পোশাকের নকশায় ব্লক বাটিক
পোশাকের নকশায় এমব্রয়ডারি, কারচুপি, টাইডাই, স্ক্রিনপ্রিন্ট কত কিছুই না ব্যবহার হয়। যোগ হয় নিত্যনতুন নকশা। এত এত নকশার ভিড়ে বহু যুগ ধরে যে দুটি নকশা সমান জনপ্রিয় তা হচ্ছে ব্লকপ্রিন্ট ও বাটিক প্রিন্ট। ডিজাইনের বৈচিত্র্যে পোশাকে বাটিক ও ব্লকপ্রিন্ট নিয়ে লিখেছেন কেয়া আমান
বহুযুগ ধরে ফ্যাশনে জায়গা দখল করে আছে বাটিক ও ব্লকপ্রিন্ট। কিন্তু এখনো সমান জনপ্রিয়। কী শাড়ি, কী সালোয়ার-কামিজ, পর্দা কিংবা কুশন কভার, বাটিক ও ব্লকপ্রিন্ট সবখানেই মানিয়ে যায়। সিম্পল তবে দৃষ্টিনন্দন আর এক রঙেই যেন বর্ণিল। আর বহু রঙে? চোখ ফেরানো দায়!
‘প্রিন্টিং মিডিয়ার শুরু থেকেই ব্লকপ্রিন্ট ফ্যাশনে জায়গা দখল করে নিয়েছে। এখনো পোশাকের নকশায় এক অন্যরকম ভালো লাগা তৈরি করে বাটিক ও ব্লকপ্রিন্ট’ বলেন ডিজাইনার লিপি খন্দকার। তিনি আরও বলেন, ‘ব্লকপ্রিন্ট স্ক্রিনপ্রিন্টের মতো নিখুঁত নয়। একটু ভারী, একটু যেন এলোমেলো, আর এটিই হচ্ছে ব্লকের সবচেয়ে ভালো লাগার দিক। ছাঁচে করা হলেও এর সঙ্গে মিশে থাকে শৈল্পিক ছোঁয়া। কোনো মোটিফ নয়, যত নিখুঁত ব্লক কাটা হয় ব্লকের সৌন্দর্য ততই ফুটে ওঠে। ব্লকপ্রিন্টের একটি মজার দিক হচ্ছে, ব্লকের পোশাক ক্যাজুয়াল এবং ফরমাল দুই লুকেই মানিয়ে যায়।’
শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শার্টসহ বিভিন্ন পোশাক ছাড়াও বেডকভার, পর্দা, কুশনকভারসহ গৃহসজ্জা এবং নিত্যব্যবহার্য নানা কিছুতে বাটিক ও ব্লকপ্রিন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ছাঁচে ফেলে করা হলেও ব্লকে অনেক ধরনের মোটিফ ব্যবহার হয়। সবচেয়ে বেশি যে মোটিফগুলো ব্যবহার হয় তা হচ্ছে ফুল, জ্যামিতিক এবং আল্পনা মোটিফ। এ ছাড়া পোলকা ডট, কলকা, স্ট্রাইপ, পাতা, নকশি পিঠা প্রভৃতি মোটিফ ব্যবহার হয়ে থাকে। কখনো ব্যবহার হয় শুধুই ফুলেল মোটিফ তো কখনো জ্যামিতিক, আল্পনা প্রভৃতি। আবার দু-তিনটি মোটিফের মিশেলেও ব্লক করা হয়ে থাকে। ব্লকের সঙ্গে আফসান মিশিয়ে চকচকে গর্জিয়াস লুক আনা হয়।
পুরনো হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্লকপ্রিন্টেও আসে নতুনত্বের ছোঁয়া। এখন কিছু কিছু ব্লকপ্রিন্টের কামিজের হাতায় ও ওপরের অংশে ব্যবহার হচ্ছে জ্যামিতিক মোটিফ আর নিচের দিকে ব্যবহার হচ্ছে ফুলেল মোটিফ। কামিজে কলকা মোটিফ ব্যবহার হলে সালোয়ার এবং ওড়নায় বসানো হচ্ছে আল্পনা মোটিফ।
