শিশুকে ভালো স্পর্শ -মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে ধারণা দিন
চারিদিকে এখন আমরা শিশুদের যৌন নির্যাতনের খবর শুনি। মেয়ে শিশুর সঙ্গে সঙ্গে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ছেলে শিশুরাও।
শরীরের ব্যক্তিগত অংশে যখন অন্য কেউ অযাচিতভাবে স্পর্শ করে থাকে। শিশু থেকে কিশোর-কিশোরীরাও অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের স্পর্শের বিষয়টা বা তাদের সঙ্গে কি হচ্ছে সেটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারে না। ফলে ক্রমাগত শিশুরা এ ধরনের ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেতে থাকে।
শৈশবে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা শিশু-কিশোরের মানসিক গঠনে গভীরভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন- ব্যক্তিত্বের ত্রুটি, মেয়েশিশুর ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে পুরুষের প্রতি অবিশ্বাস বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, দাম্পত্যে ও যৌন সর্ম্পকে সমস্যা ইত্যাদি।
তাই এই ভয়াল থাবা থেকে নিজের শিশু সন্তানকে রক্ষা করার জন্যে প্রথম থেকে তাদের এই বিষয়ে বোঝাতে হবে। কোন স্পর্শটি তাদের জন্য ভালো আর কোনটি খারাপ সেই সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা দিতে হবে। আর এই শিক্ষাটা শুরু করতে হবে ঘর থেকেই।
কিভাবে বোঝাবেন ?
শিশুকে তার সারা শরীরের বিভিন্ন অংশের (শরীরের ব্যক্তিগত অংশসহ) সঠিক (অ্যানাটমিক্যাল নাম) নাম শিখান। সঠিক নাম জানলে শিশু শরীরের এসব অংশ নিয়ে বিব্রত থাকে না এবং কেউ অনাকাঙ্খিতভাবে স্পর্শ করলেও অন্যের কাছে সঠিক ভাবে বলতে পারবে।
তাকে জানান শরীর একান্তই তার নিজস্ব এবং তার আওতাধীন। কোন আদর কতটুকু গ্রহন করবে বা করবে না, সেটার সম্পূর্ন অধিকার তার। যে কোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো আদর কে সে না বলতে পারবে।
বিভিন্ন স্পর্শ সম্পর্কে ধারণা দিন-
কোন স্পর্শগুলো ভালো এবং কোনগুলো ভালো নয় সেগুলোর ধরন সম্পর্কে জানতে দিন।
শিশুকে জানান কিছু স্পর্শ ভালো না লাগলেও সেগুলো তার শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে। যেমন- যখন তাকে পরিস্কার করার জন্যে (ডায়াপার পরির্তন, গোসল করানো, বাথরুমে নিয়ে যাওয়া, শৌচকাজে সাহায্য করা এবং চিকিৎসকদের কোন স্পর্শ ভালো না লাগলেও করা যেতে পারে।
কিন্তু এর বাইরে অর্থ্যাৎ প্রয়োজন ছাড়া কেউ যদি ব্যক্তিগত অংশ (বুক, নিতম্ব, ঠোঁট ও যৌনাঙ্গ) স্পর্শ করে এবং ভয় দেখায় যেন অন্যের কাছে বলতে পারবে না বা এটা গোপন একটি খেলা।
আলোচনা করুন সহজ ভাবে-
ভালো স্পর্শ, খারাপ স্পর্শ শেখানোর সময় শিশুর সাথে সহজ ভাষায় কথা বলুন। কোন কঠিন ভাষায় বোঝাতে গেলে, বিষয়টি তাদের কাছে ভয়ের হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করাও ঠিক নয়। বরং দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের ভেতরে তাকে বুঝিয়ে বলুন।
কোন বয়সে বোঝাবেন ?
এ বিষয় নিয়ে শিশুর সাথে কোন বয়সে কথা বলবেন তার কোন ধরাবাধাঁ নিয়ম নেই। বিশেষত বাচ্চাকে যখন অন্যের কাছে একা ছাড়বেন, তখন থেকেই বিষয়টা নিয়ে অল্প অল্প কথা বলা শুরু করা উচিত।
তবে শিশুর বয়স পাচঁ বছর হওয়ার আগেই তাকে প্রাইভেট পার্ট সম্পর্কে বোঝানো জরুরি। তাকে বোঝাতে হবে, ওইসব অঙ্গতে হাত দিয়ে বা অন্য কোন ভাবে কখনোই আদর করা ঠিক না। এমনকি , কেউ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করেও সেসব প্রাইভেট পার্টে হাত দিতে পারবে না, তা শিশুকে সব সময় বোঝাতে হবে।
অনুমতি নিন-
বাবা-মা বা কাছের কেউ শিশুকে গোসল করাতে বা জামা পাল্টানোর সময়, শিশুর প্রাইভেট পার্টে হাত দেয়ার আগে তার অনুমতি নিয়ে করার চেষ্টা করুন। এতে শিশু শিখবে, অনুমতি ছাড়া মা-বাবা সহ অন্য কেউই তার প্রাইভেট পার্টে হাত দিতে পারে না। এর ফলে সে সতর্ক হতে শিখবে।
অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে শিশু কি করবে ?
শিশুকে আগে থেকেই বলে রাখুন, বড়দের কোন আদর যদি শিশুর অস্বস্তিকর লাগে তাহলে ওই ব্যক্তিকে সরাসরি ও দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলতে হবে। ওই মুহুর্তে সেখান থেকে সরে আসতে হবে এবং ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তির সাথে কখনোই একা থাকা যাবে না। এ ধরনের কিছু ঘটলে সাথে সাথে বাবা-মা কে জানাতে হবে।
শিশুকে ভরসা দিয়ে রাখুন, এ রকম ঘটনার ক্ষেত্রে সন্তানের নিরাপত্তায় আপনি সব সময় তার পাশে আছেন। সে যেন নির্দ্বিধায় আপনার উপর ভরসা করতে পারে তা খেয়াল রাখুন। তাতে যে কোন ব্যাপারেই সে আপনাকে বলতে সংকোচবোধ করবে না।
সেই সাথে মনে রাখবেন, সন্তানের অনাকাঙ্খিত স্পর্শের ভয়ে শিশুকে কারও সঙ্গে মিশতে না দেয়া বা বাইরে খেলতে না দেয়াও ঠিক নয়। খেলাধুলা বা সামাজিক মেলোমেশা শিশুর সামাজিক দক্ষতা বাড়ায়, যা শিশুকে অনাকাঙ্খিত বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। তাই তাকে আটকে না রেখে সচেতন হতে শিখান।