পুরুষের আনুষ্ঠানিক পোশাক
ক্লাসে তো টি-শার্ট পরেই দে ছুট। কিন্তু বিশেষ অনুষ্ঠানে কিংবা কর্মক্ষেত্রে চাই আনুষ্ঠানিক পোশাক। সঙ্গে মানানসই অনুষঙ্গ। টাই, বো, কোটপিন, জুতা, মোজা, ঘড়ি...। সবকিছু চাই সবকিছুর সঙ্গে মিলিয়ে, তবেই না পরিপাটি পুরুষ!
নিজেকে পরিপাটি রাখার জন্য চাই পছন্দের সমকালীন ধারার পোশাক। আনুষ্ঠানিক পোশাক কর্মক্ষেত্রনির্ভর হলেও এটি এখন দৈনন্দিন পোশাকে রূপ নিয়েছে। দিন বা রাত যখনই হোক—আনুষ্ঠানিক বা ফরমাল শার্ট, যেকোনো ফরমাল প্যান্ট বা টুইল চিনোসের সঙ্গে পরলে সবার মধ্যে আলাদা হয়ে থাকবেন। অনুষঙ্গ হিসেবে থাকবে ভালো ব্র্যান্ডের ঘড়ি ও বেল্ট।
ফ্যাশন হলো পোশাকের মাধ্যমে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশের শিল্প। এই প্রকাশভঙ্গির গুরুত্ব সবাই হয়তো বুঝবেন না। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের পরবর্তী সময়কার মিলেনিয়াম ফ্যাশন আমাদের শিখিয়েছে, কীভাবে নিজের ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ তৈরি করতে হয়। শুধু ব্র্যান্ডের সুন্দর কিছু পোশাক পরলেই ফ্যাশন সচেতন হওয়া যায় না। প্রয়োজন নিজের ব্যক্তিত্ব ও অভিব্যক্তির সঠিক প্রকাশ এবং পোশাকের বিন্যাস।
কোট বা স্যুটে পকেট স্কয়ারের রং বিপরীত হলে ভালো। পোশাক: ইনফিনিটি
শার্ট হতে হবে চলতি ধারার-
প্রতিবছরই নতুন ধারা যোগ হচ্ছে ফ্যাশনে, যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ওয়ার্ডরোবে আনতে হয় নানা পরিবর্তন। এ ক্ষেত্রে মৌসুম যেটিই হোক, দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পুরুষের জন্য সব সময়ই ফ্যাশনে থাকবে ফুল বা হাফ হাতা শার্ট। চেনাজানা শার্টগুলোই রং, নকশা আর কাটের পরিবর্তনে পাচ্ছে নতুন নতুন চেহারা। সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তনেই একই চেহারার শার্ট হচ্ছে আরেকটু আধুনিক। তাই বলা যায়, জীবনযাপনের চলতি ধারার সঙ্গে থাকতে নতুন নকশা বা কাটের শার্ট ছাড়া আপনার ওয়ার্ডরোব যেন থাকবে কিছুটা ম্যাড়মেড়ে!
শার্ট–প্যান্ট–জুতার সঙ্গে ওয়েস্ট কোট এখন তরুণদের পছন্দ। পোশাক ও অনুষঙ্গ: ক্যাটস আই
এখন চলছে ফিটিং শার্ট-
বডি ফিটিং শার্ট এ সময়ের পুরুষদের পছন্দের শীর্ষে। এই শার্টের ফ্যাশনে নতুন সংযোজন নানা রকম রং। দিন বা রাতের দাওয়াত উপযোগী বডি ফিটিং শার্টের পেছনে লকার লুপ, ফ্যাগ ট্যাগ বা ফ্রুট লুপও ব্যবহৃত হচ্ছে ফ্যাশন ও ফিটিংস অনুসরণ করে। এ কারণে পোশাক পরে দেখে তারপর সেটি কেনার প্রচলন বাড়ছে। ট্রায়ালে প্রাথমিকভাবে পোশাকের ফিটিং ও ম্যাচিংয়ের গুরুত্ব বেশি। শার্টের ফিটের ক্ষেত্রে আরাম এবং দৈর্ঘ্যে মানানসই কি না, তা জানা জরুরি। কলার ও স্লিভের দৈর্ঘ্য ঠিক আছে কি না, দেখতে হবে সেটাও। পাশাপাশি দেখা চাই শোল্ডার ও কাফ ফিট করছে কি না এবং শার্টটি শরীরে সুন্দরভাবে আঁটসাঁট হচ্ছে কি না।
শার্টে বোতাম লাগানোর জন্য বিপরীত রঙের সুতার ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে গত বছর থেকে। শার্টে স্ট্রেট কাট থাকলেও পকেটের আশপাশে পিনটাকস, পেছনে কুঁচি থাকছে এখনকার ফ্যাশনে। তবে বুকপকেট ছাড়া শার্টের ফ্যাশন এখনো জনপ্রিয়।
শার্টের কলারের মাপের জন্য আন্তর্জাতিক নিয়ম হচ্ছে ইঞ্চির মাপ। সাধারণত ১৫ থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত কলারের মাপ হয়ে থাকে। শার্ট কেনার সময় তাই ইঞ্চিতে নাকি সেন্টিমিটারে, তা জেনে নিতে হবে। সাধারণত নিয়মিত, মিডফিট বা সেমি স্লিম ও স্লিম ফিটের শার্টই ক্রেতারা খুঁজে থাকেন।
কলার-কাফে অনেক পদ
