ঈদ ফ্যাশন-সালোয়ার কামিজের ডিজাইনে বৈচিত্র্য
নানা রকম পোশাকের সঙ্গে ঈদে এক সেট সালোয়ার-কামিজ তো চাই-ই। চাই নতুনত্বও। কী থাকছে এবার ঈদে সালোয়ার-কামিজের প্যাটার্ন কিংবা প্রিন্টে। কাট-ছাঁটই বা কেমন হচ্ছে ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছেন রওনক বিথী।
হয় ভ্যাপসা গরম না হয় ঝুমবৃষ্টি সময়টাই এখন এমন। এরই মধ্যে এবারের ঈদ। তাই এবার ঈদে অধিকাংশ সালোয়ার-কামিজই পাতলা কাপড় এবং আরামদায়ক প্যাটার্নে তৈরি করা হয়েছে। দৈর্ঘ্যে লম্বা এবারও আছে। তবে সালোয়ারের জায়গায় তাতে জুড়েছে ম্যাক্সি কাট লেয়ার।
ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা জানালেন, ‘কামিজের ট্রেডিশনাল ধারা থেকে বেরিয়ে এবার আমরা নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। ফিউশনটাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কামিজের কাটিং ও প্যাটার্নে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। কিছু কামিজের সঙ্গে পকেট জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কামিজে পাঞ্জাবি, কুর্তি, কামিজের ফিউশন তৈরি হয়েছে; যা এবার ঈদে একেবারেই নতুনত্ব আনবে।’
না শাড়ি, না কামিজ একেবারে আনকোরা কাটও খুঁজে পাওয়া যাবে এবার সালোয়ার-কামিজে। কামিজের নিচে সালোয়ারের বদলে শাড়ির কুচি যুক্ত হয়েছে লেয়ার হিসেবে। শুধু লেয়ার নয়, কুঁচি, কলি এবং সামনে ছোট ও পেছনে বড় এমন প্যাটার্নগুলোও ঈদের সালোয়ার-কামিজে দেখা যাবে। কখনো ভিন্নতা মিলছে ধুতি কাটেও। গতবারের বোটনেক সরে এবার বেড়েছে হাইনেকের ডিজাইন। যেখানে কামিজের সামনে কাটা থাকবে লম্বা করে। খোলা হলে গোল গলা।
গরমের কারণে এবার অফ শোল্ডার বা কাঁধ থেকে একটু নামানো সালোয়ার-কামিজ খুঁজছেন অনেকে। হাতার বৈচিত্র্যেও এবার চোখে পড়ার মতো। গতানুগতিক থ্রি-কোয়ার্টার, ফুল হাতা ছাড়াও ঢোলা কুচি হাতা, রুমাল হাতা, কলি হাতা এবার দেখা যাবে।
‘কোটির ফ্যাশন গত বছর থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এবার সেই কোটি আর আলাদা পোশাক থাকছে না। বেশিরভাগ কামিজ বা কুর্তিতে লং কোটি ব্যবহার হচ্ছে এবং তা যুক্ত হয়ে গেছে জামার সঙ্গে’ জানালেন সাদাকালোর অন্যতম উদ্যোক্তা ও ডিজাইনার তাহসীনা শাহীন। এ বছর কামিজের লেন্থেও অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন তাহসীনা শাহীন। তিনি বলেন, ‘ফ্যাশন তো পুরনোকেই নতুন করে ফিরিয়ে আনে। এবার আমরা পুরনো সেই সাধারণ সালোয়ারটাও অনেক কামিজের সঙ্গে পাব। এটা এবার থেকে ফ্যাশনে একটু একটু করে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।’
ঈদে প্যাটার্নভিত্তিক কাজ এবার বেশি হয়েছে। নেক ও বডি পার্টের ডিজাইনেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্টাইলের সঙ্গে মাথায় রাখা হয়েছে আরামের বিষয়টি। পোশাকের নকশায় গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টাও করা হয়েছে। একই পোশাকে দুই কিংবা তিন ধরনের কাপড়ের ব্যবহারে নিরীক্ষাধর্মী কাজ করা হয়েছে। সুতি, অ্যান্ডি, সিল্ক ধরনের কাপড়ের সঙ্গে একেবারেই পাতলা জর্জেট, নেট, শিফন কাপড় জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পোশাকের লেয়ার। এতে পোশাকে উৎসবধর্মী লুক ফুটে উঠেছে পাশাপাশি গরমও লাগবে না। কাপড় ও রঙ নিয়ে অঞ্জন’সের শীর্ষ নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ বলেন, ‘কটন ও অ্যান্ডি কটনের পাশাপাশি ঈদের সব আয়োজনের জন্য লিনেনকেই প্রাধান্য দিয়েছেন অনেকে। গরমের রঙ যেমন রানি গোলাপি, বেগুনি, লাল ও নীলের বিভিন্ন শেড, ম্যাজেন্টা, কমলা ফুটেজে দারুণ আমেজে।’
ঈদ ফ্যাশনে এবার দাপিয়ে বেড়াবে প্রিন্ট বৈচিত্র্যও। পোশাকের বডি পার্টে বিশেষভাবে রয়েছে ফ্লোরাল মোটিফের কাজ। ‘আধুনিক ও রেট্রো ঘরানার প্রিন্ট দেখা যাবে এবার। এই ছাপায় পশুপাখির অবয়ব, গ্রাফিক্স, পোলকা ডট, স্থাপত্য নকশা, ফুল, চুনরি, টাইডাইও থাকবে। কামিজের বুকে এমব্রয়ডারি এবং বিভিন্ন ধরনের ব্লক প্রিন্টের ব্যবহার হয়েছে’ বলে জানান নিপুণের স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার আশরাফুর রহমান ফারুক।
বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের মধ্যে কে-ক্র্যাফটের পোশাকের মোটিফে এবার গুরুত্ব পেয়েছে ফ্লাওয়ার। সেখানে বর্ষার রঙিন ফুলেরা জায়গা দখল করে নিয়েছে। হালকা কাজের পোশাকের পাশাপাশি রাখা হয়েছে ভারী জমকালো পোশাক। রঙ বাংলাদেশ এ বছর পোশাকের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে ইসলামিক, জিওমেট্রিক ও ফ্লোরাল মোটিফ। নকশার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়েছে স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লকপ্রিন্ট, হ্যান্ডওয়ার্ক, কারচুপি ও এমব্রয়ডারি।
নিপুণ এ বছর গুজরাটি, ফুলেল, স্থাপত্যসহ বেশ কয়েকটি মোটিফ নিয়ে কাজ করেছে। জয়সিল্ক, সুতি, লিলেন ছাড়াও আরামদায়ক তাঁত কাপড়ে সাজানো হয়েছে নিপুণের সালোয়ার-কামিজের ক্যানভাস।
ফ্যাশন হাউস সাদাকালো পোশাকের থিম হিসেবে ব্যবহার করেছে এথনিক মোটিফ। এথনিক বা নৃগোষ্ঠীদের বুননে ফুল-লতাপাতার চেয়ে জ্যামিতিক মোটিফ বেশি দেখা যায়। তাদের নিজস্ব বুননরীতিকে পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাঁথা সেলাই, ব্লক, প্রিন্ট নানাভাবে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, বসুন্ধরা সিটি, নাভানা টাওয়ারে কুর্তি, কামিজে জমকালো নকশাই সংগ্রহ বেশি। জর্জেট, অ্যান্ডি, সিল্ক কাপড়ে জারদৌসি, কারচুপি, এমব্রয়ারি কাজে পার্টি পোশাক মিলবে এসব শপিংমলে। ইস্টার্ন মল্লিক, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে এমব্র্রয়ডারি, হাতের কাজ ও বিভিন্ন ধরনের সিকোয়েন্স ব্যবহারে ইন্ডিয়ান কটন সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাবে। বিভিন্ন মার্কেটের এমব্র্রয়ডারি নকশার কুর্তিও নজর কাড়বে। মার্কেটগুলোয় পালাজ্জোর নানারকম আকৃতি পাওয়া যাবে। কোনোটা প্যান্টের মতো সমান্তরাল, তো কোনোটা স্কার্টের মতো ছড়ানো, আবার কোনোটা চাপা প্যান্টের মতো সমান।
বিভিন্ন মার্কেট থেকে শপিংমল সবখানেই পাওয়া যাবে সালোয়ার-কামিজ। তবে একটু ভিন্নতা চাইলে যেতে পারেন বিশ্বরঙ, বিবিআনা, অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, নিপুণ, মায়াসির, দেশাল, কে-ক্র্যাফটসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়
ছবিঃ সংগৃহীত