যে কারনে ভালবাসার পুরুষকেও ছেড়ে যায় নারীরা

যে কারনে ভালবাসার পুরুষকেও ছেড়ে যায় নারীরা

নারী তার সবটুকু দিয়ে সম্পর্কে নিজেকে জড়ায়, তার হৃদয় এবং মন সবকিছু। সে ভালোবাসে অন্ধভাবে, যত্ন করে প্রশ্নাতীত। সে যখন ভালোবাসে সবকিছুতে তার সঙ্গীকেই নিজের চেয়েও বেশী প্রাধান্য দেয়।

বেশীরভাগ পুরুষ চায় এমন কোন নারীই তাকে তাকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিক, যে মন থেকে শক্ত এবং স্বাধীনচেতা, তার জীবনের নারী এমন হোক যে নিজেকে সম্মান করতে পারে, অন্যকেও সম্মান করে। যে নারী নিজের আত্নসম্মানবোধ সম্পর্কে সচেতন, সে সম্পর্কের যথার্থতাও ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম।

তার আত্নসম্মানবোধ প্রখর বলেই, নারী সঙ্গী যখন বুঝতে পারে যে পুরুষকে সে ভালবেসেছিল, বেছে নিয়েছিল সেগুলো এখন আর আগের মতো নেই, যা জেনেছিল বা ভেবেছিল ভুল জেনেছিল, সে যতটা নরম হয়ে সম্পর্কে জড়িয়েছিল ততটাই কঠিন হয়ে সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করে। তখন অর্থহীন বিষয়গুলোই নতুন করে তাকে ভাবতে শেখায়।

তেমন কিছু কারন যার জন্যে নারী তার ভালবাসার পুরুষকে ছেড়ে যায়ঃ

১. দুজনের পছন্দে অমিল-

মানুষ সময়ে সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। সে পরিবর্তন আপনার বা আপনার সঙ্গী যে কারো মধ্যেই আসতে পারে। যদিও সঙ্গীর সাথে পছন্দের বিষয়ে অমিল থাকাটা অনেকে উপভোগ করে কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে দুজনের পছন্দের মিল থাকাটা উচিত। ভেবে দেখুন সম্পর্কের শুরুতে দুজনের যে বিষয়ের মিলগুলো ছিল সেগুলো এখনও আছে কিনা, কারন সেটা কম হলেও আপনাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেটা জরুরী ভূমিকা পালন করেছিল আজও সেটা অটুট থাকা জরুরী।

২. যোগাযোগ কম থাকা-

মানুষ তার কথা সঙ্গীর সাথে শেয়ার করতে ভালোবাসে। যদিও সবার পক্ষে সারাক্ষন সে সময় দেয়ার সুযোগ থাকে না, তবে আপনি যদি বেশীর ভাগ সময়েই তার কথা শোনার সুযোগ না দেন, যে সময়গুলোতে সে আপনার সময় চাইছে, ক্রমাগত তা না পেতে থাকে, তবে অবশ্যই আপনার প্রতি তার নির্ভরতা কমতে শুরু করবে এবং সেটা অন্য জায়গায় তৈরি হবে।

আবার আপনি তার সাথে প্রতিনিয়ত থাকছেন কিন্তু সে কি বলছে সেটাতে মনোযোগ দিচ্ছেন না, শুধু মাথা নেড়ে যেতে থাকেন সেটাও কিন্তু আপনার জন্যে নেগেটিভ হতে পারে। দুজনের নিজেদের মধ্যে মনের যোগাযোগ থাকাটা খুব জরুরী।

৩. ফিজিক্যাল ইন্টিমেসি খুবই গুরুত্বপূর্ন-

নারীরও পুরুষের মতোই ফিজিক্যাল ইন্টিমেসি প্রয়োজন। আপনি যদি সেক্সুয়াল রিলেশন কম রাখতে শুরু করেন অথবা তার চাহিদাগুলোকে প্রাধান্য না দিতে থাকেন, তার কাছে মনে হতে পারে আপনি হয়েতো অন্য কোথাও সেই চাহিদা পুরন করছেন এবং ক্রমাগত এই ভাবনা আপনার থেকে তাকে দূরে সরাতে থাকে।

