ত্বকে আর্দ্রতা যোগাবে শীট মাস্ক

ত্বকে আর্দ্রতা যোগাবে শীট মাস্ক

কোরিয়ান পদ্ধতিতে ত্বক ডিটক্স করতে, প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ও মসৃণভাব আনতে প্রকৃত অর্থেই শিট মাস্ক কাজ করে। এ এমন এক মাস্ক যাতে বিশেষ উপাদান শোষিত হয়, যা ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। যাঁদের নিয়মিত পার্লারে ছোটার সময় নেই, বা বাড়িতেও এটা ওটা প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করে মাখার ধৈর্য নেই, তাঁদের জন্য শিট মাস্ক খুবই কাজের। যেহেতু ত্বকের জন্য উপকারী নানান সামগ্রী দিয়ে শিট মাস্ক তৈরি হয়, তাই নিমেষে ত্বকে ইনস্ট্যান্ট দীপ্তি আনতে জুড়ি নেই শিট মাস্কের।

 

ফেসিয়ালের মধ্যে সব বয়সীর কাছে প্রাধান্য পায় এ মাস্ক। পাওয়া যায় বড় বড় প্রসাধনীর দোকানে। একে মুখোশ বললেও ভুল হবে না। লাগিয়ে নিতে হয় মুখোশের মতো করে। নির্দিষ্ট সময় পর তুলে ফেললেই মিলবে সজীব ত্বক।

 

কতরকম শিট মাস্ক-

বাজারে নানারকম বোটানিক্যাল উপাদান ও ভিটামিনসমৃদ্ধ মাইক্রোফাইবার শিট মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে। এদের কাজের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন। হাইড্রোজেল মাস্কগুলো সাধারণত মাইক্রোফাইবারের থেকে বেশি কার্যকর। জেলাটিন ও নানা ধরনের ত্বকবান্ধব সেরামের সংমিশ্রণে তৈরি বলে অনেক পাতলা হয় এসব মাস্ক। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে বেশ কার্যকর। এ ছাড়া বাজারের শিট মাস্কের মধ্যে পাবেন নিট মাস্ক। এ মাস্কগুলো তৈরি হয় শতভাগ সুতির বুননে। ফলে ত্বক দ্রুততম সময়ে পরিপূর্ণভাবে আর্দ্রতা শুষে নিতে পারে। একটু ভারী হওয়ায় শুকাতেও বেশি সময় নেয়। আকারে খানিকটা বড় হওয়ায় এতে শুধু মুখ নয়, গলাও অনায়াসে ঢেকে নেওয়া যায়।

 

অন্য শিট মাস্কগুলোর উপাদান সাধারণত উবে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। ফয়েল শিট মাস্ক তা রোধ করে কার্যকরভাবে। ফলে শিটে থাকা লিকুইড সেরামের পুরোটাই শুষে নিতে পারে ত্বক। পায় পরিপূর্ণ পুষ্টি। বহুল ব্যবহৃত মাস্কগুলোর মধ্যে ময়েশ্চারসমৃদ্ধ শিট মাস্ক অন্যতম। সাধারণত শুষ্ক ত্বকের যত্নে উপযোগী। অ্যালোভেরা, রয়্যাল জেলি, ডালিমের মতো উপাদানের নির্যাসে তৈরি এসব মাস্ক; যা ত্বকে জরুরি আর্দ্রতার জোগান দেয়। রয়েছে অ্যান্টি এজিং শিট মাস্ক। এ মাস্ক ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। বলিরেখা আর বাড়তি দাগছোপ কমায়।

 

 

ব্যবহারবিধি-

শিট মাস্ক ব্যবহারের আগে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। মাইল্ড ক্লিনজার ব্যবহার করে কুসুমগরম পানিতে মুখ ধুয়ে এরপর টোনার ব্যবহার করতে হবে। তারপর শিট মাস্কটা নিয়ে ভালোভাবে ত্বকে বসিয়ে দিন। খেয়াল রাখুন যেন ভিতরে বাতাস না ঢোকে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট বা প্যাকেটে নির্দেশিত সময় শিট মাস্ক মুখে রেখে দিন। তারপর মাস্ক খুলে আলতো চাপড় দিয়ে সেরাম ত্বকে বসিয়ে দিতে হবে।

বাসায় থাকলে আর কিছু না করলেও চলবে। তবে বাইরে বের হলে এর ওপর সানস্ক্রিন মাখিয়ে নিতে ভুলবেন না।

 

 

কেন শিট মাস্ক বেশিক্ষণ লাগিয়ে রাখা অনুচিত ?

