আসছে গরমের ফ্যাশনধারা
ভারতের মুম্বাইতে হয়ে গেল ল্যাকমে ফ্যাশন উইক সামার রিসোর্ট ২০১৮। ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড ল্যাকমে এবং আইএমজি রিলায়েন্স আয়োজিত এই ফ্যাশন উইকে কী ধরনের ফ্যাশন দেখানো হলো তা এর নামেই বোঝা যায়। আগামী গ্রীষ্মের ফ্যাশনের ধারা কেমন হবে শুধু তা-ই নয়, গরমে বেড়ানোর উপযোগী পোশাক ছিল প্রতিটি শোতে। খ্যাতনামা ডিজাইনাররা যেমন তাঁদের সংগ্রহ দেখিয়েছেন, তেমনি নবীন প্রজন্মের ডিজাইনারদের উপস্থাপনাও ছিল নজরকাড়া। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এই আয়োজন। গরমের ফ্যাশনধারার এক ঝলক তুলে ধরা হলো এখানে। মুম্বাই থেকে লিখেছেন রয়া মুনতাসীর
হাতের কাজ না প্রিন্ট-
দুটোই সমানতালে চলছে আর চলবেও। আধুনিক ও রেট্রো ঘরানার প্রিন্ট ছিল পোশাকে। এই ছাপায় পশুপাখির অবয়ব, গ্রাফিকস, পলকা ডট, স্থাপত্য নকশা, ফুল ফুটে উঠেছিল। চুনরি, টাইডাই ছিল। হাতের কাজে জায়গা পেয়েছিল এমব্রয়ডারি, জারদৌসি, গোটা পাত্তি, ফারদি, রাজস্থানি কাজ প্রভৃতি। বাংলাদেশের জামদানির কাজও দেখা যায় ডিজাইনার গৌরাঙ্গ শাহের পোশাকে।
জ্যাকেটে ভিন্নতা-
ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে যে পোশাকটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে সেটি হলো জ্যাকেট। এক জ্যাকেটের মধ্যেই আনা হয়েছে নানা কাট ও নকশা। লম্বায় কখনো কোমর বা তার ওপরে ছিল, কখনো-বা মাটি ছুঁয়ে গিয়েছিল। সুতি, সিল্ক, নেট, খাদি কাপড় দিয়ে তৈরি জ্যাকেটগুলো লেয়ারিং করা হয়েছিল ইচ্ছেমতো। হাতাকাটা কুর্তার ওপর সামনে খোলা শার্ট, তার ওপর আবার হাতাকাটা জ্যাকেট। শাড়ি, কামিজ, গাউন কোনো কিছুই রেহাই পাবে না এই জ্যাকেট থেকে। ছেলেমেয়ে উভয়ের ফ্যাশনেই থাকবে জ্যাকেট।
বেল্ট-
মেয়েদের পোশাকে বেল্টের ব্যবহার দেখা গেছে অনেক। চামড়ার সাধারণ চওড়ার বেল্ট বেশি চোখে পড়েছে। চিকন বেল্টও ছিল, তবে কম। এর বাইরে কাপড়ের ওপর ভারী কাজ করা চওড়া কোমরবন্ধনী শাড়ি ও কামিজের সঙ্গে পরানো হয়েছিল।
টুকটাক কাজ-
ছেলে ও মেয়েদের পোশাকে ড্রেপিং দেখা গেছে বেশ। স্কার্ফকে পোশাকের সঙ্গে লাগিয়ে একপাশ থেকে পেছনের কাঁধের কাছটায় নিয়ে আটকে দেওয়ার মাধ্যমে ড্রেপিং তৈরি করা হয়েছে। ফ্রিঞ্জের ব্যবহার জনপ্রিয় হবে, এমনটাও বোঝা গেল।
ছেলেদের পোশাক-
ফ্যাশন শোয়ের একটা বড় অংশজুড়ে ছিল ছেলেদের পোশাক। জ্যাকেট, স্যুট, ব্লেজার, শেরওয়ানি তুলে ধরেন নকশাকারেরা। ছিল হাফপ্যান্ট, খাদির তৈরি স্ট্রেইট কাটের প্যান্ট, ধোতি প্যান্ট। পাতলা কাপড়ের ওপর হালকা রঙের শার্টও মনে করিয়ে দিয়েছে সামনেই গরম।
হিপহপ আর ফাংকি-
গম্ভীর, রাশভারী নকশার পাশাপাশি হিপহপ, ফাংকি নকশাও ছিল। ডিজাইনার রিতু কুমারের কথা এখানে না বললেই নয়। হিপহপ বারোক শিরোনামে পোশাকগুলোতে ্যাপ ও স্ট্রিট ফ্যাশনের ঝলক দেখা যায়।
কাট-
মেয়েদের জন্য এ লাইন, আনারকলি, ফ্লোয়ি, র্যাপ ড্রেস, কাফতান, জাম্পস্যুট, শার্ট ছিল। ব্লাউজেও রংঢং ছিল বেশ। অসমান (আনইভেন) কাট এ বছরও চলবে, তা বোঝা গেল। গরম যেহেতু তাই থাকছে ঢিলেঢালা কাটও। টিউলে, নেট ব্যবহার করে ফ্রিল দেওয়া হয়েছিল। অফ শোল্ডার গরমে জনপ্রিয়তা পাবে। স্কার্ট আছে, সামনেও থাকবে।
নতুনদের জয়-
ফ্যাশন শোয়ের প্রতিদিনই বেশ কয়েকজন নবীন ডিজাইনারের পরিবেশনা ছিল। সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছে প্রথম দিনের জেন নেক্সট। এনআইএফডির পাঁচ তরুণ প্রথমবারের মতো তুলে ধরেন তাদের পোশাক। নবীনেরা সাধারণ, টেকসই, ক্যাজুয়াল, ফাংকি, আনুষ্ঠানিক ফ্যাশনের ওপর জোর দিয়েছেন।
সবার জন্যই ফ্যাশন-
সঠিক কাঠামো বলতে আসলে কিছু নেই। ফ্যাশন সবার জন্যই। স্থূলদেহের অধিকারীদেরও এখানে সমান অংশীদারত্ব। ছেলেদের পোশাক যেমন মেয়েরা পরতে পারবে, তেমনি মেয়েদের পোশাক ছেলেরাও। ফ্যাশন মানেই তো নিরীক্ষা।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, নকশা
ছবিঃ সংগৃহীত