বলিরেখা এড়াতে

বলিরেখা এড়াতে

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চেহারায় কোনো ভাঁজ দেখলেই চোখ কপালে উঠে যায়। এই বুঝি বলিরেখা পড়ে গেল! এরপর বলিরেখা দূর করতে কত শত আয়োজন। কিন্তু বলিরেখা যেন না পড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখলেই সমস্যাটি এড়ানো সম্ভব।

হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী ও বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলিরেখা এড়ানোর কিছু পরামর্শ দিলেন।

 

কেন পড়ে বলিরেখা-

  • বলিরেখা সাধারণত শুষ্ক ত্বকে পড়ে থাকে। পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) থেকে ধীরে ধীরে কোলাজেন ইলাস্টিসিটি ভেঙে যেতে থাকে এবং বলিরেখা দেখা দেয়।
  • শুধু বয়সের কারণেই বলিরেখা পড়ে না, বরং ত্বকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ কমলেও ত্বকে ভাঁজ পড়ে যায়।
  • সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মিও বলিরেখার কারণ।
  • ত্বকে যে টানটান ভাব অনুভূত হয়, তার কারণ হলো আমাদের ত্বকের কোলাজেন নামের প্রোটিন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা ক্ষয় হয়ে যায় এবং ত্বক পাতলা হয়ে যায়।
  • ইলাস্টিন ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। বাতাসের আর্দ্রতা, পরিবেশ ও ধকলের কারণে কোলাজেন ও ইলাস্টিন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এ জন্য বয়স কম হলেও অনেকের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ভাঁজ পড়ে।
  • অভ্যাসগত কারণেও বলিরেখা পড়ে। যেমন বিরক্তির কারণে ভুরু কুঁচকে রাখলে কপালে, অতিরিক্ত হাসির কারণে ঠোঁটের দুই পাশে ভাঁজ পড়ে যায়।
  • দীর্ঘক্ষণ মেকআপ রাখলে বা ঠিকমতো না তুললেও বলিরেখা পড়ে।
  • ত্বকে মাত্রাতিরিক্ত প্রসাধন ব্যবহারেও বলিরেখা চলে আসে।
     

বলিরেখা এড়াতে খাদ্যাভ্যাস-

  • পেট পরিষ্কার রাখা জরুরি। তাই প্রচুর পানি ও ফলের রস পান করতে হবে। খুব ভালো হয় যদি প্রতিদিন এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবু স্লাইস করে কেটে পাঁচ থেকে সাত মিনিট পরে সেই পানিটা পান করা যায়। এতে পেট পরিষ্কার থাকে এবং শরীরেও আর্দ্রতার মাত্রাও বাড়ে।
  • দুই মগ পানিতে দশটি তেজপাতা ও একটি বড় দারুচিনি ধীরে ধীরে কম আঁচে এমনভাবে জ্বাল দিন, যেন দুই গ্লাস পানি এক গ্লাস হয়ে যায়। এরপর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম অবস্থায় এই পানিটুকু পান করলে বলিরেখা এবং এর সঙ্গে ছোট ছোট দাগও এড়ানো সম্ভব। বয়স ৩০ বছর হলেই এই পানি সব ক্ষেত্রে কার্যকরী এবং শরীরেও একটা ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন পাকা পেঁপে, পাকা কলা, পালংশাক, লাউশাক ইত্যাদি। এ ছাড়া ডাবের পানি, ভিটামিন সি, দুগ্ধজাতীয় খাবার, বাদাম (বিশেষ করে কাঠবাদাম), সবুজ চা (গ্রিন টি) নিয়মিত পান করতে হবে।
     

ত্বকের যত্নে-

  • পঁচিশের পর থেকে খুব ভালোভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হয়। এই যত্নে যদি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তবে ত্বক দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
  • ময়েশ্চারাইজারের মাত্রা বাড়ানো দরকার। ত্বকের যত্নে পানিজাতীয় প্রসাধন ব্যবহার করতে হবে, যা লোমকূপ দিয়ে ত্বকের চতুর্থ স্তর পর্যন্ত পৌঁছে ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
  • যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের ২০ বছর বয়সের পর এক বা দুই দিন পরপর রাতে ঘুমানোর আগে মুখে জলপাই তেল মালিশ করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। বেশি বেশি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এতে করে ত্বকের শুষ্ক ভাবটাও চলে যাবে।
     

ক্লিনজার-

  • তৈলাক্ত বা শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে সাবান ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বক পরিষ্কার রাখা ভালো। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুগ ডাল গুঁড়ার সঙ্গে পোলাওর চালের গুঁড়া বা নিম ও তুলসী পাতার রস মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মুখে লাগিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট পর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • শুষ্ক ত্বকের জন্য কাঁচা দুধ বেশ ভালো ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। কাঁচা দুধের সঙ্গে ময়দা ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তা মুখে লাগিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বক যে শুধু পরিষ্কার হবে তা-ই নয়, বরং ত্বকে লাবণ্য ফিরে আসবে। সপ্তাহে এক দিন ক্লিনজার দিয়ে ভালোমতো উল্টো দিকে টানটান করে মালিশ করলে বলিরেখা চলে যাবে।
     

মনে রাখুন-

  • বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বলিরেখা পড়বেই। তবে খুব তাড়াতাড়ি যাতে বলিরেখা না পড়ে, সে জন্য ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
  • সব সময় হাসিমুখে থাকুন। মনকে চিন্তামুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখুন। মনের সঙ্গে ত্বকের একটি ভিন্ন রকম সম্পর্ক থাকে।
  • সূর্যের সরাসরি আলো এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ভালো।

 

 

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, নকশা

ছবিঃ প্রথম আলো ও সংগৃহীত