শীতের আগেই ত্বক ও চুলের যত্ন নিন

শীতের আগেই ত্বক ও চুলের যত্ন নিন

এখনো শীত আসতে বেশ কিছুদিন বাকি। এরই মধ্যে শীতের আবহ জানান দিতে শুরু করেছে ত্বক। ভোরে যেন একটু শীতের ছোঁয়া পাওয়া যায়। বাড়তি কিছু নয়, দরকার শুধু নিয়মিত পরিচর্যা। এখন থেকেই ত্বক ও চুলের পরিচর্যা করুন। এতে পুরো শীতে আপনার ত্বক থাকবে সুস্থ ও সতেজ।

 

প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার-

হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের ত্বক বিশেষজ্ঞ শাহীনা আফরিন মৌসুমী জানালেন, ‘হিমেল হাওয়ায় ত্বক সুস্থ রাখতে ত্বকের ময়েশ্চার বা আর্দ্রতা ধরে রাখা খুব জরুরি। এ জন্য ত্বকে নিয়মিত ময়েশ্চারসমৃদ্ধ উপাদান ব্যবহার করতে হবে। প্রাকৃতিক ময়েশ্চারসমৃদ্ধ উপাদান ত্বকের যত্নে বেশি উপকারী। পাশাপাশি ময়েশ্চারসমৃদ্ধ লোশন ব্যবহার করুন। শীতে প্রতিদিন কয়েকটি কিশমিশ ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খেলে ত্বক ডিহাইড্রেটমুক্ত থাকবে।’

 

সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন-

শীতের সকালের রোদে আল্ট্রাভায়োলেট বেশি থাকে। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। লোশনের এসপিএফ যেন অন্তত ১৫ থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

 

ফেসিয়াল করুন-

শীতে ত্বকের ওপরের অংশ যেমন খসখসে হয়ে ওঠে, তেমনি ভেতর থেকেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। এ জন্য ঘরোয়া পরিচর্যার মাধ্যমে ত্বকের মরা কোষ দূর করা, ত্বকের কোমলতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ত্বক ডিহাইড্রেটমুক্ত রাখতে ফেসিয়াল করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় ভালো মানের কোনো বিউটি কেয়ার ক্লিনিকে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসিয়াল করা।

 

ঠোঁটের যত্ন নিন-

শীতে ঠোঁট ফেটে গেলে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়। কুসুম গরম পানিতে সুতি কাপড় ভিজিয়ে ঠোঁটে হালকা করে ঘষে ঠোঁটের ফেটে যাওয়া চামড়া তুলে ফেলুন। এবার ভ্যাসলিন লাগিয়ে রাখুন।

 

হাত-পা এরও যত্ন নিন-

প্রতিদিন অলিভ অয়েল হালকা গরম করে শরীরে ম্যাসাজ করুন। ত্বকে আসবে নতুন জেল্লা। ‘ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে গ্লিসারিন দারুণ কার্যকর। শীতকালে হাত-পায়ে একভাগ গ্লিসারিনের সঙ্গে দুই ভাগ পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। গ্লিসারিন মাখার পর একটা ভেজা তোয়ালে হালকা করে ত্বকে চেপে ধরলে গ্লিসারিনের আঠা ভাব চলে যাবে। পা ফাটা রোধ করতে সপ্তাহে তিন দিন গোড়ালিতে লেবু ঘষে নিলে উপকার পাওয়া যাবে’ বলে জানান ত্বক বিশেষজ্ঞ শাহীনা আফরিন মৌসুমী।

 

যত্ন নিন চুলের-

চুলের যত্ন প্রসঙ্গে রূপ বিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি পরামর্শ হচ্ছে, শীতে শুষ্কতা এবং ধুলাবালির কারণে চুল শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে, চুলে খুশকি দেখা দেয়। এসব সমস্যার সমাধান করতে সপ্তাহে দুদিন নারকেল তেল, জলপাই তেল, তিলের তেল মিশিয়ে হালকা গরম করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুল খুশকিমুক্ত করতে সপ্তাহে দুদিন অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

 

ত্বকের ভিন্নতা অনুযায়ী যত্ন-

ত্বক বিশেষজ্ঞ শাহীনা আফরিন মৌসুমী জানিয়েছেন এ সময় ত্বকের ধরন অনুযায়ী শুষ্ক, তৈলাক্ত ও স্বাভাবিক ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায় :

 

১. শুষ্ক ত্বকে-

শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা চার-পাঁচটি কাঠবাদাম ২ ঘণ্টা দুধে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর কাঠবাদাম বেটে ডিমের কুসুমের সঙ্গে মিশিয়ে মুুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। মরা কোষ উঠে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং ত্বক নরম থাকবে।

 

২. তৈলাক্ত ত্বকে-

বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় ময়েশ্চার ব্যালান্স না হওয়ায় শীতে তৈলাক্ত ত্বকও শুষ্ক হয়। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা ময়েশ্চার ব্যালান্স করতে একটি ডিমের সাদা অংশ, এক চা-চামচ গ্লিসারিন, এক চিমটি কর্পূর ও পরিমাণমতো মুলতানি মাটি মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন-চার দিন ব্যবহারে ত্বকের মরা কোষ উঠে ত্বক উজ্জ্বল হবে। প্যাকটিতে থাকা কর্পূর ত্বকে ময়েশ্চার ধরে রাখবে। ফলে ত্বক থাকবে কোমল।

 

৩. স্বাভাবিক ত্বকে-

স্বাভাবিক ত্বকের অধিকারীরা মুলা কুচি করে রস বের করে সেই রসে মুগডাল ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর মুগডাল পেস্ট করে তার সঙ্গে এক চা-চামচ মধু এবং এক চা-চামচ টকদই মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করুন। প্যাকটি স্বাভাবিক ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বক কোমল রাখবে।

 

মেনে চলুন-

  • শীত ত্বক সতেজ ও সুস্থ রাখতে বেশি বেশি মৌসুমি শাকসবজি, ফলমূল ও পানি খেতে চেষ্টা করুন।
  • ত্বক পরিষ্কার রাখুন এবং সারাদিনে কমপক্ষে ছয়-সাতবার স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
  • মাসে অন্তত একবার ফেসিয়াল করুন।

 

 

 

সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়

ছবিঃ সংগৃহীত