। আপনার লক্ষ্য স্থির করুন—কী হতে চান জীবনে।
২. আপনার লক্ষ্য অর্জনে দুজন মানুষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে—একজন আদর্শ গুরু বা নেতা ও একজন আসল বন্ধু, যে বিপদে আপনার পাশে থাকবে। যত দিন বেঁচে থাকবেন, ওই দুজন মানুষের সন্ধান করতেই থাকবেন। দেখবেন আদর্শ গুরু অনেককেই প্রাথমিকভাবে মনে হবে; কিন্তু পরে দেখবেন সে আপনার আদর্শ গুরু নয়। যাকে খুব কাছের বন্ধু বলে মনে করেছিলেন, তাকে সুযোগসন্ধানী বলে আবিষ্কার করতে পারবেন অচিরেই। কর্মজীবনে মানুষ চিনতে ভুল করবেন না। বন্ধুবেশে শত্রু, স্বার্থপর বস ভূরি ভূরি পাবেন। কদাচিৎ আদর্শ নেতা আর আসল বন্ধু খুঁজে পাওয়া যায়।
৩. সুযোগ বারবার আসে না। প্রথম সুযোগকে আমরা ‘এমন সুযোগ আরো আসবে’ ভেবে হাতছাড়া করি। ভুল। ভালো চাকরির অফার, বড় দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ, চ্যালেঞ্জিং পেশা ইত্যাদির সুযোগ এলে ভয়ে এড়িয়ে যাবেন না। শুধু সাহসীরাই সুযোগের সদ্ব্যবহার ঠাণ্ডা মাথায় করে থাকেন।
৪. সরল মনে সবাইকে সব কথা শেয়ার করবেন না। পরিকল্পনা সব সময় গোপন রাখুন। অহেতুক গল্পের ছলে আপনার কর্মজীবন সম্পর্কে কোনো ভাবনা, পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না। অন্যের ভাবনাগুলো শুনুন। ভালো শ্রোতা হোন। আরো শুনুন। অনেক শুনুন। কম কথা বলার অভ্যাস আপনাকে বহু বিপদ থেকে বাঁচাবে।
৫. আপনার কম্পিউটার, আপনার ফাইল, ডকুমেন্ট, ই-মেইল, আপনার ডায়েরি ইত্যাদি সামলে রাখুন। ফেসবুকে বন্ধুতালিকা নির্বাচন করুন সাবধানে। আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অফিসের কলিগদের সব কিছু সব সময় জানাতে নেই। কিছুটা, যা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত, তা সংরক্ষণ করুন একান্তে। দুর্বলতা অনেক সময় শত্রুর হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। আপনার সচ্ছলতায়, প্রিয় বন্ধুও জেলাস ফিল করতে পারে। শুরু করে দিতে পারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। তাই সামলে রাখুন আপনার সম্পদ, স্বপ্ন আর সচ্ছলতা।
৬. বসের অন্ধ ভক্ত হবেন না। অনেক বস আছেন, যাঁরা নিজের স্বার্থে অধীনস্থদের ব্যবহার করেন। চৌকস বস মাত্রেই চৌকস বক্তা হন। শব্দ, বাক্য ও উদাহরণের যুক্তিবাণে তরুণ কর্মজীবীদের আবিষ্ট করে রাখেন এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যের স্বার্থে আপনাকে ভুল পথে ধাবিত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত হন না তাঁরা। আপনি যদি অন্ধ না হন, অচিরেই বুঝতে পারবেন। চিনে নিন আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীকে।
৭. অফিস ও পরিবার দুটি আলাদা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারো গুরুত্ব কারো চেয়ে কম নয়। অফিসের কাজের চাপে পারিবারিক সময় জলাঞ্জলি দেবেন না। যিনি অফিসের কাজ ম্যানেজ করে সপ্তাহে একদিন পরিবারের জন্য সময় বের করতে পারেন না, তাকে কি দক্ষ কর্মকর্তা বলা যাবে? খেয়াল রাখবেন, পরিবারের ইস্যুগুলো অফিসের কাজের ওপর যেন কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে।
৮. আপনাকে অফিস রাজনীতি বুঝতেই হবে। রাজনীতি করতেও হবে, যদি ওপরে উঠতে চান। অফিসের উঁচু, নিচু সর্বস্তরে রাজনীতির জাল বিছানো রয়েছে। চোখ-কান খোলা রাখুন, খেলাগুলো বুঝতে পারবেন। নিজেকে রক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র—নিজেকে যতটা সম্ভব লুকিয়ে রাখা, কথা কম বলা। আপনার সম্পর্কে যেন কেউ সুনির্ধারিত কিছু বলতে বা ভাবতে না পারে। এই খেলা জটিল। কোনো নির্দিষ্ট গ্রামার নেই। কার সঙ্গে খেলবেন, কেন খেলবেন, কিভাবে খেলবেন—বুঝে যাবেন।
৯. অনবরত, বিরামহীন, চিরক্ষুধার্তের মতো পেশাগত জ্ঞান আহরণ করবেন। আমৃত্যু। যোগ্যতা আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু, বৃহত্তম অস্ত্র, পরাক্রমশালী। আপনি যদি যোগ্য হন, দক্ষ হন, সেরা হন, আপনার মূল্যায়ন হবেই—আজ না হয় কাল। হোক এই প্রতিষ্ঠানে, না হয় অন্য কোথাও। আপনার উজ্জ্বলতা কেউ আড়াল করতে পারবে না। আপনি যদি সিনসিয়ার হন, সচেতন ও সতর্ক হন আর আপনার কাজটা ভালোভাবে করতে জানেন, তাহলে আপনার ক্যারিয়ার হবে অনেক সুগম, অনেক ফলপ্রসূ।
১০. কারণ ছাড়া কোনো কিছুই ঘটে না। যেকোনো কাজের শেষে আছে ফলাফল। হোক তা ছোট, বড় বা নিতান্তই তুচ্ছ। তবুও বোঝার চেষ্টা করুন, কেন এই ফলাফল হলো। যেকোনো কাজের আগাম ফলাফল অনুমান করুন। এটা একটা চর্চা। ক্যারিয়ার বা পেশার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চর্চা। আগাম অনুমান করতে পারার চর্চা। একদিনে সফলতা আসে না। যৌক্তিকতা, ফলাফল, অভিজ্ঞতা—এসব মিলেমিশে চর্চা করতে করতে একদিন অনুমান হয়ে ওঠে নির্ভুল।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ
ছবিঃ সংগৃহীত