ত্বকের ধরন অনুযায়ী মেকআপ তোলার নিয়ম
যতই ক্লান্তি থাকুক না কেন, মেকআপ তুলে ঘুমাতে যা।ওয়া উচিত। মেকআপ করতে অনেকেই ভালোবাসেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেকআপ করতেও ক্লান্ত হন না। কিন্তু তোলার সময় ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু’ মনে চলে এলেই তৈরি হয়ে যাবে সমস্যা। মেকআপ ভারী হোক বা হালকা, ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে মেকআপ তোলাটা আবশ্যক। ত্বকের ধরন অনুযায়ী মেকআপ তোলার নিয়মেও রয়েছে ভিন্নতা।
ত্বক বুঝে মেকআপ রিমুভার-
যাদের ত্বক শুষ্ক, নারকেল তেলের চেয়ে ভালো মেকআপ রিমুভার আর কিছু নেই বলে মনে করেন প্রিভে স্যালন অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী নাহিলা হিদায়াত। যাদের ত্বক তৈলাক্ত ও ব্রণ হওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে জেল বা ক্রিম-জাতীয় মেকআপ রিমুভার বা মেকআপ রিমুভিং ওয়াইপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। বাজারে তেল-জাতীয় বাম পাওয়া যায়। মেকআপের প্রায় সবটুকু তুলতে সাহায্য করে এগুলো। শুষ্ক ত্বকে মেকআপ রিমুভার হিসেবেও বেশ ভালো কাজ করে।
ত্বকের সংবেদনশীল অংশের মেকআপ তুলতে-
ঠোঁট ও চোখের অংশের ত্বক সংবেদনশীল হওয়ায় সেই অংশে মেকআপ তোলার সময় অতিরিক্ত ঘষাঘষি বা টানাটানি না করাই ভালো বলে জানালেন গালা মেকওভার স্টুডিও অ্যান্ড স্যালনের স্বত্বাধিকারী নাভিন আহমেদ। তাঁর মতে, তুলায় অল্প একটু ক্লিঞ্জার নিয়ে চোখের পাতা পা-ঠোঁটে কিছু সময়ের জন্য ধরে রাখলেই মেকআপ তুলে ফেলা সম্ভব। এখন বাজারে চোখের জন্য বিশেষ ধরনের মেকআপ রিমুভার পাওয়া যায়। এ ছাড়া চোখ ও ঠোঁটের মতো সংবেদনশীল অংশের মেকআপ তোলার ক্ষেত্রেও নারকেল তেল বেশ কার্যকরী। ঠোঁটের মেকআপ পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে তুললে যেকোনো লিপস্টিক এমনকি ম্যাট লিপস্টিকও যেমন সহজে তোলা যায়, তেমনি ঠোঁটের আর্দ্রতাও ঠিক বজায় থাকে।
স্বাভাবিক, কুসুম গরম নাকি ঠান্ডা পানি
ত্বক মাত্রাতিরিক্ত শুষ্ক থাকলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়া এড়িয়ে চলাই ভালো বলে মনে করেন নাহিলা হিদায়াত। কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে শুষ্ক ত্বকের টান টান ভাবটা থাকে না। যদি লোমকূপ বড় হয়ে যায়, ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে লোমকূপগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। এ ছাড়া পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পর না মুছে সেভাবেই রেখে দিলে ত্বক নমনীয় থাকে। অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহারেও ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়।
ভুল কিছু পদ্ধতি-
মেকআপ তোলায় সরাসরি সাবান বা সাবান-জাতীয় ক্লিঞ্জার দিয়ে মুখ না ধোওয়াই ভালো। টোনার দিয়েও মেকআপ তোলা একেবারেই উচিত নয়। মেকআপ রিমুভার দিয়ে ঘষাঘষি করে মেকআপ তোলা উচিত নয়। কটন প্যাড বা কটন বলে মেকআপ রিমুভার লাগিয়ে আলতো করে তুলে নিলেই যথেষ্ট। বডি লোশন দিয়েও অনেকে মেকআপ তুলে থাকেন, যা ত্বকে জ্বালাপোড়া ভাবের কারণ হতে পারে।
তৈলাক্ত ত্বকে তেল দিয়ে মেকআপ একেবারেই তোলা উচিত নয়। এতে লোমকূপে তেল জমে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুষ্ক ত্বকে জেল-জাতীয় কোনো পণ্য ব্যবহার না কারাটাই শ্রেয়।
কোন মাধ্যমে যাবেন-
মেকআপ রিমুভিং ওয়াইপ দিয়ে মেকআপ তোলা সবচেয়ে সহজ। তেল ব্যবহার করলে কটন প্যাড ব্যবহার করুন। জেল বা ক্রিম-জাতীয় মেকআপ রিমুভার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কটন বল দিয়ে মুছে নিলে ভালো। কারণ কটন বল ত্বকের জন্য বেশ নমনীয়। এ ছাড়া বাজারে কিছু ময়েশ্চারাইজড মেকআপ ওয়াইপ পাওয়া যায়, যা অত্যন্ত কার্যকরী।
যা করবেন-
- চোখের চারপাশের অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করুন।
- মেকআপ রিমুভার ব্যবহারের পর অবশ্যই মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
- সঠিকভাবে মেকআপ তোলার পর অবশ্যই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- মেকআপ রিমুভার ব্যবহারের পর জ্বালাপোড়া বা চুলকানি ভাব হলে তৎক্ষণাৎ তা ব্যবহার পরিহার করুন।
- মেকআপ রিমুভার দিয়ে মেকআপ তুলে, মুখ ক্লিঞ্জার দিয়ে ধোয়ার পর টোনার, ময়েশ্চারাইজার ও আই ক্রিম ব্যবহার করুন।
- ত্বকের ধরন বুঝে মেকআপ রিমুভার বাছাই করতে হবে।
যা করবেন না-
- চোখের চারপাশে বেশি ঘষাঘষি করবেন না।
- চোখে আলগা পাপড়ি ওঠানোর পরও যদি আঠা লেগে থাকে, কটন প্যাডে ক্লিঞ্জার ভিজিয়ে কিছুক্ষণ সে জায়গায় ধরে রাখুন।
- মেকআপ রিমুভার শুধু আপনার মেকআপ তোলার কাজে ব্যবহার করা যাবে।
- সাবান, স্ক্রাব, টোনার বা ফেসওয়াশ দিয়ে কখনোই সরাসরি মেকআপ তুলবেন না।
- তাড়াহুড়ো না করে ধীরস্থিরভাবে মেকআপ তুলুন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
ছবিঃ দৈনিক প্রথম আলো ও সংগৃহীত