কটির ফ্যাশন চলছে এখন !
ফ্যাশনসচেতন তরুণীরা। শীত তো বটেই, গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ অন্যান্য ঋতুতেও বিভিন্ন কাট ও ডিজাইনের কটি পরছেন। নিত্যদিন পরার জন্য হালকা ডিজাইনের কটির পাশাপাশি একটু জমকালো পার্টি কিংবা বিয়েতে বেছে নিচ্ছেন ভারী কাজের কটি। ফরমাল, ক্যাজুয়াল, পাঞ্জাবি, শার্ট, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ অথবা ওয়েস্টার্ন যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায় কটি। ঝটপট গর্জিয়াস সাজের জন্য জিন্স, টপস কিংবা শার্টের সঙ্গেও কটি চাপিয়ে নেওয়া যায়। কিছুদিন আগেও এক রঙের কটির চল ছিল সবচেয়ে বেশি। তাতে ছিল না নকশার বাহুল্য। এখন চলছে বিভিন্ন রং আর নকশার কটি। কাপড় ও কাটছাঁটেও এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। লং কামিজের প্যাটার্নে সালোয়ার-কামিজে বৈচিত্র্য এনেছে কটি। একটু আলাদা ডিজাইন আর ছাঁটের ভিন্নতায় এসব কটি-কামিজ প্রচলিত ধারায় এনেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। কামিজের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায় লং বা শর্ট হাতার কটি। কটি একটি বাড়তি পোশাক। কামিজে জোড়া কটি যেমন আছে, তেমনি আছে আলাদা ডিজাইনের কটি।
সব বয়সীর জন্যই নানা নকশার কটি থাকলেও টিনএজ মেয়েদের মধ্যে কটির ব্যবহার বেশি বলে জানালেন ডিজাইনাররা। সামনের দিকে কাটা ও টিউনিকের মতো ডিজাইন করা কটি বেশি পছন্দ তরুণীদের। ব্লক প্রিন্ট, জারদৌসি, জরির কাজ রয়েছে এসব কটির নকশায়। লেইস ও ব্রাশ পেইন্টের ব্যবহারও রয়েছে। তবে হাল সময়ে কটির নতুনত্ব হচ্ছে একের ভেতর দুই। অর্থাত্ দুই ভাবে পরা যায় এই কটি। সুবিধার কথা ভেবে কটির দুই দিকে দুই রং ব্যবহার করা হয়েছে। উল্টে নিলেই হয়ে যাবে আরেকটি ভিন্ন রঙের কটি। ডিজাইন কখনো নিচের অংশে গোল, কখনো তিনকোনা কাটের ছাঁট দেওয়া থাকে।
শাড়ির সঙ্গে পরার জন্যও রয়েছে আলাদা প্যাটার্ন আর ডিজাইনের কটি। ফাগুন ও বসন্তকে প্রাধান্য দিয়ে বডি ফিটেড সুতি কাপড়ের কটির ডিজাইন করেছেন ডিজাইনাররা। কাঠ ও মেটালের বোতামের পাশাপাশি আছে বোতামবিহীন কটি। কোনো কোনো কটির দুই পাশে দুই রকমের নকশা ব্যবহার করে ডিজাইনে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। ফ্লোরাল মোটিফের হালকা ও গাঢ় রঙের বডি ফিডেট হাইনেক ডিজাইনের কটি এনেছে ফ্যাশন হাউস লা রিভ। সঙ্গে আছে গরমে আরামের জন্য সুতি কাপড়ের তৈরি কটি। গলায় ও বাটন লাইনের দুই পাশে রয়েছে মেশিন এমব্রয়ডারির কাজ। যাদের সামনের দিকে কাটা কটি পরতে অপছন্দ, তারা বেছে নিতে পারেন বিশ্বরঙের বর্ণিল ডিজাইনের কটি। কালো কাপড়ের সালোয়ারের সঙ্গে বর্ণিল ডিজাইনের শট কটির পোশাক এনেছে হাউসটি। কটির ফিতায় থাকছে বৈচিত্র্যময় নকশা। বোতামের পাশাপাশি ফিতার ব্যবহারও কটিগুলোতে বৈচিত্র্য এনেছে। চাইলেও যেমন বেঁধে রাখতে পারবেন, তেমনি না বেঁধেও দুই পাশে ঝুলিয়ে রাখা যায়। সামনে কিংবা কোমরের দুই পাশে জিকজ্যাক স্টাইলে ফিতা বেঁধে পরার মতো কটিগুলোও বেশ স্টাইলিশ।