শার্টের কলারের কাটগুলোর মধ্যে বেশি জনপ্রিয় বান কলার, পিন কলার, ট্যাব কলার, বাটন ডাউন কলার, স্প্রেড কলার, কাটওয়ে কলার। আরও কিছু কলার অনেকেই পছন্দ করেন। সেগুলো হলো আইলেট, উইনগস, ম্যান্ডারেন, স্মল উইনগস বা স্ট্যান্ডিং। তবে ফরমাল শার্টের স্প্রেড কলার হয়ে থাকে এবং এটি টাই ছাড়া কখনোই পরা ঠিক নয়। সাধারণত ব্যবসায়িক মিটিং কিংবা আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণের জন্য মানানসই বেশি। অফিসের কাজে বাইরে গেলে বিজনেস ক্যাজুয়াল চলতে পারে।
কাফের ক্ষেত্রে ফ্রেঞ্চ কাফ, কনভার্টেবল স্কয়ার কাফ, এক বোতামের মিটার্ড কাফ বেশ জনপ্রিয়। এ দেশের এখনকার ‘রেডি টু ওয়ার’ ব্র্যান্ডগুলোর প্রিমিয়াম মানের শার্টগুলোতে ফ্যাব্রিক টেক্সচার ও ড্রেপিং নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষাও হচ্ছে বেশ। এদিকে শার্টের কাট কাফলিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই সেটা দেখেই কিনুন। বাইন্ড, ট্রায়াঙ্গল, চার কোনা, ওভাল, কয়েন আকারের কাফলিং প্রচলিত রয়েছে এখনো।
জুতসই টাই-
চিকন টাইয়ের চেয়ে মোটা টাই তুলনামূলক বেশি আনুষ্ঠানিক লুক এনে দেয়। তবে শারীরিক আকৃতির সঙ্গে টাইয়ের আকৃতি মানানসই হতে হবে। সাধারণত ফরমাল টাইগুলোর প্রস্থ দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি। বিভিন্ন রকমের টাই রয়েছে। এর মধ্যে নেক টাই, অ্যাসকট টাই, বো টাই, বোলো টাই অন্যতম। টাই বাঁধারও কয়েকটি ধারা আছে। এগুলোর মধ্যে ফোর ইন হ্যান্ড নট, হাফ উইন্ডসর নট, ফুল উইন্ডসর নট, বো স্টাইল, ক্যাফে নট, এলদ্রেজ নট, ট্রিনিটি নট উল্লেখযোগ্য। তবে চিরায়ত ফ্যাশনে বো টাই অভিজাত্যের প্রতীক।
আভিজাত্য প্রকাশে বো টাই এখনো জনপ্রিয়
বটমে প্যাটার্ন বৈচিত্র্য-
ফেব্রিক বৈচিত্র্য থেকে প্যাটার্ন বা ডিজাইন সবকিছুতে সমকালীন একটা ভাব আনতে যেন উৎসাহী চলতি ফ্যাশনধারার প্রতিনিধিরা। ছেলেদের ট্রাউজারে তাই নিরীক্ষা এখন প্যাটার্ন, ছাপা আর কাপড়ের উপকরণে। আমাদের দেশে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো চিনোস বা ফরমাল নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী কাজ করছে, যা মূলত প্যাটার্ননির্ভর। তবে ট্রাউজার হালকা না গাঢ় রঙের হবে, তা নির্ভর করবে সামগ্রিক আউটফিট ও পরিবেশের ওপর।
অভিজাত পকেট স্কয়ার-
কোট বা স্যুটের পকেটে বিভিন্ন স্টাইল, আকার ও ভাঁজে রাখা যে রুমালসদৃশ কাপড় চোখে পড়ে, তা–ই পকেট স্কয়ার। পকেট স্কয়ার সব সময় টাইয়ের রং হতে ভিন্ন হওয়া চাই। বিভিন্ন উজ্জ্বল ও গাঢ় রঙের মিশেলে সুন্দর নকশার পকেট স্কয়ার এখন জনপ্রিয়। ফুলেল নকশার পকেট স্কয়ার, পেইসলি পকেট স্কয়ার, বার্গান্ডি পলকা ডট পকেট স্কয়ার, লিনেন পকেট স্কয়ার, এক রঙের ছাপা কাপড়ের পকেট স্কয়ার এখন বেশ জনপ্রিয়।
ঘড়ি: ইনফিনিটি
বাদ যাবে না অনুষঙ্গও-
ভালো পোশাকের সঙ্গে জুতসই অনুষঙ্গও চাই। জুতার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বেল্ট কেনাই ভালো। সাধারণত কালো ও খয়েরি রঙের জুতা ও বেল্ট ছেলেদের বেশি মানায়। আরেকটি কথা, যত নতুন মডেলের স্মার্টফোনই ব্যবহার করুন না কেন, হাতে ঘড়ি পরা আবশ্যক! জুতা পরুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে। লোফার, ব্রগ, মঙ্ক-স্ট্র্যাপস, অক্সফোর্ড বা ডার্বি জুতাতেই আসবে অভিজাতভাব। ইদানিং জুতার সঙ্গে পায়ে রঙিন মোজা পরার প্রবণতা তরুণদের মধ্যে বেড়েছে। এতেই বোঝা যায়, পুরুষেরাও এখন নিজস্ব স্টাইল তৈরি করতে আগ্রহী। এ দেশের ফ্যাশনেও তাই আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের কদর বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো