কিভাবে দাম্পত্য জীবনে সুখী হবেন ?
একটি পরিবার মানে একটি প্রতিষ্ঠান। সে প্রতিষ্ঠানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রভাবিত করে চারপাশের পরিবেশকে। আপনজনরাও তার সৌন্দর্য উপভোগ করে। একটি দাম্পত্যকে তুলনা করা চলে ফুলের বাগানের সঙ্গেও। সেখানে যদি সুরভিত রঙিন ফুল ফোটে তবে তার সুবাস ছড়াবে চারদিকে। সে সুবাসে নিজেরা যেমন আদরনীয় হয় তেমনি চারপাশকেও সুখী করে তোলে। তাই সুখী সুন্দর দাম্পত্য সবারই কাম্য।
কথায় বলে- বিয়ের পর বন্দী জীবন। সত্যিই কি বিয়ের পর নারী-পুরুষের মন বন্দীদশায় কাটে? তাদের মন বিষিয়ে ওঠে সংসারের চাপে? কিন্তু কেন? মিলনের সুখে বিভোর হতেই তো একে অপরের দুহাতে ভরসা রাখে। একার জীবনের হাসি কান্না, বিপদ আপদ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গী পেতেই তো এই জীবনে পদার্পণ করে। তা ছাড়া একজন মানুষের জীবনের পরিপূর্ণতা ঘটাতেও তো বিয়ে ব্যতীত অন্য কোনো বিকল্প নেই। দায়িত্ব নিতে শেখা, সন্তান জন্মদান এমনকি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একটি আপনালয় গড়তেই তো বৈবাহিক জীবনে জড়ানো। জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ যে অধ্যায়, সেটি দুঃখে কাটুক তা কারও পক্ষে চাওয়ার হতে পারে না। অথচ বাস্তবতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিন্ন। কিছু কিছু ভুল, কিছু আপস করতে না পারা, কিছু আকাক্সক্ষা মানুষকে একটি অশান্তিতে ডুবিয়ে দেয়। দাম্পত্য জীবনের অশান্তি শুধু স্বামী-স্ত্রী নয়, উভয়ের পরিবারের সুখ নষ্ট করতে যথেষ্ট। আর সে কারণেই সুখী দাম্পত্য নিয়ে চুল চেরা গবেষণার শেষ নেই। সুখী হওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা বের করেন নানা কলা-কৌশল।
গবেষণা অনুযায়ী, আপনি যদি অসাধারণ কাউকে পেতে চান, তাহলে আপনার জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে যুক্তি হলো-টাকা-পয়সা, সৌন্দর্য বিবাহিত জীবনকে সাময়িক সুখী করলেও একটি নির্দিষ্ট সময় পর তা যন্ত্রণা দেয়। তাই একটি ভালোবাসাময় সুখী বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সবার মধ্যে কিছু গুণ থাকা প্রয়োজন। প্রথমত হলো-আন্তরিকতা, বিনয়, নমনীয়, বিশ্বাসযোগ্যতা, আস্থাভাজন, সহযোগী মনোভাবাপন্ন, ক্ষমাশীল, উদার ও ধৈর্যশীল হওয়া।
ভালোবাসা এমন এক বন্ধন যা একজন নারী ও পুরুষের মাঝে হৃদয়ের অটুট বন্ধন তৈরি করে। ভালোবাসা ব্যতীত কোনো সাংসারিক কিংবা দাম্পত্য জীবন সুখের হয় না। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। একজন সুন্দর মনের ও সুন্দর গুণের স্ত্রী সংসারকে তার নিজের আলোয় আলোকিত করে তুলতে পারেন। সাজিয়ে তুলতে পারেন সংসার জীবনকে সুখের স্বর্গীয় বাগানের মতো করে। তবে এই কাজের জন্য দরকার স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ঐকান্তিক মায়া-মমতা ও সুগভীর ভালোবাসা। এই ভালোবাসা থাকলে দেখবেন, বিবাহিত জীবনে সুখের বাগান।
সুখী দাম্পত্য জীবন সবাই চায়। কিন্তু চাইলেই তো আর জীবনে সুখ পাওয়া যায় না। সুখী দাম্পত্য জীবন পেতে গেলে তার কতগুলো শর্ত মেনে চলতে হয়। যে শর্তগুলো আপনার দাম্পত্য জীবনকে অনেক সুখী...
রাগ নিয়ে ঘুম নয়-
দৈনন্দিন কত বিষয় নিয়ে তো মাথা গরম হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে এক মুখ রাগ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন? রাগ পুষে রেখে তার কাছে হার মানবে আপনাদের সম্পর্ক? কখনো নয়, তাই বিছানায় যাওয়ার আগেই নিজের রাগকে থিতু করে নিন।
একে অপরকে চিনুন-
বিয়ের ক্ষেত্রে একে ওপরকে চেনাটা খুবই জরুরি। মতানৈক্য হতেই পারে। কিন্তু তার জেরে যদি সম্পর্কটিই শূন্য হয়ে যায় তবে লাভ কী? হয়তো পরে মাথা ঠাণ্ডা হলে নিজের রাগে নিজেই লজ্জিত হচ্ছেন। তাই হুটহাট রাগ না করে অপরকে বুঝিয়ে বলুন, দেখবেন ঝামেলা মিটে যাবে।
ক্ষমা করতে শিখুন-
ভুল মানুষ মাত্রই হয়ে থাকে। তবে সেই ভুলটাকে ধরে বসে থাকবেন না। মাথা ঠান্ডা করে স্বামী অথবা স্ত্রীকে ভুলটা ধরিয়ে দিন। তারপর তাকে ক্ষমা করে দিন। পরে এই ভুল নিয়ে আর কখনওই কোনও কথা বলবেন না। ভুলের কথা সম্পূর্ণভাবে ভুলে যান।
চুপ থাকতে শিখুন-
চুপ করে থাকা একটা বড় গুণ। বিবাহিত জীবনে এই গুণের উপকারিতা অপরিসীম। তাই একজন বেশি কথা বললে নিজে একটু চুপ করে থেকেই দেখুন না কি হয়!
