ছোট ফ্ল্যাটও করে তুলুন দৃষ্টিনন্দন
জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ছোট ফ্ল্যাট। শুধু রঙের ব্যবহারে কী করে ছোট্ট ফ্ল্যাটকেও করে তোলা যায় দৃষ্টিনন্দন, রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারসন গুলসান নাসরীন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন জিনাত জোয়ার্দার রিপা
ঘর সাজাতে সবার আগে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। রঙের বেলায়ও পরিকল্পনা করে নিতে হবে শুরুতেই। যেহেতু ঘর ছোট, তাই মাথায় রাখা জরুরি, কী করে এই ছোট্ট ঘরকেও রঙের ব্যবহারে করে তোলা যায় বড়। ছোট ফ্ল্যাট রাঙাতে পছন্দ, চাহিদা, রুচি ও সাধ্য—এই চারের সমন্বয় ঘটাতে পারলেই হলো।
ঝামেলা এড়াতে এখন প্রায় সবাই দেয়ালে কেবিনেট করে ফেলেন। সাধারণত এই কেবিনেটগুলো দরজার পাশের দেয়ালেই হয়ে থাকে। ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে কেবিনেটের রং কাঠের বা লেকার পলিশ রঙে রাঙাবেন না। এতে ঘর আরো ছোট দেখায়। সে ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন সাদা রং। তাতে করে দৃষ্টি এক জায়গায় আটকে যাবে না।
যেদিকটায় কেবিনেট করলেন তার বিপরীতে থেকে গেল আরো তিনটি দেয়াল। এগুলোতে কন্ট্রাস্টে হালকা হলুদাভ, হালকা পিচ, হালকা ফিরোজা বা আকাশি রং করতে পারেন। তাতে ঘর বড় দেখাবে।
জানালায় ব্যবহার করতে পারেন একটু গাঢ় রঙের পর্দা। বা হালকাও করতে পারেন। সেটা নির্ধারণ করুন আপনার ঘরে আলো-বাতাসের সঞ্চালন কেমন তার ওপর। আলো কম ঢোকে এমন ঘরে হালকা রং বেছে নেওয়াই ভালো। ঘরে পিলার পড়লে বরং সেটাকে রাঙান অন্য কোনো রঙে। খানিকটা হাইলাইট পাবে ঘর। খেয়াল রাখুন, সব যেন আবার সাদা না হয়ে যায়।
শিশুদের জন্য আলাদা জগৎ-
শিশুদের জন্য শুধু রং দিয়েই গড়ে তুলতে পারেন আলাদা এক কল্পনার জগৎ। তাতে করে তাদের মনের বিকাশটাও হবে বৈকি! কন্যাশিশুর ঘরের এক দেয়ালে হালকা গোলাপি বা পিচ আর ছেলের ঘরের এক দেয়ালে হালকা আকাশি দিয়ে ঘরকে করতে পারেন আলাদা। এ ছাড়া তাদের দেয়াল রাঙাতে পারেন আলাদা কোনো কল্পলোকের দৃশ্য দিয়ে। আকাশে পরির ডানা মেলে উড়ে যাওয়া বা জঙ্গলে বাঘ-সিংহের আনাগোনা অথবা একেবারে সাগরতলের জগত্টাকেই উঠিয়ে নিয়ে বসিয়ে দিতে পারেন আপনার শিশুর ঘরের দেয়ালে। বাজারে এখন প্রতি স্কয়ার ফুট হিসেবে এমন দৃশ্য কিনতে পাওয়া যায়। রঙের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজটা বাড়ি এসে করে দিয়ে যাবে।
ছোট ফ্ল্যাটের মেঝেও সাদা-
ছোট ফ্ল্যাটের মেঝেও করে নিতে পারেন সাদা। লাগিয়ে নিতে পারেন সাদা টাইলস বা বাজেট একটু বেশি হলে বসিয়ে নিন মার্বেল পাথর। ওপর-নিচে পুরো সাদা হলে ঘর অনেকটা বড় দেখাবে। আর টাইলস, মার্বেল পরিষ্কার করাও খানিকটা সহজ। তবে যেহেতু রং সাদা তাই সতর্কতাও জরুরি। কুসুম গরম পানিতে সামান্য ডিটারজেন্ট মিলিয়ে মুছে নিলেই ময়লা উঠে যাবে। বাজারে এখন মিল্ক হোয়াইট টোনের রং কিনতে পাওয়া যায়। দরজায় এটা লাগাতে পারেন। এই রং হাত দিয়ে ধুয়ে বা মুছেই পরিষ্কার করা যায়।
মনে রাখুন
♦ দেয়ালগুলো অবশ্যই টেম্পার করে রং করুন। দেয়াল স্যাঁতসেঁতে হলে রং করাটাই বেকার হবে।
♦ ছোট ফ্ল্যাটে ভারী আসবাবের ভাবনা ছাড়ুন। আরেকটা কথা, আসবাবগুলোও রাঙিয়ে নিন হালকা রঙে।
♦ রান্নাঘরের দরজার বাইরের পাশের দেয়ালে খানিকটা গাঢ় রং ব্যবহার করুন। এতে ঘর বড় দেখাবে, তেল-ময়লার দাগও সহজে চোখে পড়বে না।
♦ ঘরের রং আরো ভালো ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করতে পারেন কৃত্রিম আলো।
♦ বসার বা খাবার ঘরের এক পাশে দেয়ালে কারুকার্যখচিত লম্বা আয়না ব্যবহার করলে তা যেমন ঘরের ভোলই পালটে দেবে, তেমনি ঘরকেও দেখাবে বড়।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ
ছবিঃ সংগৃহীত