পিরিয়ডের দিনগুলোতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা !
নিজেদের আধুনিকতার মোড়কে ঢেকে রাখলেও ‘ঋতুস্রাব’, ‘মাসিক’ বা ‘পিরিয়ড’—শব্দগুলো যেন বেশ অস্বস্তিতেই ফেলে আমাদের। তবে অস্বস্তি করে স্বাভাবিক বিষয়টিকে না জানলে কিন্তু চলবে না। নিজের সুস্থতার জন্যই সবটা জানতে হবে।
‘সুস্থ থাকতে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অবদান অনেক। বিশেষত মাসিকের সময় পরিচ্ছন্নতা সুস্থতার অন্যতম নিয়ামক। তাই এ সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।’
সব জানলে তবেই না বুঝবেন কোন বিষয়ে সচেতন হতে হবে, আর কীই–বা করতে হবে আপনাকে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নাজমা হক বলেন, ‘সুস্থ থাকতে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অবদান অনেক। বিশেষত মাসিকের সময় পরিচ্ছন্নতা সুস্থতার অন্যতম নিয়ামক। তাই এ সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।’
কেন চলবেন নিয়ম মেনে ?
শরীরের বিভিন্ন অংশের মতো যোনিপথেও স্বাভাবিকভাবেই কিছু জীবাণু বাস করে। এসব জীবাণু থাকার অর্থ কিন্তু সংক্রমণ নয়। তবে যেহেতু পিরিয়ডের সময় রক্ত যাচ্ছে, আর কোথাও রক্ত পড়ে থাকলে তা জীবাণু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, সে কারণেই বিশেষ এই দিনগুলোতে থাকে সংক্রমণের ভয়। এ ছাড়া জরায়ুমুখ মাসিকের সময় খানিকটা খোলা অবস্থায় থাকে (অন্য সময় যা বন্ধ থাকে) বলে যোনিপথ পেরিয়ে ভেতরের দিকেও সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জরায়ু, ডিম্বনালি, ডিম্বাশয়, এমনকি তলপেটের ভেতরের পর্দায়ও সংক্রমণ হতে পারে বলে জানালেন অধ্যাপক নাজমা হক। তলপেটের ভেতর পুঁজ জমতে পারে, ডিম্বাশয়-ডিম্বনালির জায়গায় গোটা হতে পারে। তলপেটে ব্যথা, অনিয়মিত রক্তস্রাব, কয়েক দিন পরপরই যোনিপথে রক্তক্ষরণ, এমনকি বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যাও (কম বয়সে এই পরিচ্ছন্নতা মেনে না চললে) হতে পারে। প্রস্রাবে সংক্রমণও হতে পারে।
এই সময়ে করণীয়-
১. সারা দিনে অন্তত তিন–চার বার স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড বদলাতে হবে। কম রক্ত যাচ্ছে বলে সারা দিন এক প্যাড পরে থাকলেন, এ রকম করা যাবে না কখনোই।
২.স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাডের পরিবর্তে কখনো টিস্যু পেপার ব্যবহার করবেন না। প্যাডের ওপরে টিস্যু পেপারের বাড়তি স্তরও দেবেন না। আর্থিক অসুবিধার কারণে শুধু প্যাড ব্যবহারের মাধ্যমে মাসের চাহিদা পূরণ করতে না পারলে প্যাডের ওপর তুলার স্তর দিতে পারেন। এমন হতে পারে যে তুলার স্তর পাল্টে পাল্টে সারা দিনে হয়তো মাত্র একটি প্যাড ব্যবহার করলেই চলছে। তবে প্যাডে কোনোভাবে যদি রক্ত লেগেই যায়, তাহলে বদলাতে হবে। মোটামুটি ছয় থেকে আট ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রক্ত লাগা প্যাড বা তুলা কোনোটাই রাখা যাবে না।
৩.যাঁদের প্যাড ব্যবহার করার সুযোগ নেই, তাঁরা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। কাপড় পরিবর্তনের সময়কাল একই। তবে সাবান দিয়ে ধোয়ার পর রোদে শুকিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়।
৪. প্রতিদিন গোসল করুন। শরীরে সাবান ব্যবহার করলেও যোনিপথ বা এর আশপাশে সাবান ব্যবহার করবেন না। যোনিপথকে জীবাণুমুক্ত করতে স্যাভলন ব্যবহার করাও অনুচিত।
৫. প্রতিবার প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পরিষ্কার পানি দিয়ে যোনিপথ ও এর আশপাশটা ধুয়ে নিন। অনেক সময় ঊরুতেও রক্ত লেগে যায়। পানি দিয়ে সব জায়গায় লেগে থাকা রক্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে যোনিপথের ভেতরে হাত দিয়ে পরিষ্কার করবেন না।
৬. প্রতিবার প্রস্রাব-পায়খানা করার আগে এবং পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকেই হাত ধুয়ে নিন সাবান দিয়ে। মাসিকের সময় ছাড়াও এসব অভ্যাস বজায় রাখুন।
৭. স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তন বা ব্যবহারের আগেও সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
৮. কেউ কেউ ট্যাম্পুন (তুলা বা স্পঞ্জ দিয়ে তৈরি এমন পদার্থ, যা যোনিপথ দিয়ে ভেতরে রাখা যায় এবং রক্ত শোষণ করে আটকে ফেলে) ব্যবহার করেন। এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।
৯. স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে রক্ত ছড়িয়ে পরিধেয় পোশাকেও লেগে যায় কখনো কখনো। এ রকম হলে যত দ্রুত সম্ভব তা বদলে ফেলতে হবে। দাগ লেগে যাওয়া পোশাক পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো