রকম ভেদে চুলের যত্ন

রকম ভেদে চুলের যত্ন

একেক ধরনের চুলের জন্য যত্নও দরকার একেক রকম। তাই প্রথমেই আপনাকে ঠিকঠাক ভাবে জেনে নিতে হবে চুলের ধরন সম্পর্কে। আপনার চুল যদি  তৈলাক্ত হয় তবে যত্ন হবে এক রকম। রুক্ষ হলে যত্নের ধরন বদলে যাবে। এই সময় তৈলাক্ত চুলের মাথার ত্বক সহজে ঘেমে যায়। আর সেই ঘামে ময়লাও জমে তাড়াতাড়ি। ফলে চুল অনুজ্জ্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এতে চুল তার নিজেস্বতা হারায়। ধারণ করে বিপরীত রূপ। আপনার  তৈলাক্ত চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে। অপরদিকে রুক্ষ চুলেও ধুলা-ময়লা জমে চিটচিটে হয়ে যায়। এ সময়ে চুলে খুশকির দেখা পাওয়া যায়। চুল ভেঙে পড়া, আগা ফাটাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। ফলে শুরু হয় চুল ঝরে পড়া। অনেকের চুলের গোড়ায় ফাংগাল ইনফেকশন হয়ে চুলকানির সৃষ্টি হয়। একদিন আগেই হয়তো শ্যাম্পু করেছেন তবু চুলে গন্ধ সৃষ্টি হয়ে যায়। আর এসব সমস্যা এড়াতে প্রয়োজন সঠিক যত্নের।

বর্ষাকালে চুল পরিষ্কার রাখতে ঘন ঘন শ্যাম্পু করতে হবে। যাদের চুল তৈলাক্ত তারা প্রতিদিনই শ্যাম্পু করতে চেষ্টা করুন। চুল রুক্ষ হলে মাইল্ড শ্যাম্পু উপকার দেয়। এ ধরনের চুলে শ্যাম্পু করার আগে ডিমের প্যাক উপকার দেয়। হাতে এক ঘণ্টার মতো সময় নিয়ে তারপর শ্যাম্পু করুন। একটি পরিষ্কার পাত্রে ডিমের সাদা অংশ ও এক চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর স্ক্যাল্পে ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষার পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে তারপর শ্যাম্পু করে নিন। এতে চুল নরম, ঝরঝরে ও পরিষ্কার হয়। রুক্ষ চুলকে মসৃণ করতে হেনা সব সময়ই উপকারী। সপ্তাহে একবার হেনা, লেবুর রস, চায়ের লিকার ও ডিম ভালো করে মিশিয়ে চুলে লাগান। দুই ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে দেখুন  কেমন সুন্দর ঝলমলে হয়েছে। এ ছাড়াও যাদের চুল রুক্ষ প্রকৃতির তারা অবশ্যই চুলে শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার লাগাবেন। চার থেকে পাঁচ মিনিট কন্ডিশনার লাগিয়ে রেখে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিলেই হবে।

বাজার থেকে কেনা কন্ডিশনার ব্যবহার করতে না চাইলে ঘরেও তৈরি করে নিতে পারেন। চায়ের লিকার ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে তা ছেঁকে শুধু পানি নিন। এবার সেই লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এ ছাড়াও কন্ডিশনার হিসেবে আরেকটি উপাদানও দারুণ কাজে আসে। এক মগ পানির ভেতর দুই টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিলে দেখবেন কেমন ঝরঝরে হয়েছে। সাদা সিরকাও পানির সঙ্গে মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিলে কন্ডিশনারের কাজ করবে।

বর্ষার এই মৌসুমে-

অনেকেরই চুলে খুশকির উপদ্রব দেখা দেয়। এর জন্য চুল পরিষ্কার রাখা জরুরি। খেয়াল রাখুন মাথার ত্বকে মরা চামড়া যেন না জমে। রাতে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল কুসুম গরম করে মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। সকালে উঠে লেবুর রস লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করতে হবে। খুশকি দূর করতে পিয়াজের রসও খুব উপকারী। তবে পিয়াজের রস মাসে দুইবারের বেশি নয়। খুশকি সারাতে ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে লেবুর রস ও নিম পাতার রস মিশিয়ে চুলে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে খুশকির উপদ্রব কমবে। বাসায় তেঁতুল থাকলেও খুশকি তাড়াতে কাজে আসবে। পরিমাণ মতো পানিতে তেঁতুল গুলে নিন। এবার সেই পানি চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন তেঁতুল গোলানো পানি চুলে দিলে খুশকি দূর হবে। এমনকি মাথা চুলকানোর সমস্যা থাকলেও তা দূর হবে।

চুলের খুশকি দূর করতে আরেকটি পদ্ধতি উপকারে আসবে। ৬ টেবিল চামচ টকদই খুব ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এবার তাতে ১ টেবিল চামচ মেহেদি বাটা ভালো করে মেশান। মিশ্রণটি চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ভালো করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে চুল যেমন খুশকিমুক্ত হবে তেমনি চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে ও রেশমি।