ব্লকপ্রিন্টেও আছে ফিউশন। ব্লকের পোশাক জমকালো করতে ব্লকের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন অন্যান্য নকশা। শুধু একঢালা প্রিন্ট নয়, ব্লকের সঙ্গে রাখতে পারেন ছোট ছোট কারুকাজ। ব্লকপ্রিন্টের সঙ্গে এমব্রয়ডারি, হাতের কাজ, কারচুপি নকশা যোগ করা হয়ে থাকে। ব্লকের কামিজের বুকের অংশে ইয়োগ কিংবা লেইস বসিয়ে আর নিচের অংশে ও হাতায় ব্লক করে আনা হচ্ছে ভিন্নতা, যা নজর কাড়বে পার্টিতে। অফিস কিংবা ঘরোয়া পরিবেশেও ব্লকের পোশাক পরতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ব্লকের পোশাক যে কোনো বয়সেই মানিয়ে যায়।
ব্লকের সুতি শাড়ি মানিয়ে যায় যে কোনো বয়সী নারীকে। ব্লকের পুরো শাড়ির জমিনজুড়ে ছোট ছোট মোটিফ আর আঁচলে বড় মোটিফের ব্যবহার যেমন নজরকাড়া তেমনি পুরো শাড়িতে বড় মোটিফও ভালো লাগে। শাড়ির নিচের অর্ধেক একঢালা ব্লকপ্রিন্ট বেশ জনপ্রিয়। কোনো শাড়িতে আবার পুরোটাই ব্লক করা হয়। একরঙা শাড়ির সঙ্গে শুধু ব্লকের ব্লাউজ পরেও আনতে পারেন ভিন্নতা। জমকালো করতে ব্লকের শাড়ির পাড় এবং অর্ধেক আঁচলে কুশিকাঁটা কিংবা লেইস বসিয়ে ভিন্নতা আনা হচ্ছে। সুতি ব্লকপ্রিন্টের শাড়িতে পাড়টা দেওয়া হচ্ছে ধুপিয়ান, তসর অথবা কাতান।
শার্ট কিংবা ফতুয়ায় ফ্লাওয়ার মোটিফ ব্লক বেশি জনপ্রিয়। পর্দায় ফুল, কলকা, আল্পনা ছাড়াও ব্যবহার হয় জ্যামিতিক মোটিফ। পর্দার একেক পার্টে ব্যবহার করতে পারেন একেক ধরনের মোটিফ।
ফ্যাশন হাউস নিপুণের ডিজাইনার ও কর্ণধার আশরাফুর রহমান ফারুক জানান, ‘বাটিক ও ব্লকপ্রিন্ট যে কোনো ধরনের কাপড়ে করা যেতে পারে। যেমন সুতি থেকে সিল্ক, সার্টিন থেকে শিফন, এমনকি জর্জেটেও। তবে সুন্দরভাবে বসায় সুতিতেই ব্লকপ্রিন্ট বেশি করা হয়ে থাকে। পাতলা সুতি কাপড়ের ওপর ব্লকপ্রিন্ট পোশাক গরমে আরামদায়ক। একটু ভারী ব্লকের কাজের পোশাক শীতে দেবে আরাম। ধরাবাঁধা কোনো রঙ না থাকলেও লাল, নীল, সবুজমতো উজ্জ্বল রঙ ব্লকপ্রিন্ট বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।’
ব্লকপ্রিন্টের পোশাকে নিতে হবে বাড়তি যত্ন। বেশি ক্ষারে ব্লক উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কম ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ব্লকের কাপড় ধোয়া উচিত। সরাসরি রোদে কখনই ব্লকের পোশাক শুকাতে দেওয়া উচিত নয়। রঙ জ্বলে যেতে পারে। ব্লকের পোশাক ইস্ত্রি করার সময় উল্টে ইস্ত্রি করুন।
তৈরি পোশাক ছাড়াও গজ কাপড় কিনে বাটিক ও ব্লক করিয়ে নিতে পারেন। ঢাকার গাউছিয়া, নিউমার্কেট, আনারকলিসহ অনেক দোকানে ব্লক করা হয়। ব্লকের পোশাকের দাম নির্ধারণ হয় এর ডিজাইন এবং কাপড়ের ওপর। বানিয়ে নিতে চাইলে সুতি কাপড়ের ওপর ব্লক করতে খরচ পড়বে ৫০০-১০০০ টাকা। সিনথেটিকের ওপর খরচ পড়বে ১৫০০-২০০০ টাকা। এ ছাড়া ব্লকের ডাইস আর রঙ কিনে বাড়িতেও ব্লক করতে পারেন।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়
ছবিঃ সংগৃহীত