পোশাকে প্রাকৃতিক রঙের জনপ্রিয়তা বাড়ছে

পোশাকে প্রাকৃতিক রঙের জনপ্রিয়তা বাড়ছে

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ন্যাচারাল ডাইয়ের পোশাক। প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত রং ও প্রক্রিয়াকরণ শ্রমবহুল বলে দাম বেশি, দরকার বাড়তি সতর্কতাও। তবু ফ্যাশনপ্রেমীরা ভালোবেসে গ্রহণ করছেন এই ফ্যাব্রিকস। পোশাকের প্রাকৃতিক রং নিয়ে লিখেছেন মারজান ইমু

 

কেন প্রাকৃতিক রং-

প্রাকৃতিক রং ও ত্বকের সুরক্ষা দুই-ই মিলবে ন্যাচারাল ডাই ফ্যাব্রিকসে। ওয়ার্ডরোব খুঁজলে একটা ন্যাচারাল ডাইয়ের পোশাক পাওয়া যাবে না, আজকাল এমন মানুষ পাওয়া একটু কঠিন হবে। অথচ এই রঙের শেড বেশ সীমিত বলা চলে। আর যে রংগুলো প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায়, সেগুলো খুব উজ্জ্বল বা চকচকেও হয় না। প্রাকৃতিক রং সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম ফ্যাশন ও টেক্সটাইল ডিজাইনার এস এম মাঈন উদ্দিন ফুয়াদের কাছে। জানালেন, ‘প্রাকৃতিক রং পাওয়া যায় চা, মেহেদিপাতা, ইন্ডিগো ডাস্ট, কাঁঠাল, ডালিয়া ফুল, ডালিম ফলের খোসা, হরীতকী, ঝাউগাছ, গাঁদা ফুল, সুপারি, পেঁয়াজ, গাব ফল, হলুদ, চাঁপা ফুল, ইউক্যালিপটাস গাছের বাকল, খয়ের, অর্জুন বাকল ও মনজিস্ট গাছের শিকড় থেকে। এই সব কটি উপাদান রং পাকা করার জন্য এবং রঙের বিভিন্ন শেড আনার জন্য ব্যবহার হয়।’

 

পোশাক : কে ক্রাফট

 

বাজারি হাল-

হাল ফ্যাশনে ন্যাচারাল ডাইয়ের হালচাল নিয়ে ফ্যাশন হাউস সিগনেটের ডিজাইনার ফারজানা রিপা বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে অর্গানিক রঙের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। অর্গানিক বা প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো হচ্ছে প্রাকৃতিক সুতার তৈরি ফ্যাব্রিকস, যেমন সুতি, সিল্ক ও অ্যান্ডি ও মসলিনকে। যুগের হাওয়ায় এখন ন্যাচারাল ডাইয়ের পোশাকে নিত্যনতুন নকশা যোগ করছেন ডিজাইনাররা। ন্যাচারাল ডাইয়ের পোশাকে এমব্রয়ডারি, প্যাচওয়ার্ক ও হাতের কাজের নকশা হচ্ছে। কাটিং প্যাটার্নেও অনুসরণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ধারা।’ বাজার ঘুরে দেখা গেল—ছেলে, মেয়ে ও শিশুদের সব ধরনের পোশাকে বিভিন্ন শেডের ন্যাচারাল ডাই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া গজ কাপড়, বিছানার চাদর, স্যান্ডেল, এমনকি গয়না ও ব্যাগেও ব্যবহূত হচ্ছে প্রাকৃতিক রং। প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো পোশাকে বৈচিত্র্য আনতে ডিজাইনে থাকছে এমব্রয়ডারি, ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হাতের কাজসহ বিভিন্ন ডিজাইন মাধ্যম। ন্যাচারাল ডাইয়ের সঙ্গে ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্টের নকশায় তৈরি হচ্ছে ফিউশন ডাই নকশা। ফ্যাশন হাউস অরণ্যর হেড অব মার্কেটিং মাকানুর রহমান জানান, ‘ন্যাচারাল ডাই কাপড়ের রঙের নকশায়ও তুলে ধরা হচ্ছে প্রকৃতিকে। দেশীয় ঐতিহ্য ফুল, পাতা-লতা, কলকি ইত্যাদিতে দেশীয় নকশা অনুসরণ করা হচ্ছে।’

 

পোশাক : কে ক্রাফট

 

যত্ন-আত্তি-

কাপড়কে প্রাকৃতিক রঙে রাঙাতে অতি উচ্চ তাপমাত্রা এবং অতিমাত্রায় এসিড বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয় না। তাই প্রাকৃতিক রং কৃত্রিম রঙের মতো উজ্জ্বল ও চকচকে হয় না। এ ছাড়া সূর্যের প্রখর আলোতে ন্যাচারাল ডাই রং তার উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে। কে ক্রাফটের ডিজাইনার খালিদ মাহমুদ খান বললেন, ‘ন্যাচারাল ডাই ফ্যাব্রিকস ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কড়া রোদ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া ধোয়ার সময়ও যত্নবান না হলে কাপড়ের রং স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায়। আমাদের শরীরের ঘামও ন্যাচারাল ডাই করা কাপড়ের রং নষ্ট করে দেয়। সবচেয়ে ভালো হয় লিকুইড ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ছায়ায় শুকাতে দিন। সম্ভব হলে এই ফ্যাব্রিকস ড্রাই ওয়াশ করুন।’

 

 

 

কোথায় পাবেন-

ফ্যাশন হাউস আড়ং, কে ক্রাফট, অরণ্য, কুমুদিনী, প্রবর্তনা, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, অঞ্জন’স, যাত্রা, বাংলার মেলা, দেশাল, বনজ, সাদাফ ডিজাইন কালেকশনসহ প্রায় সব ফ্যাশন হাউসই এখন প্রাকৃতিক রং নিয়ে কাজ করছে। ব্র্যান্ড শপ ছাড়াও অনলাইনভিত্তিক পোশাকের দোকানগুলোয় বিক্রি হচ্ছে ভেজিটেবল ডাইয়ের শাড়ি, কামিজ, পাঞ্জাবি ও শিশুদের পোশাক।

 

 

 

 

সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