একে অপরকে সম্মান দিন-
বিয়ের আগে বাড়ির লোকের সঙ্গে রাগ দেখিয়েছেন বলে বিয়ের পরেও সেটা করবেন তা কিন্তু ঠিক নয়। ধীরে ধীরে স্বভাবে পরিবর্তন আনুন। সম্মান দিন একে অপরকে।
অফিসের কাজ কখনই বাড়িতে নয়-
অফিসের কাজ কখনই বাড়িতে করবেন না। অফিসের যাবতীয় চিন্তা ভাবনা ফেলে আসবেন অফিসের মধ্যেই। তাকে সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে এসে নিজের কাছের মানুষের ওপর রোজ ওই রাগ দেখালে আর দাম্পত্য জীবন টিকবে না।
সবসময় বন্ধুত্ব রাখুন-
বিয়ে করেই ট্রিপিক্যাল স্বামী-স্ত্রীতে পরিণত হয়ে যাবেন না। দেখবেন দুজনের মধ্যে যেন বন্ধুত্বটি বর্তমান থাকে। বন্ধুত্ব থাকলেই আর কোনো অসুবিধা হবে না।
দায়িত্ব নিতে শিখুন-
বিয়ে করেছেন ঘরে মাকে সাহায্য করার জন্য, বউ এনে দিয়েছেন বলেই সব দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলবেন না। অফিসে কাজের দোহাই দিয়ে ইলেকট্রিকের বিল বা ব্যাংকের কাজ এড়িয়ে তা কখনই বউয়ের ওপর চাপিয়ে দেবেন না।
সারপ্রাইজ দিন-
বিয়ের বহু বছর পরেও যাতে প্রেম আপনাদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে না পারে। সেজন্য একে ওপরকে সারপ্রাইজ দিন। দেখবেন এই সারপ্রাইজের মাধ্যমেই আপনাদের মধ্যকার প্রেম নতুনভাবে জেগে উঠবে।
সুখী দাম্পত্য জীবন পেতে অনেক আগে থেকেই কিছু অভ্যাস প্রচলিত রয়েছে। ছোটখাটো কিছু অভ্যাস হয়তো বদলে দেবে আপনাদের সম্পর্কের ধরন। একটি সরল রেখায় হয়তো বয়ে চলবে দাম্পত্য। সেজন্য অভ্যাস রাখুন-
শ্রদ্ধা-
শ্রদ্ধাবোধ প্রত্যেক ভালো দাম্পত্য জীবনের একটি সু-অভ্যাস, সুখী দাম্পত্য জীবন এটার অংশ। তবে শুধু এই নয় যে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে, নিজের প্রতিও থাকতে হবে।
সঙ্গ দেওয়া-
স্বামী-স্ত্রীর একে অপরকে সঙ্গ দেওয়ার উপকারিতা অনেক। সঙ্গ একজন আরেকজনের প্রতি মনোসংযোগ এবং নির্ভরশীলতা বাড়ায়। কিন্তু মানসিক সমর্থনের অভাবে ধীরে ধীরে সঙ্গীর ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এর ফলে সম্পর্কে অবনতি হবে।
ভালো মুহূর্ত উপভোগ-
একে অন্যের প্রাপ্তি স্বীকারের জন্য ভালো মুহূর্তগুলো উদযাপন করুন। দীর্ঘ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ুন। এর ফলে হ্যাপি হরমোন নিঃসরণ হয়ে চাপ কমবে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ-
সফল এবং সুখী দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি সঙ্গীকে সাদরে গ্রহণ করা। তাই যে কোনো ভালো কাজের জন্য একে অন্যকে ধন্যবাদ বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা সঙ্গীদের ধন্যবাদ জানান, তার কাজের প্রশংসা করেন, তাদের দাম্পত্য জীবন অনেক স্বস্তির-আনন্দময়।
মনে রাখা প্রয়োজন, মানুষের দেহের সত্তর শতাংশ রোগই মনোদৈহিক। অর্থাৎ দেহে যত রোগের উৎপাত ঘটে তার বেশির ভাগই মন খারাপের কারণে হয়। তাই নিজের সুস্থ থাকার জন্যও সবসময় সুখী থাকার চেষ্টা করতে হবে। তা ছাড়া আমাদের জীবনের একটি বৃহত্তম অধ্যায় হলো বৈবাহিক জীবন। তাই সে জীবনে সুখী হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। উপরন্তু একটি সুখী দাম্পত্য মানে হলো একটি সুরভিত ফুলের বাগান, যা আশপাশকেও সুখী রাখে। হতে পারেন অপরের অনুকরণীয়।
সূত্রঃ দৈনিক বিডি প্রতিদিন