ঈদের শাড়ি
ঈদে চাই নতুন শাড়ি। আর তাই বাঙালি ললনারা ছুটেন বিভিন্ন দোকানে বাহারি ডিজাইনের শাড়ির খোঁজে। বাজার ঘুরে ঘুরে যাচাই বাছাই করে তারা কিনে আনেন মানানসই আর সবচেয়ে নান্দনিক শাড়িটি। ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে বিপণী বিতান আর বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলোও প্রস্তুত হয়েছে বাহারি ডিজাইনের শাড়ি নিয়ে।
ঈদে নারীর পছন্দের তালিকায় শাড়ির স্থান সবার ওপরে। এবারের ঈদেও নানা ডিজাইনের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। বেইলী রোডের শাড়ি বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে এবার শাড়িতে অল্প ডিজাইন ও হালকা রঙের কাজগুলো কমই প্রাধান্য পেয়েছে। তবে হাতের কাজের গর্জিয়াস শাড়িও আছে প্রচুর। ঈদের শাড়িতে যতটুকু না থাকে ঐতিহ্য তারচেয়ে বেশি থাকে বৈচিত্র্য। ঐতিহ্য আর বৈচিত্র্যকে ধারণ করে শাড়িকে বাঙালি নারীর কাছে জনপ্রিয় করেছে।
রেগুলার স্টাইলের জন্য সুতি ও মসলিন শাড়ি। এক প্যাঁচের জন্য সুতি শাড়ির কোনো বিকল্প নেই, তবে এক প্যাঁচের শাড়ি ঘরে পরাই ভালো। দেশের বিভিন্ন এলাকার মেয়েদের হাতের কাজের শাড়িসহ এবার ঈদে পাওয়া যাবে নানা ধরনের অভিজাত শাড়ি। নিম্নবিত্ত শ্রেণির কথা বিবেচনা করে অল্প দামের শাড়িতে উত্সবের আমেজ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আছে প্রাকৃতিক রঙের ডিজাইন ও নতুন ধরনের জুট কাতান শাড়ি।
ঈদের শাড়িতে যতটুকু না থাকে ঐতিহ্য, তারচেয়ে বেশি থাকে বৈচিত্র্য। ঐতিহ্য আর বৈচিত্র্যকে ধারণ করে কুমুদিনী ও আড়ং তৈরি করেছিল এক নতুন বাজার। টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির জনপ্রিয় করেছিল বাঙালি রমণীদের কাছে শাড়িকে। এবার ঈদে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে এসেছে এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের মসলিন ও জামদানি শাড়ি। এছাড়া আছে শিপন ও জর্জেট শাড়ি। গরমের কারণে শাড়ির রং হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে হালকা কালার। গোলাপি, বেগুনি, হালকা নীল, জলপাই, অ্যাশ, অফহোয়াইট কালার ব্যবহার করা হয়েছে শাড়িতে। মসলিন শাড়ির দাম পড়বে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। জামদানি, জর্জেট ও শিপন শাড়ির দাম পড়বে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। সুতি, সিল্ক, হাফসিল্ক ও মসলিন শাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে ঈদ উত্সবের রং। ডিজাইনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাপ্লিক, সুতার কাজ, কারচুপি, ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্টসহ নানা মাধ্যম।
ফ্যাশন হাউস আড়ং, অঞ্জন’স, কে ক্র্যাফট, বিশ্বরঙ, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির ও অন্যান্য হাউসগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে নান্দনিক ডিজাইনের শাড়ি। শাড়ির বাজারে যাবেন আর বেইলি রোডে যাবেন না, তা তো হয় না। অসংখ্য শাড়ির দোকান রয়েছে, যেখান থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের শাড়িটি। তবে এখানকার বিক্রেতারা খুব একটা খুশি নন। তারা বলেছেন ক্রেতার সংখ্যা কমেছে অনেক। যানজটের কারণে ধানমন্ডি আর গুলশানের ক্রেতারা এদিকে আসা ছেড়েই দিয়েছেন।
আজিজ সুপার মার্কেটে রয়েছে আরও কিছু শাড়ির দোকান—নবরুপা, দোয়েল সিল্ক, মনে রেখ শাড়িসহ বিভিন্ন দোকানে চলছে ক্রেতাদের যাওয়া-আসা।আর যাদের বাজেট একটু বেশি তারা যেতে পারেন বসুন্ধরা সিটি ও পিঙ্ক সিটিতে। এখানে শাড়ি রয়েছে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামেরও। স্মোক শিফনের শাড়ি, ধুপিয়ান কাতান, অপেরা জুট কাতান, গাদোয়ান কাতান, গাদ্দি কাতানসহ বিভিন্ন শাড়ি ক্রেতারা পছন্দ করছেন এবার।
ফ্যাশনে জামদানি শাড়ির প্রচলন সবসময়। তসরের ওপরে জামদানি কাজের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৭ হাজার টাকায়। এ ছাড়াও মসলিনে জরির কাজের শাড়ি, ভেজিটেবল ডাইংয়ের শাড়ি ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে পাওয়া যাচ্ছে।
ডি জা ই না র ভা ব নাঃ
বিপ্লব সাহা- নন্দিত ফ্যাশন ডিজাইনার ও কর্ণধার, বিশ্বরঙ
এবারের ঈদের শাড়িতে আমরা নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। যা শাড়িপ্রেমীদের কাছে ভালো লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ঈদের শাড়িতে সব ধরনের রং ব্যবহার করা হয়েছে। গাঢ় রং ছাড়াও গরমের কথা মাথায় রেখে সফট রঙও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এবার গরমে হঠাত্ করে যখন তখন বৃষ্টিও হচ্ছে। তাই আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে তাঁতের এক্সক্লুসিভ শাড়ির পাশাপাশি হাফসিল্ক, জামদানি, কাতান, মসলিন, রেশমি কটন শাড়িতে নান্দনিক ডিজাইনের কাজ করা হয়েছে। ঈদের দিন কিংবা অন্য যেকোনো উত্সবে পরতে চাই এইসব ডিজাইনের শাড়ি থেকে আপনার পছন্দেরটি অনায়াসেই বেছে নিতে পারবেন। প্রতিটি শাড়ির ডিজাইনে রয়েছে ভিন্নতা। যা উত্সবের শাড়ি হিসেবে আপনার পছন্দের প্রশংসা করবে অনেকেই। সব আয়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে এবং সবার সাধ্যমতো শাড়ির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ক্রেতারা দেড় হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার মধ্যেই নিজেদের পছন্দমাফিক শাড়ি কিনতে পারবেন। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে আমাদের বিভিন্ন আউটলেটগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু শাড়ি বা পোশাকের ওপর ছাড়ও চলছে।
মডেল : অপি করিম
পোশাক ও অনুষঙ্গ : বিশ্বরঙ
ছবি : অনিক আপন
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক
ছবিঃ সংগৃহীত