 

বর্ষার সময় চুলের অন্যতম সমস্যা গন্ধ হওয়া। ভেজা আবহাওয়া কিংবা ভেজা চুল বেঁধে রাখার কারণে চুলে এ ধরনের ভ্যাপসা গন্ধ তৈরি হয়। এটা আপনার নিজের জন্য যেমন অস্বস্তিকর তেমনি পাশের জনের জন্যও তা অত্যন্ত অস্বস্তিকর। আপনি যতই স্মার্ট হোন না কেন, চুলে গন্ধ থাকলে আপনার ব্যক্তিত্বের ওপর তা আঘাত আনবেই। তাই কোনো সচেতন ব্যক্তি নিজের চুলে এমন গন্ধ একদমই সহ্য করতে পারেন না। যেকোনো উপায়ে চান গন্ধ দূর করতে। চুলের গন্ধ দূর করার প্রথম ধাপ হলো প্রতিদিন ভালোভাবে শ্যাম্পু করা। চুল ঠিকঠাক মতো পরিষ্কার থাকলে এবং চিরুনী করা হলে গন্ধ হয় না। তবু যদি গন্ধ হয়েই যায় তবে নিতে হবে কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা। চুল শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে এক কাপ গোলাপজল ও এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে দুর্গন্ধ দূর হয়ে আপনার চুল সুগন্ধ ছড়াবে। চুল শ্যাম্পু করার আগে লেবুর রস মাথার ত্বকে ভালো করে ঘষে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললে খুব সহসা দুর্গন্ধ ছড়াবে না। এ ছাড়াও চুল ভিজে গেলে তা প্রথমে শুকিয়ে নিন। তারপর চুল বাঁধুন। মনে রাখতে হবে ভেজা চুল কখনোই বাঁধা যাবে না।  

ঘরোয়া টিপস-

নারীর সৌন্দর্যের অলঙ্কার এক গোছা রেশমি চুল। কিন্তু সবার চুল তো আর প্রত্যাশার মতো সুন্দর হয় না। যত্ন নিলেও তা সঠিক হয় না। সে জন্য প্রত্যাশিত উপকারও পাওয়া যায় না। চুল ত্বকের অংশবিশেষ হিসেবেই রোদের তাপ, বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ ও ধুলার ক্ষতিকর প্রভাবে পড়ে। তাই চুলের ধরন অনুযায়ী চুলের যত্ন নিতে হবে।

স্বাভাবিক চুলের জন্য-

নিয়মিত যত্নে চুলের মসৃণতা বজায় থাকে। স্বাভাবিক চুলের জন্য সপ্তাহে একদিন উষ্ণ গরম তেল মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন ১৫-২০ মিনিট ধরে। এরপর গরম পানিতে ভেজানো টাওয়েল ১৫-২০ মিনিট পেঁচিয়ে রাখতে হবে। তারপর একটি ডিম, ২ চা চামচ মধু, ২ চা চামচ আমলকীর রস, ২ চা চামচ অলিভ অয়েল, জবা ফুল পেস্ট, সামান্য গরম পানি একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। তারপর প্যাকটি পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন ২৫-৩০ মিনিট।

শুষ্ক চুলের জন্য-

যাদের চুল বেশি শুষ্ক তাদের জন্য প্রথম পরামর্শ হলো  একদিন পরপর অলিভ অয়েল ম্যাসাজ। নারিকেল তেলের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে উষ্ণ গরম করে পুরো চুলে ও স্কাল্পে ২০-২৫ মিনিট ম্যাসাজ করলেও উপকার পাবেন। এরপর গরম পানিতে টাওয়েল ভিজিয়ে স্টিম নিন। ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার লাগালেও উপকার হবে। সব শেষে চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুলে চুলের রুক্ষ, শুষ্ক ভাব চলে যাবে। এ ছাড়াও একটি জবা ফুল বাটা, ২ চামচ মধু ও এক চামচ আমলকী বাটা, টকদই, ডিমের কুসুম, মেথিগুঁড়া, ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো চুলে ঘণ্টাখানেক লাগিয়ে রাখুন। তারপর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

খুশকি দূর-

চুল পড়া এবং খুশকির সমস্যায় ভোগেন ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন। প্রায় সারা বছরই অনেকের চুলে খুশকি থাকে। কারও কারও বিশেষ ঋতুতে এই সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে নিজের চিরুনি, ব্রাশ, তোয়ালে, বালিশের কভার সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ব্যবহূত নারিকেল তেলের মধ্যে নিমপাতা ও তুলসীপাতার গুঁড়া মিশিয়ে ব্যবহার করলে দারুণ উপকার পাবেন।

 

সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন

ছবিঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন  ও সংগৃহীত