শাড়ীর যত্ন
‘নীল জামদানিতে কেমন লাগছে, বল তো?’
শাড়িটা পরে আয়নায় দাঁড়িয়ে ভাবছেন কথাটা জিজ্ঞেস করবেন সঙ্গীকে। কিন্তু হায়, হঠাৎই চোখে পড়ল শাড়িটা ভাঁজে ভাঁজে কেটে গেছে। অনেক দিন আলমারি খুলে বের করে পরা হয়নি শাড়িটা। সুন্দর করেই তো ভাঁজ করে রাখা ছিল। তবু কেন এমন হলো? জানুন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে।
আমাদের দেশীয় ও ঐতিহ্যবাহী শাড়িগুলোর যত্ন নিতে হয় বিশেষভাবে। তবে একেক ধরনের শাড়ির যত্ন নিতে হবে একেকভাবে। দেখা যায় ভালো ও দামি শাড়িগুলো কোনো উপলক্ষ ধরেই পরা হয়। নয়তো ওঠানো থাকে আলমারির এক কোণে। তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর শাড়ির যত্ন নিলে বছরের পর বছর নতুন রাখা যায়। এমনকি শাড়ির ভাঁজের ওপরও নির্ভর করে এর সৌন্দর্য। দেশীয় শাড়ির যত্ন সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সুতি শাড়ি ধোয়ার পর মাড় দিয়ে ইস্তিরি করে নিন সুতি, তাঁত ও টাঙ্গাইলের শাড়ি-
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্র পরিচ্ছদ বিভাগের প্রধান সোনিয়া বেগম জানান, সুতি শাড়ি চাইলে ঘরেই পরিষ্কার করা যায়। ঠান্ডা কিংবা হালকা গরম পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে তাতে আধা ঘণ্টা শাড়ি ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। তবে তিনি বললেন, রঙিন শাড়িতে গরম পানি না ব্যবহার করাই ভালো। তাতে শাড়ির উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সুতি শাড়ি ধোয়ার পর মাড় দিতে হবে, ইস্তিরি করে নিতে হবে। তাঁত ও টাঙ্গাইলের শাড়ি ড্রাইওয়াশ করা উত্তম বলে জানালেন ব্যান্ড বক্সের বিপণন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এ ছাড়া লন্ড্রিতে সাধারণ সুতি শাড়ি দিলে তা লন্ড্রি ওয়াশ করা হয় বলে তিনি জানান। মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আরও জানান, তাঁত, টাঙ্গাইল বা সুতি ধরনের শাড়িগুলো সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
জামদানি-
জামদানি শাড়ি অবশ্যই লন্ড্রিতে দিতে হয়। কাটা ওয়াশ পদ্ধতিতে জামদানি শাড়ি পরিষ্কার করা হয়। জামদানি শাড়ি ভাঁজ করে না রেখে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে বললেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। নইলে ভাঁজ করে রাখা জামদানি শাড়ি ভাঁজে ভাঁজে কেটে যায়। ঝুলিয়ে রাখলে তাতে বাতাসের চলাচল হয় বলে শাড়ি ভালো থাকে। জামদানি শাড়ি রোদে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
কাতান, বেনারসি-
কাতান ও বেনারসি শাড়ি পরিষ্কার করা হয় ক্যালেন্ডার ওয়াশ পদ্ধতিতে। যে দোকান থেকে কাতান বা বেনারসি শাড়ি কিনবেন, সেই দোকানেই চাইলে পরিষ্কার করতে দিতে পারেন। মানিক বেনারসির চেয়ারম্যান সাফায়াত আলী তরফদার বললেন, ‘কাতান-বেনারসি শাড়িগুলো হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। ভাঁজ করে রাখা যাবে না। তবে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলেও মাঝে একটা ভাঁজ পড়ে। সেটা কিছুদিন পরপর পাল্টে দিতে হবে। একই ভাঁজে রাখা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, এসব শাড়ি কখনোই রোদে দেওয়া যাবে না। রোদে দিলে শাড়ির উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে।
সিল্ক শাড়ি-
রেশমি বা সিল্কের শাড়ি একটু সাবধানেই ব্যবহার করতে হয় বলে জানান পুরা সিল্কের জ্যেষ্ঠ বিক্রেতা মো. সেলিম রেজা। তিনি পরামর্শ দেন রেশমি শাড়ি ড্রাইওয়াশ করতে। এসব শাড়ি ভাঁজ না করে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
ছবিঃ সংগৃহীত