বর্ষায় চুলের যত্ন
বর্ষাকালে চুল শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে ওঠা কিংবা চুল পড়ার মতো সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। কারও চুল আবার তৈলাক্ত হয়ে পড়ে অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে। এসব থেকে মুক্তি পেতে চুলের গোড়া পরিষ্কার রাখা দরকার। চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে এ সময় মাইল্ড শ্যাম্পু আদর্শ। আর সপ্তাহে অন্তত দুই দিন চুল ধোয়া চাই-ই চাই। আবার শ্যাম্পু করার আগে হট তেল ম্যাসাজ করতে পারলে ভালো। ভালো ম্যাসাজের জন্য দু-তিন রকমের তেল মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। যেমন— আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল এবং নারিকেল তেল। মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ করে সারা রাত রেখে দিন। পরের দিন শ্যাম্পু করে নিন। চুলের হারানো আর্দ্রতা অবশ্যই ফিরে আসবে।
বৃষ্টিতে ভিজলে চুল ধুয়ে নিন-
বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে থাকে বায়ুম-লের ধুলিকণা ও অন্যান্য দূষিত পদার্থ। তাই বৃষ্টিতে ভিজলে আবার চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। না হলে স্ক্যাল্পে জমে যাবে ওই ধুলিকণা। এর ফলে চুলের গোঁড়া আলগা হয়ে চুল পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই হাল্কা কোনো শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে মাথা পরিষ্কার করে মুছে নিন। এর পর স্ক্যাল্পে দিন লেবুর রস। তাতে ধুলিকণা বেরিয়ে যাবে।
চুল পড়া ও খুশকি রোধে-
এ সময় চুল পড়া ঠেকানোর উপায় রয়েছে। এক কাপ মধু, এক কাপ আমন্ড অয়েল আর এক কাপ গুঁড়া কেমোমাইল পাতা মিশিয়ে নিন। পরিমাণ মতো চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন। মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করলে মাসখানেক পরেই তফাৎটা বুঝতে পারবেন। নারিকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে মিলবে খুশকি থেকে পরিত্রাণ। ঘণ্টাখানেক পর মাথায় জড়িয়ে নিন গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে। পরে চুল ধুয়ে ফেলুন।
গরম তেল মালিশ-
যে ঋতুই হোক না কেন, তেলে চুল সবসময়ই তাজা। বর্ষার জন্য বেছে নিন ঈষদুষ্ণ তেল। ভালো করে তা মালিশ করুন স্ক্যাল্পে। বর্ষার আর্দ্রতায় চুলে যে জট পড়ে, তার হাত থেকে রেহাই পাবেন অনেকটাই। স্ক্যাল্পে তেল ফিরিয়ে আনবে চুলের হারিয়ে যাওয়া জেল্লা। চুল মজবুত তো হবেই। সেই সঙ্গে মসৃণও হবে। চুল তেলতেলে হয়ে যাওয়ার ভয়ে বর্ষায় তেল থেকে দূরে থাকবেন না। বরং তেল মালিশের পরে শ্যাম্পু করে নিন। চুল ফুরফুরে থাকবে খোশমেজাজে।
তিন দিন পর পর শ্যাম্পু-
এ সময়ে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। আর এতে মাথার ত্বক ঘামে, ফলে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। যা চুল ও মাথার ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ জন্য অনেকেই প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু প্রতিদিন শ্যাম্পু করার ফলে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেলও ধুয়ে যায়। এ তেল চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে চুল পরিষ্কার করার জন্য তিন দিন শ্যাম্পুই যথেষ্ট।
সঙ্গে কন্ডিশনার-
একেও ভুললে চলবে না। শ্যাম্পুর পরে ভালো করে চুলে কন্ডিশনার দিন। বেশি করে কন্ডিশনিংয়ের প্রলেপ থাকুক চুলের ডগায়। যতটা মন দিয়ে চুলে কন্ডিশনার দেবেন, ততটাই যত্ন নিয়ে তা চুল থেকে ধুয়েও ফেলবেন। নয় তো হিতে বিপরীত। এখন অনেক এক্সপার্ট বলেন, বেশি তৈলাক্ত চুল হলে শ্যাম্পুর আগে ভিজে চুলে কন্ডিশনার দিতে। তারপর শ্যাম্পু করে নিলেই চুলের সুস্বাস্থ্য হাতের মুঠোয়।
চুল মুছতে ভুলবেন না-
ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে রাখার অভ্যাস প্রায় সব মেয়েরই রয়েছে। তবে এ মৌসুমে এমনটি না করাই ভালো। কেননা, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসে সংক্রমণ হতে পারে। তাই ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে না রেখে ভালোভাবে মুছে বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে।
ভেজা চুল বাঁধবেন না-
একইভাবে ভেজা চুল কখনই বেঁধে রাখবেন না। এতে খুব টাইট করে বা ভিজে চুল বেঁধে রাখলে চুলের গোঁড়া আলগা হয়ে চুল পড়া, খুশকি ও চুলে গন্ধ হওয়ার মতো ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্ক্যাল্পের চাই বিশেষ যত্ন-
চুলে শ্যাম্পু তো করাই হয়, কিন্তু অনেকেই এ সময় ভালোভাবে মাথার ত্বক পরিষ্কার করার বিষয়টি ভুলে যান। চুলের সমস্যার শুরু হয় মাথার ত্বক থেকেই। তাই মাথার ত্বক অর্থাৎ স্ক্যাল্পে পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। সপ্তাহে অন্তত এক দিন চুলে শ্যাম্পু করার সময় স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বক ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।
ঢেকে রাখুন মাথা-
বাইরে বের হলে মাথা ঢেকে রাখুন। বর্ষার আর্দ্রতা থেকে বাঁচবে চুল। আবার মানানসই রঙিন টুপি বা স্কার্ফ থাকলে স্টাইলও হবে রঙিন। তাই এক ঢিলে দুই পাখি। চুলও বাঁচল, কেতাদুরস্তও থাকা গেল।
সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন
ছবিঃ সংগৃহীত