হাতের যত্ন নিন
মুখের ত্বক যতটা যত্নের দাবিদার, হাতও তাই। হাতেও চাই বাড়তি নজর। হাতের যত্নে সহজ ও কার্যকর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বীথি’স হারবালের রূপবিশেষজ্ঞ বীথি চৌধুরী
মুখের মতো হাতেও নিয়ম করে ক্লিনজিং, স্ক্রাবিং, ময়েশ্চারাইজিং জরুরি। হাতের জন্য ডিপ ক্লিনজিং দিনে একবার স্ক্রাবিং সপ্তাহে দুই দিন আর ময়েশ্চারাইজার যতবার হাত ভেজানো হবে ততবার দিতে হবে। এ ছাড়া সপ্তাহে এক দিন ত্বকের ধরন বুঝে হাতে শীত-উপযোগী বিউটি প্যাক লাগাতে হবে। সঠিক প্যাক সুন্দর হাত পাওয়ার ম্যাজিক্যাল সলিউশন। শুধু শীত কিংবা গ্রীষ্মে নয়, হাতের যত্ন নিতে হবে বছরজুড়ে।
ক্লিনজিং-
ডিপ ক্লিনজিংয়ের জন্য রাতে শোবার আগে ভালো সময়। প্রতিদিন বাইরে বের হতে না হলে গোসলের সময়ও ডিপ ক্লিনজিং করা যেতে পারে। প্রথমে অলিভ বা নারিকেল তেল মেখে নিন পুরো হাতে। এরপর ভেজা স্পঞ্জে বডি ওয়াশ বা সাবান দিয়ে ঈষদুষ্ণ পানিতে হাত ধুয়ে ফেলুন। শীতের ক্লিনজার হিসেবে হাইড্রেটিং ফর্মুলার মাইল্ড ক্লিনজার বেছে নিন। ল্যাভেন্ডার, অরেঞ্জ, রোজ ওয়াটার, আরগান, শিয়া বাটারসহ বিভিন্ন অ্যাসেনশিয়াল অয়েলযুক্ত হ্যান্ডওয়াশ শীতের জন্য উপকারী। ভেষজ ক্লিনজার চাইলে মসুর ডালের বেসন কিংবা উপটান ব্যবহার করতে পারেন। ধোয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে হাত মুছে ময়েশ্চারাইজার বা লোশন লাগাতে হবে। বারবার হাত ধুতে হলে হ্যান্ডওয়াশের পরিবর্তে ময়েশ্চারাইজিং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা ওয়েট ওয়াইপ ব্যবহার করতে পারেন।
ময়েশ্চারাইজার-
শীতের শুষ্কতা থেকে হাতের সুরক্ষায় প্রধান হাতিয়ার ময়েশ্চারাইজার। নিয়ম করে দিনে বেশ কয়েকবার হাতে ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। বিশেষ করে প্রতিবার হাত ধোয়ার পর। বডি লোশন বা বডি ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন হাতের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে। শীতে গ্লিসারিনও খুব ভালো মানের ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। অথবা এলোভেরা জেলের সঙ্গে সমপরিমাণ অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ত্বক বেশি শুষ্ক হলে ভারী হ্যান্ড ক্রিম, ভেসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ভালো কাজ দেয়। বয়স ৩০ বছরের বেশি হলে হাতের সুরক্ষায় এন্টি এজিং উপাদানসমৃদ্ধ হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। এতে কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, হাতের ত্বক থাকবে টানটান ও মসৃণ।
স্ক্রাবিং-
সপ্তাহে দুই দিন স্ক্রাবার দিয়ে কয়েক মিনিট হাত ম্যাসাজ করলে ত্বকের মৃত কোষ ঝরে পড়ে। এতে ত্বক সহজেই ময়েশ্চারাইজার শুষে নিতে পারে। ফলে শুষ্ক ও রুক্ষ ভাব দূর হয়ে হাত হয়ে ওঠে সতেজ ও মসৃণ। বাজারে বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ড স্ক্রাবার পাওয়া যায়। চাইলে ঘরে বানানো প্রাকৃতিক উপাদানেও তৈরি হতে পারে স্ক্রাব। চালের গুঁড়া প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে বেশ কার্যকর। ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েলের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া আর ১ টেবিল চামচ বেসন মিশিয়ে নিন। সম্ভব হলে এর সঙ্গে মেশান ২ টেবিল চামচ টক দই। দই না পেলে পরিমাণমতো দুধ কিংবা পানি দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার এই হ্যান্ড স্ক্রাবার দিয়ে হাতের নিচ থেকে ওপরে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। তারপর ঈষদুষ্ণ পানিতে হাত ভালো করে ধুয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
বিউটি প্যাক-
সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপাদানে ঘরে তৈরি প্যাক ত্বক চর্চায় অধিক কার্যকর। রোদে পোড়া দাগ দূর করতে ১ টেবিল চামচ টক দই, ১ চা চামচ বেসন আর ১ টেবিল মধু মিশিয়ে নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পুরো হাতে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ও নির্জীব ত্বকের জন্য ১ চামচ আমন্ড অয়েল, ১ চা চামচ বেসন, ১ টেবিল চামচ পাকা কলার পেস্ট আর এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। হাতে মেখে ২০ মিনিট পর ধুয়ে নিতে হবে।
টিপস-
- হাতের ত্বক আর নখের সুরক্ষায় খাদ্যাভ্যাসেও নজর দিতে হবে। ভিটামিন ‘ই’, আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন ‘বি’ আর বায়োটিনযুক্ত খাবার রাখুন খাদ্য তালিকায়।
- বাইরে বেরোনোর আগে হাতেও সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। এমনকি সূর্য দেখা না গেলেও অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব থাকে। এসপিএফ ২৫ থেকে এসপিএফ ৫০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
- শীতে হাত ধোয়ার জন্য খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। গরম পানি ত্বককে আরো শুষ্ক করে ফেলে। স্বাভাবিক তাপমাত্রা বা ঈষদুষ্ণ পানিতে হাত ধোয়া ত্বকের জন্য নিরাপদ।
- গৃহস্থালি কাজের সময় গ্লাভস ব্যবহার করলে বারবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে না।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ
ছবিঃ সংগৃহীত