
ভালবাসার যত্ন নিন
ভালোবাসার কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকে সম্পর্ক। তাতে প্রলেপ জড়িয়ে দেয় পারস্পরিক বিশ্বাস, একে অন্যের প্রতি খেয়াল, যত্ন। সম্পর্ক তৈরি করা যতটা না সহজ সেটি রক্ষা করা তার চেয়েও অনেক কঠিন। ছোট্ট একটি ভুলের কারণে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সম্পর্কের এই টানাপড়েনে শুধু যে একজনই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, দুই পক্ষকেই এই ক্ষত বয়ে বেড়াতে হয় সারা জীবন। ভালোবাসার মূল ভিত্তিই হলো বিশ্বাস। শুধু আবেগ নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ ও বিশ্বাস দিয়ে সম্পর্কের পরিচর্যা করতে হবে। যখন একজন ভেবে নেন যে তার সঙ্গী ঠিক তার মতো করে ভাবছেন, তার মতের গুরুত্ব দিচ্ছেন, দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছেন তবে সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। এর উল্টোটা হলেই জমতে শুরু করে অভিমান। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব চলে আসে। এই দূরত্ব থেকেই তৈরি হয় ভাঙন। তা যেন না হয় সে জন্য কিছু বিষয়ে সঙ্গীর সঙ্গে আগে থেকেই মানিয়ে নেওয়া উচিত। সম্পর্কেরও পরিচর্যা করতে হবে।’
কিভাবে সম্পর্ক ঝালিয়ে নেবেন তাই নিয়ে কিছু উপায় বাতলেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মেখলা সরকার।
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ :
সঙ্গীকে শ্রদ্ধা করুন। তার মতের সঙ্গে সব সময় আপনার মতের মিল নাও হতে পারে। তাই বলে নিজের মতামত সঙ্গীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে বরং উল্টোটাই ঘটবে।
পছন্দ-অপছন্দের খোঁজ :
সঙ্গী কী ভালোবাসে, কী তার পছন্দ আগে থেকেই জেনে নিন। তারপর সে মোতাবেক সব কিছু বাছাই করুন। সঙ্গীর কোনো পছন্দ-অপছন্দ আপনার ভালো না লাগলে সেটা তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন।
সুন্দর ব্যবহার :
রেগে গিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে কখনোই উল্টোপাল্টা আচরণ করে বসবেন না। ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।’ রাগের ফল কখনোই ভালো হয় না। সঙ্গীর কোনো আচরণ ভালো না লাগলে তখন তখনই প্রতিবাদ করতে যাবেন না। পরে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন। লক্ষ রাখবেন সঙ্গীর প্রতি আপনার আচরণে যেন কৃত্রিমতা প্রকাশ না পায়।
প্রতিদিন একান্তে কিছু সময় :
ব্যস্ত জীবনে একে অন্যকে দেওয়ার সময় কোথায় আমাদের। সন্তান, সংসারের জাঁতাকলে জীবন অতিষ্ঠ হতে দেওয়া যাবে না। এর মধ্যেই প্রিয়জনের জন্য কিছু সময় আলাদা করে বরাদ্দ রাখতে হবে। হতে পারে সকালে দুজন একসঙ্গে কফি পান কিংবা বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিটের আলাপন। সে যে আপনার জীবনের বিশেষ কেউ এটা সঙ্গীকে বুঝিয়ে দিন। আপনার সান্নিধ্যে যেন সে ইনসিকিউরড ফিল না করে। এই ভরসাটুকু যেন সঙ্গী আপনার কাছ থেকে পায়।
ঘুরতে যান বাইরে কোথাও :
নিজের কাজের বাইরে পুরো সময়টুকু ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে কাটাতে চেষ্টা করুন। অফিস কিংবা চাকরি থেকে লম্বা ছুটি পেলে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে আসুন নান্দনিক কোনো জায়গা থেকে।
মাঝেমধ্যে চমকে দিন :
চমক কে না ভালোবাসেন। মাঝেমধ্যে সময় পেলে সঙ্গীকে তার কর্মস্থলে পৌঁছে দিন। অফিস থেকে ফেরার পথে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিন। ছোট ছোট এই চমকগুলোই সম্পর্কটাকে দীর্ঘমেয়াদি করে তুলবে। অফিসে স্ত্রীর দেওয়া খাবার খাওয়ার পর তাকে ফোন করে ধন্যবাদ জানান। বৃষ্টির দিনে বাইরে থেকে খাবার কিনে নিয়ে যান। সেদিনের রান্নার সময়টা দুজন মিলে উপভোগ করুন। প্রকৃতিকে উপভোগ করুন একসঙ্গে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন :
সঙ্গী আপনাকে খুশি করতে কোনো উদ্যোগ নিলে হাসিমুখে তাকে স্বাগত জানান। বিশেষ কোনো খাবার রান্না করলে, কোনো কিছু উপহার দিলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তাকে ধন্যবাদ জানান।
তুলনা নয় :
সঙ্গীকে কারো সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। অমুক এটা করে, তমুক তো তোমার মতো না। ও পারে তুমি কেন পারো না বলে সঙ্গীকে দোষারোপ করতে যাবেন না। সব সময়ই সঙ্গীর সহযাত্রী হওয়ার চেষ্টা করুন। শুধু সুখে নয়, দুঃখের দিনেও তার পাশে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে দাঁড়ান।
অতীত ঘাঁটবেন না :
আজ যা বর্তমান, কাল তাই অতীত। অতীতের ভুলত্রুটি আঁকড়ে ধরে রাখবেন না। সঙ্গীর অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভালো। বর্তমানের মানুষটাকে ভালোবাসুন।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