শরতের সাজ কেমন হবে ?
মৃদু বায়ু বয়, আকাশ বাতাস ধায়। এলোমেলো সে তাল, শুভ্র সাদার কাশবন মাতাল। এমন দিনে আপনিও নন সে তালের বাইরে। নিজেকে ফুটিয়ে তুলুন প্রাকৃতিক সে সৌন্দর্যে। সঙ্গী হোক মোলায়েম রঙের সুতি পোশাক আর সাদামাটা একটি সাজ।
এ সময়ে আলাদা করে মেকআপের কথা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। উড়ে আসা ধুলোয় ঘাম আর তেলতেলে ত্বকে সাদামাটা সাজের মেকআপই বা কেমন হতে পারে? জবাব হলো, মেকআপ হবে হালকা কিছু টাচআপে। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ত্বক ফেসওয়াশ বা ফোমিং ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুখ মুছে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম লাগিয়ে নিন। এবার চার থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন যাতে ত্বকের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায়। এবার পুরো মুখে ফেস পাউডার বা মিনারেল পাউডার দিন। মুখের সঙ্গে যেন ভালোভাবে পাউডারটি মিশে যায়। তারপর পানিরোধী বা ওয়াটারপ্র“ফ লাইনার বা কাজল দিয়ে চোখে আর্ট করুন। এবার মাশকারা দিলেই হলো। এই গরমে চোখে শ্যাডো ব্যবহার না করাই ভালো। গালে হালকা ব্লাশন দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে গোলাপি, কমলা, বাদামি এসবের হালকা শেড ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতের পার্টিতে একটু ভারি মেকআপ না হলেই নয়। সেখানে আপনি পোশাকটা উজ্জ্বল রঙের বেছে নিন। সাজের বাড়তি চমক আনতে পারেন চোখে বা ঠোঁটের সাজে। সাজের বেজ দিনের মতো হালকাই রাখুন। স্টিক ফাউন্ডেশন বা প্যানস্টিক দিয়েও বেজ করতে পারেন। চোখে এবার যোগ করুন মানানসই শ্যাডো। গরমে যেন শ্যাডো গলে না পড়ে সেজন্য তা পানিরোধী হওয়াই ভালো। গরমে লিপস্টিক হতে হবে ম্যাট। তাতে হালকা লাগিয়ে আবার লিপস্টিক দিন। তাহলে দীর্ঘসময় ঠিক থাকবে লিপস্টিক। সব মিলিয়ে এ যেন অন্য এক আপনি। খুব সাদামাটা সাজেও আপনি হয়ে উঠবেন অনন্য।
এই সময়ে বেছে নিতে হবে সবচেয়ে স্নিগ্ধ রঙের পোশাকটি। পার্টিতে যেতে হলে সাদামাটা সুতি শাড়ি মানানসই। মসলিন শাড়িও পরতে পারেন। আর জামদানি তো সব সময়ই উপযোগী। এণ্ডি শাড়িও বেছে নিতে পারেন অবাধে। তবে পোশাকের ক্ষেত্রে কালো রং এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ কালো কাপড়ে গরম ধরে বেশি। তা ছাড়া এখনো কিন্তু রোদের তীব্রতা অনেক বেশি আছে। যার ফলে এই রঙের পোশাক পরলে গরম বেশি লাগবে। যতটা সম্ভব হালকা রং যেমন পিংক, পার্পেল, আকাশি, হালকা সবুজ, হালকা অরেঞ্জ, ইয়েলো, ফিরোজা এ ধরনের রং বেছে নিতে পারেন। হালকা আর পরিপাটি সাজে এ রংগুলো চমৎকার মানিয়ে যাবে। মূল বিষয় হলো, এই সময়ের পোশাক হওয়া চাই গরম ও শীতের মাঝামাঝি। আর সাজটাও তারই সঙ্গে মানিয়ে। পোশাকের ফেব্রিক নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে। তবে স্টাইলটাও থাকা চাই। আরামের জন্য শাড়ির পাশাপাশি কামিজ, কুর্তি, টপস পরতে পারেন। ফেব্রিক হিসেবে অবশ্যই চায়না কটন, কটন জামদানি, শিপন, তাঁত, খাদি কাপড় হতে হবে। সালোয়ারের জন্য ফাইন কটন, বেক্সি পপলিন কাপড় আরামদায়ক। এ সময়ে সুতি কাপড়ই শ্রেয়। জর্জেট, তাঁত, খাদি, জামদানি কাপড়গুলোও এ সময় আরামদায়ক।
এই সময়ে স্টাইল ধরে রাখতে একরঙা সুতি, কোটা কিংবা তাঁতের শাড়ির সঙ্গে পরতে পারেন চেক, লেস বসানো অথবা প্রিন্টের ব্লাউজ আর যদি গরমে হালকা শাড়িটাকে পার্টি উপযোগী করতে চান তবে জরির কাজের চিকন অথবা চওড়া পাড় বসিয়ে নিতে পারেন। সুতির বাইরেও জর্জেট, সিল্ক, নেট কাপড়ের লং কামিজ, টপস, স্কার্ট, গাউন ধাঁচের পোশাক এ সময় বেশ ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক।
জিন্স টি-শার্টের সঙ্গে নেট জ্যাকেট, টপসের সঙ্গে কটি কিংবা স্কার্ফ, পোশাকের ওপর বাটারফ্লাই পঞ্চ কিংবা সুপার ড্রেসগুলো এ সময় আপনাকে করে তুলবে স্টাইলিশ। টি-শার্ট কিংবা টপসের সঙ্গে লেগিংস, জেগিংস, গ্যাবার্ডিন আরামদায়ক হবে। তরুণীদের ব্লু ন্যারো ফিট ডেনিমের সঙ্গে জর্জেটের প্রিন্টের স্কার্ফ নিয়ে আসবে দারুণ স্টাইলিশ লুক। অফিসে শাড়ি পরতে চাইলে এ সময় অনায়াসে বেছে নিতে পারেন সিল্ক, তসর, কটন, অ্যান্ডি কটনজাতীয় শাড়ি। রঙের ক্ষেত্রে বেছে নিন লাল, মেরুন, সবুজ, বেগুনি, নীলসহ বিভিন্ন রং। একঘেয়েমি দুর করতে পরতে পারেন চাপা সাদা, হালকা গোলাপি, ঘিয়া, আকাশি রংগুলো। এই ধরনের সাজগোজের অনুষঙ্গও কিন্তু বড় একটি জায়গা দখল করে আছে। তাই পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে সাদামাটা অনুষঙ্গ হওয়া জরুরি। খুব বেশি জড়োয়া হলে ভালো লাগবে না। আবার মিসিং ট্রেন্ডও অনুসরণ করতে পারেন। যেমন ধরুন কানে পরে গলা ফাঁকা রাখলেন, কিম্বা গলায় পরলে কানে কিছু না পরলেই ভালো। আবার দেখা গেল হাতে কিছু পরলেন তাহলে আর আংটি পরাটা জরুরি নয়। এভাবেও পেতে পারেন সাদামাটা সৌন্দর্য। সবমিলে আপনি হয়ে উঠুন অনন্য।
সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন