শীত হোক মোহনীয়
শীত মানেই কার্নিভ্যাল। গুছিয়ে থাকার একটা ব্যাপার। কিন্তু শীতের রুক্ষ আবহাওয়া ত্বকের শত্রুও বটে। তবে চাইলে নিয়মিত যত্ন এবং সঠিক লাইফস্টাইল আপনাকে শীত উপভোগ করতে বেশ সাহায্য করবে। এ প্রসঙ্গে বিউটি স্যালন ওনার অফ রোজ বিউটিকেয়ার অ্যান্ড স্যালনের বিউটি এক্সপার্ট সানিয়া আফরিন বলেন, ‘এ সময়ের রুক্ষতা, ত্বক ও চুলের জন্য যেন শাস্তি। শীতের ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে গোসলে সাবানের পরিবর্তে শাওয়ার জেল ব্যবহার উত্তম। গোসল শেষে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজ লোশন ব্যবহার করাটাও জরুরি। লোশন ত্বকের রুক্ষতা ভাব দূর করে। চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।’
শীতের এই সময়ে কোমল ও মখমলের মতো ত্বক সবারই কাম্য। কিন্তু শীতের রুক্ষ আবহাওয়া এবং অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার ত্বককে করে তোলে আরও রুক্ষ আর মলিন। ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে গোলাপজল দারুণ কার্যকরী। নিত্যদিনের ময়েশ্চারাইজার বা লোশনের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করলে দেখবেন ত্বক হয়ে উঠবে আরও কোমল ও মসৃণ।
এ ছাড়া গোলাপজল নিয়মিত ফেসিয়াল টোনার হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ফিরিয়ে আনবে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা। এক চা চামচ নারিকেল তেলের সঙ্গে দুই চা চামচ গোলাপজল ও দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে নমনীয় এবং ফিরে আসবে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।
শীতের পা ফাটার সমস্যা প্রায় ছোট-বড় সকলেরই হয়। এক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম জেলি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। পা ফাটা কমাতে গোসলের সময় ব্রাশ বা ঝামা পাথর দিয়ে পায়ের গোড়ালি পরিষ্কার করে নিন এবং গোসল শেষে পায়ের গোঁড়ালি ভেজা ও নরম থাকা অবস্থায় পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে পা রুক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। রাতে ঘুমোনের আগে অবশ্যই দুই পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে সুতি মোজা পরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। উপকার পাবেন।
অনেকের ধারণা যে বছরের বাকি সময়টা তাদের চুল অয়েলি থাকে বলে শীতকালীন রুক্ষতায় কোনো ক্ষতি হবে না। ঋতু পরিবর্তনে চুলের ধরনের পরিবর্তন হয়। সবকিছুর মূলে থাকে বাইরের ধুলাবালি। স্ক্যাল্প চুলকালে বা চুল খুব রুক্ষ হলে ড্যানড্রাফ আসতে পারে। এ সমস্যার সমাধানে একটা রুটিন মেনে চলতে পারেন। শীতের এই সময় ঘন ঘন চুলে শ্যাম্পু করবেন না। শ্যাম্পু সপ্তাহে দুই দিন করাই যথেষ্ট। তা ছাড়া শীতে বাইরে বেরুলে স্কার্ফ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। শীতকালে চুলে খুশকি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় সবচেয়ে বেশি। চুলে খুশকি হওয়া মানে চুল পরা, স্ক্যাল্প চুলকানো এবং চুলের বিবর্ণতা। এই সমস্যার সমাধান করতে চাইলে নারকেল তেল ও অলিভ অয়েল হাল্কা গরম করে সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। ঘণ্টাখানেক বাদে গরম পানিতে ভেজানো একটি তোয়ালে নিংড়ে চুল পেঁচিয়ে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এরপর অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই খুশকির উপদ্রব অনেকাংশে কমে আসবে। চাইলে টকদই, কলা, ডিমের সাদা অংশ এবং মধু একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। খুশকি তো কমবেই পাশাপাশি চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে ও প্রাণবন্ত।
আমাদের দেহের সবচেয়ে নাজুক অংশ ঠোঁট। শীতের রুক্ষ আবহাওয়া ঠোঁটকে করে তোলে মলিন। অনেক সময় ঠোঁট ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। এই রুক্ষতা কমাতে স্যালন ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। এর বাইরেও বাড়িতে থাকা ছোটখাটো উপাদানে ঠোঁটের পরিচর্চা করতে পারেন। চিনি, মধু ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে লিপস্ক্রাবার বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে ঠোঁট ফাটা কমানোর পাশাপাশি ঠোঁট হবে আরও মসৃণ। ঠোঁটের যত্নে অবশ্যই নিয়মিত লিপবাম ব্যবহার করুন।
এ ছাড়া শীতের এই সময়টায় লাইফস্টাইলেও পরিবর্তন আনা উচিত। শীতে বেশি করে পানি পান করুন। অনেকেই শীতে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম ছেড়ে দেন। এটা উচিত নয়। এ জন্য জিমে যেতে না চাইলে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটুন। শীতে গরম পানি দিয়ে গোসল না করাই ভালো। এতে চুল ও ত্বকের ক্ষতি হয়। তাই কষ্ট হলেও গোসলে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন। শীতে বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ক্রিম বা সানব্লক লোশন ব্যবহার করুন। এ সময় ওয়াটাবেজড ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার না করাই ভালো। অয়েলবেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন তাতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
টিপস
► শীতের মিষ্টি রোদ যতই ভালো লাগুক না কেন ত্বক ও চুলের কথা মাথায় রেখে স্কার্ফ ব্যবহার করুন।
► হেয়ার কালারে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল থাকে যা চুলকে রুক্ষ করতে পারে। তাই শীতে হেয়ার কালার না করানোই ভালো।
► সপ্তাহে দুই তিনবার ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারেন। চুল ও ত্বক দুটোই ভালো থাকবে।
সূত্রঃ বিডি-প্রতিদিন/ ফ্রাইডে
ছবি- সংগৃহীত