 

শিট মাস্কে প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা থাকে, ফলে শুষ্ক ত্বক ঝলমলে করে তুলতে এটি খুবই কাজের। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় শিট মাস্ক লাগিয়ে রাখলে উলটো ফল হয়। শিট মাস্ক যত শুকোতে থাকে, ততই ত্বক থেকে আর্দ্রতা ফের শুষে নেয় আর সেই সঙ্গে মিনারেল আর ভিটামিনও বেরিয়ে যায়। তাই ২০-৩০ মিনিটের বেশি শিট মাস্ক কখনওই মুখে লাগিয়ে রাখবেন না।

আর একটা ভুল মেয়েরা করেন, সেটা হল মুখে শিট মাস্ক লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। এতে সময় বাঁচে ঠিকই, কিন্তু আখেরে ত্বকের ক্ষতি হয়। 20-30 মিনিট সময় ধরে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন, যাতে ঠিক সময়ে শিট মাস্ক তুলে ফেলতে পারেন।

 

 

শীট মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে যা মনে রাখবেন-

 

 * শীট মাস্কগুলো শুধুমাত্র একবার ব্যবহারের জন্যই। কোনো এসেন্স বা সিরামে ভেজানো মাস্ক একবার আপনার মুখে সম্পূর্ন ভাবে শুষে এলে এর কার্যকরিতা এখানেই শেষ। তাই একই শীট মাস্ক একাধিকবার ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন না।

 

* গরমের সময়ে শীট মাস্ক ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। ঠান্ডা মাস্ক মুখে ব্যবহার করলে নিমিষেই স্কিন লাগবে আরও রিফ্রেশড। তবে যাদের ঠান্ডার সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই নরমাল টেম্পারেচারেই মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন।

 

* অপরিষ্কার ত্বকে শীট মাস্ক কখনো ব্যবহার করবেন না। স্কিনকেয়ারের শুরুতেই আপনার পছন্দের ক্লিনজার বা ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ভালো মত পরিষ্কার করে নিন। তারপর আলতো হাতে মাস্কটি পুরো মুখে সমান করে বসান।

 

* মাস্কের সিরাম স্কিনে শুষে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এজন্য ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করাই যথেষ্ট। অনেকেরই ভুল ধারনা থাকে যে যত বেশি সময় মাস্ক মুখে থাকবে তত বেশি লাভ। এমনকি অনেকে সারা রাতও মাস্ক তুলেন না। এটা কখনোই করা যাবে না কারণ এতে  হিতে বিপরীত ঘটনা ঘটবে এবং স্কিন অতিরিক্ত ড্রাই হয়ে যাবে।

 

* পর্যাপ্ত সময় পর মাস্কটি তুলে কিন্তু মুখ ধুয়ে ফেলবেন না! পরিষ্কার হাতে স্কিনে ম্যাসাজ করুন যেন মাস্কের এসেন্স স্কিনে ভালোমত কাজ করতে পারে। ব্যাস, শীট মাস্কের ব্যবহার এই পর্যন্তই, তাই বারতি কোনো ঝামেলার আর প্রয়োজন নেই।

 

* সপ্তাহে ২-৩ দিন শীট মাস্ক ব্যবহার করাই যথেষ্ট। যেকোনো স্পেশাল ইভেন্টের আগের রাতে স্কিনকেয়ারে শীট মাস্ক ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন স্কিন কতটা স্মুথ এবং গ্লোয়ি থাকবে আপনার কাঙ্খিত দিনে!

 

 

 

 

 

 

ছবিঃ সংগৃহীত