গয়নার ট্রেন্ড
সাজ-পোশাকের প্রধান অনুষঙ্গ গয়না। বছরজুড়েই গয়না ট্রেন্ড নিয়ে চলে নিরীক্ষা। বিশেষ করে গলার গয়নায় পরিবর্তনটা দেখা যায় বেশি। কখনো জাঙ্ক জুয়েলারি তো কখনো গলায় লেগে থাকে সিম্পল লকেট।
বাঙালির শীত মানেই উৎসব। ঋতুজুড়েই চলবে স্বজনদের বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান আর এ সময়ে সাজটাও জমে বেশ। তবে সব অনুষ্ঠানেই তো আর ভারী সাজপোশাকে যাওয়া যায় না। রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, অস্বীকার করা যাবে না যে একটা সময় ছিল, যখন কেবল কিছু শ্রেণির মানুষই ফ্যাশনসচেতন ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে চিত্রটা বদলেছে। এখন ফ্যাশন বলতে অত্যন্ত স্মার্ট একটা মেকওভার। জামা-কাপড়ের লুক চেঞ্জের সঙ্গে সঙ্গে গহনার ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে নতুন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। মূলত এখন ধাতব, মাটি, কাট, পুঁতি, কাপড়সহ সব ধরনের গহনাই চলছে। শুধু বয়স ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই গহনাটা বেছে নিলেই হলো।
বিবিআনার স্বত্বাধিকারী লিপি খন্দকার বলেন, আমরা সাধরণত সুতা, পুঁতি, কাপড় দিয়ে গহনা তৈরি করে থাকি; যা যে কোনো উৎসবে কালারফুল আউটফিটের সঙ্গে মানাসই। শাড়ি তো বটেই, হালফ্যাশনের টপস, ফতুয়া, জিন্স, ক্যাপ্রি, টিউনিক, শার্ট কিংবা স্কার্ট এসব পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে বিভিন্ন আকার, মোটিফ আর বিভিন্ন উপাদানের তৈরি গহনা পরা যেতে পারে। এসবের সঙ্গে হাতে পরা যায় অনেক কালারফুল বালা। একটি বা দুটি পাতলা ব্রেসলেটও মন্দ নয়। মোট কথা, নিজের পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো ধরনের গহনাই পরে ফেলতে পারেন। ইদানীং বড় গহনার চলটা আবার এসেছে। আর জাংক জুয়েলারির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো বড় আর নজরকাড়া আকার। আফরোজ পারভীন বলেন, একটু যারা বয়োজ্যেষ্ঠ তারা মুক্তার গহনা বেছে নিতে পারেন।
একরঙা সিল্ক বা শিফন শাড়ির সঙ্গে যেমন মানানসই, তেমনি ভারী কাজ করা বেনারসি বা কাতান শাড়ির সঙ্গেও। শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্ট করে দু-তিন লেয়ারের মুক্তার মালা পরা যায় গলায়। তাতেই বেশ অভিজাত্য ফুটে উঠবে। স্টাইলে নতুনত্ব আনতে এখন অনেকেই রুপার গহনা ব্যবহার করছে। রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন নিজে রুপার গহনা পরতে পছন্দ করেন। তার মতে, এ গহনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে যে কোনো পোশাকের সঙ্গেই তা ব্যবহার করা যায়।
তবে কোন পোশাকের সঙ্গে কোন গহনা ব্যবহার করবেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লাল, কালো ও সাদা রঙের পোশাকের সঙ্গেই রুপা সবচেয়ে ভালো মানায়। জমকালো সালোয়ার-কামিজ ও ফতুয়ার সঙ্গেও রুপার বড় দুল বেশ মানানসই। অবশ্য তরুণীরা রেজিনের গহনাও পছন্দ করছে। রেজিনের লকেট মানাবে কর্ড বা পুঁতির মালার সঙ্গেও। আর রেজিনের কাজগুলো এত নজরকাড়া হয়, একটা নেকপিসেই বাজিমাত। অনেকেই গলাজুড়ে ভরাট নকশার চোকার পড়তে পছন্দ করছে। তা ছাড়া গহনার নকশায় নানা রঙের কুন্দন আর পাথরের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়।
কোথায় পাবেন গহনা :
গোল্ড প্লেটেড, ডায়মন্ড কাট, রুবি পান্নার ও কুন্দনের কাজ করা গহনা পাওয়া যাবে ঢাকার পিঙ্ক সিটি, বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চকে। এসব সেটের দাম পড়বে ১ হাজার ২০০ থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত। আড়ংয়ে সোনা ও রুপার গহনা ছাড়াও মিলবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যেই কাঠের তৈরি নানা নকশার গহনা। কাঠের সঙ্গে পাটের আঁশ, কড়ি অথবা রুদ্রাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। সুতার গহনাও রয়েছে।
দেশীয় অন্য ফ্যাশন হাউসগুলোয় যেমন রঙ বাংলাদেশ, বিশ্বরঙ, মাদুলি, পিরান, বিবিয়ানা, কে-ক্র্যাফটে পুঁতির ও মেটাল এবং বিডসের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণের মিশেলে বিভিন্ন গহনা তৈরি করে থাকে। দাম ২০০ থেকে শুরু। রুপা বা দামি মেটালের হলে দাম পড়বে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজারের মধ্যে। রুপার ওপর মিনা করা, কুন্দন বা পাথরের কাজ কিংবা অক্সি করা মনের মতো গহনা অনলাইনেও পাবেন। তৈরি গহনা কেনার পাশাপাশি অর্ডার দিতে পারবেন। তবে সোনা কিংবা রুপার গহনায় সোনার প্রলেপ যাই হোক না কেন, অন্তত মাসখানেক সময় হাতে রেখে তৈরি করতে দিতে হবে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে, চারুকলার পাশেও পসরা বসে পুঁতির গহনার।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়