যাঁরা জিন্সের সঙ্গে কটি পরতে পছন্দ করেন, তাঁরা বেছে নিতে পারেন ফ্যাশন হাউস ইয়োলোর কটি। নতুন ডিজাইনের শর্ট ও সেমি লং ডিজাইনের কটি এনেছে হাউসটি। এগুলো জিন্সের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো মানাবে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মীরা। যাঁদের লং কটির সঙ্গে লম্বা হাতাওয়ালা কটি পছন্দ, তাঁদের জন্যও ভিন্ন ডিজাইনের কটি এনেছে ফ্যাশন হাউস টুয়েলভ। হাতার প্যার্টানেও রয়েছে বৈচিত্র্যময় কাজ।
শট, লং, সেমি লং এই তিন ধরনের কটির চল এখন বাজারে। কামিজ কাটের লং কটিগুলোতে ফুল স্লিভ, হাফ স্লিভ। অনেক কটির সামনে আবার শেরোয়ানি ধাঁচের কাট। কোনো কটিতে ব্যান কলার দিয়ে সামনে পুরোটা খোলা ফ্রক স্টাইলের কটিগুলোর কাটছাঁটেও রয়েছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। পেছনে লম্বা হয়ে এসে সামনে খাটো, কোনোটায় অনেক বেশি ঘের আবার কোনোটা ছিমছাম ফিশ কাটের। গলার ডিজাইনে বেশির ভাগ কটিতেই আছে বোতামের ব্যবহার।
কটিতে সিল্ক, বাটারফ্লাই, নেট, জর্জেট, শিফন, শাল কাপড় বেশি ব্যবহার করা হয়। বিশ্বরঙের ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘আগে কটির প্রধান বৈচিত্র্য ছিল মূলত বোতামে। এখনকার কটিতে বোতামের ব্যবহার নেই বললেই চলে। পরিবর্তে কটির দুই পাশে বেল্টে এবং নিচের দিকটার কাটে বৈচিত্র্য এসেছে। এতে কটির লুকেও অনেক পরিবর্তন এসেছে।’ কোন পোশাকের সঙ্গে কিভাবে কটি পরলে ভালো মানায়—জানতে চাইলে ডিজাইনার এমদাদ হক বলেন, ‘লং কটির সঙ্গে সব ধরনের পোশাকই মানিয়ে যায়। স্লিভলেস কামিজ, আনারকলি, ফ্লোর টাচ ফ্রক, গাউন টপস, টি-শার্টের সঙ্গে পরা যায় কটি। আবার শট কটি জিন্স, গ্যাবাডিন, লেগিংস, পালাজোর সঙ্গে মানাবে ভালো। কটি যদি প্রিন্টের হয় তাহলে কামিজ, টি-শার্ট কামিজ যেটাই পরুন না কেন সেটা এক রঙের হওয়া ভালো।’
কটি পরার আগে কোন ধরনের কটিতে আপনাকে ভালো মানায়, সেটা জেনে নেওয়া উচিত। যাঁরা লম্বা, তাঁরা ইচ্ছামতো কটি পরতে পারেন। যাঁদের উচ্চতা কম, তাঁরা স্লিম কাট কিংবা ফিশ কাটের কটি পরতে পারেন। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের ঢিলেঢালা কটিতে ভালো মানাবে। কটি কেনার সময় উজ্জ্বল রং বেছে নিন। এতে কামিজটি হাইলাইট হবে কিংবা কামিজের রং থেকে একেবারেই ভিন্ন একটি রঙের কটি বেছে নিন।
কোথায় পাবেন, কেমন দাম ?
সব ফ্যাশন হাউসে বিভিন্ন ডিজাইনের কটি পাওয়া যায়। ইয়েলো, আড়ং, লা রিভ, টুয়েলভ, কে ক্রাফট, এক্সট্যাসি, ইনফিনিটি, বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশসহ নামিদামি ফ্যাশন হাউসগুলোতে রয়েছে বর্ণিল কটির সম্ভার। দাম ডিজাইনভেদে ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