চুল পড়া কমাবেন কিভাবে ?

চুল পড়া কমাবেন কিভাবে ?

চুল পড়া আমাদের সবারই কমন একটি সমস্যা। দিনে ৫০-৮০টি চুল পরা নরমাল বিষয়। কিন্তু আমাদের বেশীর ভাগ মানুষেরই এর থেকেও অনেক বেশী চুল পরার সমস্যা আছে। কিভাবে সমস্যা কমাবেন? তাহলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে চুল কেন পরে, তারপর জানবেন কিভাবে এই সমস্যা কমাবেন। চলুন জেনে নেইঃ

চুল পরার কারন-

স্বাস্থ্য সমস্যা- প্রেগনেন্সির কারনে হরমোনাল চেঞ্জ, থাইরয়েড ডিসঅর্ডার, রক্তস্বল্পতা, খাদ্য পরিপাকে সমস্যা।

স্ট্রেস- এটা চুল পড়ার অন্যতম একটি সমস্যা। আমাদের এত বেশি ব্যস্ততায় এবং অস্থির সময় পার করতে হয় যে, স্ট্রেস এর প্রভাব শরীরেও পরে। তাই শান্ত থাকার চেষ্টা করবেন সবসময়।

জেনেটিক- মা অথবা বাবার দিক থেকে বংশানুক্রমেও চুল পড়ার সমস্যা থাকে।

ডায়েট- অনেক সময় ওজন নিয়ন্ত্রনের জন্য ডায়েট করার কারনে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, প্রোটিন এবং মিনারেল এর ঘাটতির কারনেও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়।

স্ক্যাল্প এর সমস্যা- মাথার ত্বকে একজিমা বা ফাঙ্গাল সমস্যার কারনে চুল পরতে পারে।

হিট ট্রিটমেন্ট- চুলে ব্লো ড্রাই অথবা হেয়ার স্ট্রেইট অথবা হেয়ার স্টাইলিং এর জন্যে চুলে প্রচুর হিট দিতে হয়, যা চুলকে ড্যামেজ করে দেয় আর চুল পড়ার সমস্যাও বেড়ে যায়।

যত্নের অভাব- নিয়মিত যত্ন না নিলেও চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে।

প্রতিকার-

স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রতিকার- এ সমস্যায় ডাক্তারে শরনাপন্ন হতে পারেন, তিনিই আপনাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ওষুধ এর নির্দেশনা দিতে পারবেন।

ডায়েট সমস্যার প্রতিকার- ওজন নিয়ন্ত্রন করতে যেয়ে আপনার চুল ও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা সেদিকেও নজর দিন, ডায়েট করবেন বলেই প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল যেন বাদ না পরে সেটা খেয়াল রাখুন। ব্যালান্স ডায়েট খান, প্রতিদিন প্রোটিন (ডিম,সয়া ইত্যাদি, ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ (মিস্টি আলু, গাজর, পালং শাক) ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং প্রয়োজনী মিনারেল (জিঙ্ক এবং আয়রন) সমৃদ্ধ খাবার খান। দিনে ২-৩ লিটার পানি পান করুন।

মাথার ত্বকের সমস্যা- মাথার ত্বক নিয়মিত পরিস্কার করুন। চুলের গোড়া ঠিক থাকলে চুলও স্বাস্থ্যবান থাকবে। চুলে খুশকি থাকলে কিটোকোনাজল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সবচেয়ে ভাল হয় একজিমা বা ফাঙ্গাল সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করলে।

হিট ট্রিটমেন্ট সমস্যা- ব্লো ড্রাই অথবা হেয়ার স্ট্রেইট যতটা সম্ভব কম করার চেষ্টা করুন, মাসে ১/২ বারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করুন।

চুলের যত্নে কিছু টিপসঃ

  • শুস্ক চুল হলে সপ্তাহে একবার আর তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩ বার শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করুন। এর বেশী চুলে ধোয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন কারন অতিরিক্ত চুল ধুলে, চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
  • চুল ধোয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই চুল শুকাতে দিবেন, কিছুটা শুকালে আঙ্গুলের সাহায্যে চুলের জট ছাড়াবেন আর শুকানোর পর মোটা দাতের চিরুনির সাহায্যে চুল আচড়ে নিন। ভেজা চুল চিরুনী দিয়ে আচড়াবেন না, এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়/ চুল ছিড়ে যায়।
  • প্রতি সপ্তাহে ঘরে তৈরি যে কোন হেয়ার প্যাক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। ৪ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল এর সাথে ৩ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন এর সাথে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মেশান। এই মাস্কটি চুলে ৪৫ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক এর পরিমান মাঝারি দৈর্ঘ্যের চুলের জন্যে প্রযোজ্য, আপনার চুলের দৈর্ঘ্য বেশী হলে পরিমান বাড়িয়ে নিবেন।
  • চুলে তেল লাগানোর আগে অথবা শ্যাম্পু করার আগে চুল আচড়ে নিবেন।
  • আপনার চুল তৈলাক্ত হলে সারারাত তেল লাগিয়ে না রেখে, গোসলের ২ ঘন্টা আগে লাগাবেন।
  • চুলে তেল লাগানোর সময় চুলের গোড়ায় খুব জোরে জোরে ম্যাসেজ করবেন না। এটা আপনার ‍চুলের ভালো করার চেয়ে ক্ষতি করবে বেশী। মৃদু হাতে চুলের গোড়া ম্যাসেজ করুন।
  • হট অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলের জন্য ভালো তবে বেশী পরিমান তেল লাগালে ভালো হবে ভেবে অতিরিক্ত তেল চুলে দেবেন না, এটা আপনার বালিশ নস্ট করে দিবে।
  • কেমিক্যাল বেসড কন্ডিশনার এর চেয়ে কয়েক ফোটা আরগান অয়েল কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

 

ছবিঃ সংগৃহীত