নববধূর সাজ

নববধূর সাজ

নববধূ বা নতুন বউ শব্দটিতেই যেন লেগে আছে দারুণ মায়া। মুখজুড়েই যেন স্নিগ্ধতার ছায়া থাকে। বিয়ের পর নতুন বউ দেখতে আসা, নতুন বউকে বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়ানো, এমন আবহ চলতেই থাকে কিছুদিন। শাড়ি, গয়নায় নিজেকে সাজিয়ে রাখার পর্বটাও বেশ কয়েক দিন চলে। তবে ঘরোয়া পরিবেশের দাওয়াতে খুব জমকালোভাবে না সাজাই ভালো। নতুন বউয়ের সাজ কেমন হতে পারে, সেটা নিয়েই এই প্রতিবেদন।



নতুন বউ মানেই গয়না। গয়না ছাড়া যেন নতুন বউ ভাবাই যায় না। তাই বলে বিয়ের পর নতুন বউয়ের ভারী গয়নায় সেজে থাকা, সেটাও ঠিক ভালো লাগে না আজকাল। নতুন বউয়ের তিনটা দিক খেয়াল করে সাজা উচিত বলে জানালেন কনক দা জুয়েলারি প্যালেসের স্বত্বাধিকারী লায়লা খায়ের। ব্যক্তিত্ব, দেশীয় ঐতিহ্য, স্বস্তি—এসবকে প্রাধান্য দিয়েই সাজা উচিত। তাহলেই সবাইকে মানিয়ে যাবে সব পরিস্থিতিতে। বিয়ের পর নতুন নতুন শ্বশুরবাড়ির ঘরোয়া পরিবেশে হালকা গয়নাতেই ভালো লাগে। গলায় পরতে পারেন চিকন চোকার, দু-তিন লেয়ারের মুক্তার হার, পেনডেন্ট। হাতে পরতে পারেন কয়েক গাছি চুড়ি, নান্দনিক ডিজাইনের একখানা বালা। পরতে পারেন নাকে নথ, পায়ে নূপুর।



রাতের কোনো অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে হাতে থাকতে পারে নানা নকশার বালা, বাউটি, মুগ বালা, হাতভর্তি চুড়ি। নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী গলায় সরু হার, কানের ঝুমকো দুল পরতে পারেন। সোনার গয়নার পাশাপাশি গোল্ডপ্লেটেড এসব গয়না গড়িয়ে নিতে পারেন ইচ্ছেমতো পাথর, পুঁতি, কুন্দন, মুক্তা দিয়ে। মেটালের অক্সিডাইজড বা অ্যান্টিক পলিশের গয়নাও দারুণ মানিয়ে যায় নতুন বউদের।

 

রূপ বিশেষজ্ঞ নুজহাত খান বলেন, ঘরের ভেতরে কড়া সাজ নয়, বরং কাজল, লিপস্টিক, হালকা পাউডারেই শেষ হতে পারে নতুন বউয়ের সাজ। যদি পড়শি বা আত্মীয়স্বজনের বউ দেখতে আসার থাকে, তাহলে একটু বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে সাজটা। সকালে মুখটা পরিষ্কার করে বিবি ক্রিম লাগিয়ে তাতে হালকা করে বুলিয়ে নিন ফেস পাউডার। চোখের পাতায় হালকা শ্যাডো লাগিয়ে নিন। কাজল বা আইলাইনারে আঁকুন চোখ মনমতো, সঙ্গে দিতে পারেন একটু শিমারের ছোঁয়া, চোখের পাপড়িতে মাশকারা। ঠোঁটে সাজের সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন রঙের লিপস্টিক। চুলটা রাখতে পারেন খোলা, কিংবা করতে পারেন হাতখোঁপা। অথবা সামনের চুলটা আঁচড়িয়ে ক্লিপে আটকে নিয়ে পিঠের ওপর ছড়িয়ে রাখা যেতে পারে। একপাশে এলোমেলো বেণিও বেশ মানিয়ে যাবে। একটু ট্রেন্ডি ভাব আনতে চাইলে চুলটা একটু কোঁকড়া করে মাঝবরাবর সিঁথি করে নিয়ে ছাড়া বা খোঁপাতেও বেঁধে নিতে পারেন। ব্যস, নতুন বউয়ের মিষ্টি একটা সাজ পেতে এটুকুই যথেষ্ট।


