কুটুমবাড়িতে বিয়ের তত্ত্ব
বিয়ের কেনাকাটার অন্যতম অংশ তত্ত্ব। কনেপক্ষেই হোক বা বরপক্ষ, তত্ত্ব কিন্তু দুই বাড়ির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে বিয়ে মানে তো শুধু বর-কনের মিলন নয়, সেই সঙ্গে দুই পরিবারই বাঁধা পড়েন আত্মীয়র বাঁধনে। আত্মীয়র এই সম্পর্ককে মজবুত করে তুলতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কুটুমবাড়িতে পাঠানো উপহার কিন্তু আপনার রুচি পরিচায়কও। তাই হবু আত্মীয়র তত্ত্ব বাছাইয়ে সতর্ক থাকুন।
কি পাঠাবেন ?
এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যে তত্ত্ব পাঠানো হয়, তা এই ডালায় সাজিয়ে দেওয়া হয়। আজকাল কোন বাড়ির ডালায় কতটা নতুনত্ব আনা হলো, সেই নিয়ে চলে বিস্তর আলোচনাও। তাই নতুন নতুন ধারণা দেখা যায় এই ডালা সাজাতে। অনেকে তো দায়িত্ব ছেড়ে দেয় বিভিন্ন ডিজাইনারদের হাতে। তবে চাইলে বাড়িতেও সাধারণ ডালায় আনতে পারেন চলতি ধারার ছোঁয়া।
কোনো কনফিউশন থাকলে হবু আত্মীয়র সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে নিন। আজকাল তো বিয়ের আগে থেকেই দুই বাড়ির আলাপ থাকে। তাই আগে থেকেই জেনে নিতে পারেন কে কোন ধরনের পোশাক পছন্দ করেন। তত্ত্বে পোশাক তো পাঠাবেনই, সেই সঙ্গে পাঠান আরও বিশেষ কিছু।
বাড়ির মহিলা গুরুজনদের শাড়ির ক্ষেত্রে তসর, ঢাকাই হতে পারে প্রথম অপশন। সঙ্গে দিতে পারেন ম্যাচিং ক্যাচ ব্যাগ। হবু শাশুড়ির তত্ত্বে সাধারণত একটু হালকা রঙের শাড়িই দেওয়া হয়। আপনি না হয় চেনা ছক থেকে একটু বাইরে বেরোলেন। শর্ষে হলুদ, গোলাপি, সবুজ শাড়ি উপহার পেলে আধুনিক শাশুড়িদের মুখে হাসিই ফুটবে। তবে এক্ষেত্রে তার পছন্দকে অবশ্যই প্রাধান্য দিন। বাড়ির মহিলা সদস্যদেরই যে প্রমাণস্বরূপ শাড়ি দিতে হবে তারও কোনো মানে নেই। কেউ যদি অন্য পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তবে সেটাই দিন। কনের বড় বা ছোট বোন থাকলে তার জন্য শিফন, জর্জেট, টিস্যু বা লিলেন শাড়ি প্রায় সবাই দিয়ে থাকেন। এর বাইরে অন্য কিছু দিতে চাইলে গাউন, লেহেঙ্গা মন্দ হবে না। কনের শ্বশুরবাড়িতে যদি ননদ থাকে, তার তত্ত্বের পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং ব্যাগ, গয়না, সুগন্ধি এবং জুতাও দিতে পারেন।
বাড়িতে খুদে সদস্য থাকলে পোশাকের সঙ্গে টয় বা চকলেট দিতে পারেন। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা ছাড়াও শেরওয়ানি বা সুট দিতে পারেন। সেই সঙ্গে কোনো গ্যাজেট বা টাই পিন, কাফলিঙ্কস, ব্রোচের মতো এক্সেসরিজ যোগ করতে পারেন তালিকায়।
আত্মীয়র বাড়িতে কারও ডায়াবেটিস থাকলে সুগার ফ্রি মিষ্টি পাঠাতে পারেন। নোনতা, ড্রাই ফ্রুট, চিপস, চকলেট, ফল, পান ইত্যাদিও তত্ত্বে রাখতে পারেন। তত্ত্ব আরও বেশি পার্সোনালাইজ করে তুলতে চাইলে তত্ত্বসূচিতে অভিনবত্ব আনতে পারেন। প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কবিতা বা মজার ছড়া লিখে দিতে পারেন। আপনার ছোট্ট ছোট্ট ব্যক্তিগত ছোঁয়া আগামী দিনে দুই পরিবারের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে তুলবে। আর হ্যাঁ, তত্ত্বে কী পাঠাবেন সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কীভাবে পাঠাবেন সেটাও কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দর করে সাজিয়ে পাঠালে সামান্য উপহারও আকর্ষণীয় দেখাবে।
কিভাবে পাঠাবেন?
কয়েক বছর আগেও শুধু বাঁশ-বেতের ডালার প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন বিভিন্ন রঙিন কাগজ ও কাপড়ে মোড়া ডালা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া লেইস ফিতা জড়ানো ডালাও বেশ জনপ্রিয়। ডিজাইনের সঙ্গে সঙ্গে ডালার আকার নির্বাচনের ব্যাপারও কিন্তু বিবেচনা করতে হবে। খুব বেশি বড় ডালা না নিয়ে ছোট ডালা পছন্দ করেন অনেকে। সাধারণত ১০ ইঞ্চি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৬ ইঞ্চি আকারের ডালা কিনতে পাওয়া যায়। আর চার কোনা ছাড়াও গোল, আট কোনা, ওভাল, হৃদয় আকারের হলুদের ডালা আছে। আবার ভিন্ন ভিন্ন ডালা ছাড়াও ৩টি ডালা নিয়ে একটি সেটও পাওয়া যায়।
হলুদের ডালায় এখন এসেছে অনেক পরিবর্তন। বর্তমানে নকশা বা খোদাই করা কাঠের ডালাগুলো বেশ ব্যবহার করা হয়। তবে তার সঙ্গে বিভিন্ন কৃত্রিম ফুল, পাতা, মুক্তা ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে। অনেকে আবার রঙিন কাগজের ফুল, পাখি, ময়ূর ডালায় ব্যবহার করে থাকেন। আবার ডালার আকারেও এসেছে ভিন্নতা। এখন তাক বা আলনার মতো করেও তৈরি করা হয় ডালা এবং প্রত্যেকটি তাক ভিন্ন ভিন্ন করে সাজানো হয়। মিষ্টি বা বিভিন্ন পিঠার জন্য কাচের বাক্সে কৃত্রিম ফুল বা রঙিন কাপড় মুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে এখন খুব চকচকে ডালার জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমে গেছে এবং রঙের ক্ষেত্রে সোনালি রুপালির সঙ্গে পোলাপি, বেগুনি, নীলসহ নানান রঙের ব্যবহার বেড়েছে অনেক।
অনেকে তো ফরমাশ দিয়ে ডালা তৈরি করে নেন। রীতিমতো ইন্টারনেট ঘেঁটে নতুন নকশা বের করেও ডালা বানাতে দেখা যায়। কাঠের ডালার পাশাপাশি সোলার ডালাও এখন অনেকে পছন্দ করেন। বর-কনের বিশেষ পোশাক দেওয়ার জন্য এই ধরনের ডালা ব্যবহার হয়। এ ছাড়াও নতনত্ব আনতে কাঠের গুঁড়ির ডালা, হোগলাপাতার ডালা, বাঁশ, বেতের ডালা, মাটির তৈরি ডালা ব্যবহার করা যায়। তবে ডালাগুলোকে একটু রঙিন করতে কৃত্রিম ফুল, কাপড়ের ফুল, পাতা, ময়ূরের পালক, সোলার বল, পমপম বল, নানান রঙের আলপনা করে একেবারেই আলাদা রূপ দেওয়া যায়। বিভিন্ন উপহার সামগ্রীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডালা ব্যবহার করা হয়। যেমন পানসুপারি, চুড়ির ডালা, বিয়ের পোশাকের ডালা, উপহারের ডালা, গয়নার ডালা, মিষ্টির ডালা বা বয়াম, পিঠার ডালা ইত্যাদি আলাদা উপকরণে তৈরি করা হয়।
যাঁরা বাড়িতেই তৈরি করতে চান হলুদের ডালা -
* বাজারে যেসব বেতের বা বাঁশের ডালা পাওয়া যায়, তা শুধু বা রঙিন কাপড় দিয়ে মুড়ে নিলে ভালো লাগবে।
* একটু বেশি রঙিন করতে চুনরি বা বাটিক কাপড় ব্যবহার করা যায়। এতে করে দেশীয় একটা ব্যাপারও থাকবে।
* ডালা সাজাতে কাতান, সিল্ক কাপড়ের ব্যবহার নতুনত্ব ও আভিজাত্য আনতে পারে।
* ড্রাই ফ্লাওয়ার, কাপড়ের ফুল বা কৃত্রিম ফুল, পাতা, লেস, রিবন ব্যবহার করা যায় ডালার চারপাশে বা দুপাশে।
* পান ডালা, ফলের ডালা, মাছ ডালায় আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী কিছু উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন বর-কনের পুতুল, ছনের ঘর ইত্যাদি।
* মিষ্টির ডালা হিসেবে বেতের ডালা, মাটির হাঁড়ি ভালো লাগবে।
* মাটির হাঁড়িতে নকশা করে নেওয়া যেতে পারে রংতুলিতে।
যেখানে পাবেন ও দাম-
ঢাকায় বিয়ের হলুদের ডালা কুলার সব থেকে বেশি দোকান এলিফ্যান্ট রোড, কাঁটাবন ও চকবাজারে। এ ছাড়াও বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন মল্লিকা, জেনেটিক প্লাজাতেও পাবেন ডালা। বাজারের সাধারণ ডালাগুলো ২০০ থেকে ৮০০ টাকা ও কুলা ১০০ থেকে শুরু করে প্রায় ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। আর ডিজাইন করা ভিন্নধর্মী ছোট ডালা ৪০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত আর বড় ডালা ৪০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত।
ছবিঃ সংগৃহীত