আবার যখন বাইরে রাতে কিংবা অন্যান্য সময়ে দাওয়াতে যাবেন, তখন সাজে আনুন একটু ভিন্নতা। ঘরোয়া পরিবেশে হালকা গয়না বেছে নিনচোখের সাজে কপার কিংবা সোনালি আইশ্যাডো ব্যবহার করুন, চোখর কোনা সাজাতে গাঢ় বাদামি আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। ব্লেন্ড করে আইলাইনার দিয়ে শিমার ছুঁয়ে নিন। এ সময় ঠোঁটে পরতে পারেন লাল, গোলাপি বা কমলা রঙের মানানসই লিপস্টিক। চুলেও করতে পারেন ভিন্ন কিছু। সামনের চুলগুলো রোল করে পেঁচিয়ে একপাশে এনে খোঁপা করে তাতে গুঁজে দিন পছন্দের কোনো তাজা ফুল।


এ তো গেল সাজ, গয়নার গল্প।


নতুন বউয়ের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো শাড়ি।


কোন রং, কোন ধরন, কোন কাজের শাড়িতে নতুন বউদের ভালো লাগে? কোন ধরনের শাড়ি বেশি কিনে থাকেন তাঁরা? জানতে মিরপুর ১০-এর বেনারসি পল্লিতে ঢুঁ মেরে এলাম। নতুন বউদের পরার জন্য সরু পাড়ের, কম কাজের চমৎকার নকশার বেনারসি কাতান বা কাতান সিল্ক এখনো জনপ্রিয়। লামিয়া বেনারসির মালিক বুলবুল আহমেদ বলেন, এই শাড়িগুলো দেখতে সুন্দর। বিয়ের পর এই ধরনের শাড়ি নতুন বউয়ের সাজে আভিজাত্য আনে। শাড়িগুলো পরেও আরাম এবং সামলানোও সহজ। পরতেও তেমন বেগ পেতে হয় না। সহজেই শাড়িতে কুঁচি তৈরি করা যায় অন্যের সাহায্য ছাড়াই।
বেনারসিতে হালকা নকশা ও উজ্জ্বল রঙের শাড়ি নজর কাড়বেশাড়ির দোকান মনে পড়ের বিক্রয়কর্মী মো. আবদুল বলেন, এই সব শাড়ির আঁচল, পাড় ও জমিনের কাজও নজরকাড়া। শাড়ির জমিনের কলকা বুটি, শাপলা বুটি, জংলি বুটি—এই রকম অনেক বুটির কাজ শাড়িগুলো সবার পছন্দের তালিকায় রেখেছে। এসব শাড়ির রংও চমৎকার। শাড়িতে লাল, কমলা, গোলাপি, টিয়া, আসমানি রং সবার পছন্দের। এ ক্ষেত্রে বেশ প্রাধান্য রয়েছে বলেও তিনি জানান।


এই ধরনের শাড়ির যত্নের বেলায় মাঝেমধ্যে রোদে দিতে হবে। আলমারিতে রাখার সময় হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অধিক ভাঁজ পড়লে ভাঁজের জায়গায় ফেটে যেতে পারে। শাড়িতে সেফটিপিন লাগানোর সময় এক টুকরো কাগজ ভাঁজ করে শাড়িতে বসিয়ে তারপর সেফটিপিন ফুটালে শাড়ি ভালো থাকবে। এ ছাড়া কাদা বা অন্য কোনো দাগ লাগলে কিংবা ধোয়ার প্রয়োজন পড়লে তা ড্রাইওয়াশ করাতে হবে বলে জানান মিরপুর ১০-এর বেনারসি পল্লির দোকানিরা।

 

 

 

 

 

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো

ছবিঃ সংগৃহীত