শারীরিক চাহিদা এখানে একমাত্র মুখ্য বিষয় তা বলা যাবে না, কিন্তু তার চাহিদার প্রতি আপনার মনোযোগ এবং সচেতনতা কতটুকু সেটাও আপনার ভালবাসা পরিমাপ করার উপায়।

৪. স্বার্থপরতা খুব বেশী-

আপনার যা ভালো লাগে, আপনি যেটাতে সুখী শুধু সেগুলোই নিয়েই আপনার চিন্তা. আপনার সঙ্গীর ভালোলাগা, খুশী নিয়ে আপনি চিন্তিত নন, আপনার সঙ্গীর কাছে ধীরে ধীরে নিজেকে আপনার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হতে শুরু করবে। আপনি যদি তাকে একা করে দেন, ধীরে ধীরে সে ও ভাবতে শুরু করবে আপনাকেও একা ছেড়ে যাওয়া উচিত।

সম্পর্কে দুজনের মধ্যেই পরস্পরের সাথে থাকার প্রয়োজন তৈরি করা উচিত। সে অপনার সাথে কেন থাকবে তার যথার্থ সুযোগ তৈরি করা উচিত। আপনি যদি আপনার দায়িত্বগুলো পালন না করেন, সম্পর্কে প্রয়োজনীয় অংশগ্রহন না রাখেন, ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে, একসময় সে দূরত্ব এতটাই বেশী হয় যে চাইলেও আর সেটা কমানো যায় না।

৫. অনিশ্চয়তা-

অনিশ্চয়তা স্লো পয়জনের মতো, সম্পর্ককে ধীরে ধীরে মেরে ফেলে। আপনার সাথে থেকেও তার মধ্যে নিজেকে নিয়ে অনিশ্চয়তা, সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা যদি থাকে, ধীরে ধীরে যে বিশ্বাস নিয়ে আপনার সাথে জীবন শুরু করেছিল সেটা কমতে শুরু করবে। আপনার সাথে থেকেও যদি তার মনে অনিশ্চয়তা থাকে, তারমানে আপনি তাকে ভালোবাসার সে অনুভূতি দিতে পারেননি যার কারনে সে আপনার প্রতি ভরসা রাখতে পারে। সেটা অবশ্যই আপনার ব্যর্থতা।

৬. অনেক বেশী মিথ্যা বলা-

সম্পর্ক তৈরি হয় বিশ্বাস এবং আস্থার উপর। হঠাৎ কোন কারনে ছোট-খাট মিথ্যা বলতেই পারেন, তবে ক্রমাগত সঙ্গীর সাথে মিথ্যা বললে, আস্থার ভিত নড়ে যায়, এরফলে সর্ম্পকে দূরত্ব তৈরি হয়। তাই যদি আপনার নারী আপনার থেকে দূরে সরাতে না চান তাহলে তার কাছে কিছু লুকোনো এবং মিথ্যা বলবেন না।

৭. কোন পারসোনাল স্পেস নেই-

আমাদের সবার জীবনেই পারসোনাল স্পেস এর প্রয়োজন আছে। আপনি বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যেতে পারেন, প্রতিদিন অফুরন্ত আড্ডা দিতে পারেন কিন্তু আপনার সঙ্গীর সে সুযোগ আপনি রাখেননি। আপনার সম্পর্কের বাইরে বন্ধুদের সাথে কাটানোর সুযোগ আছে, আর আপনার সঙ্গীর সেই সময় থাকবে না, শুধু আপনার সাথে সম্পর্কের দায়িত্ব পালন করতে হবে সেটা আপনাদের সম্পর্কের দূরত্ব বাড়াবে।

৮. আপনি অনেক বেশী শীতল আর আবেগ কম-

আবেগ থাকতে হবে মানে এই নয় আপনার সঙ্গীকে দামী কোন রেষ্টুরেন্টে ডিনারে নিয়ে যেতে হবে, দামী গিফট করতে হবে। অধিকাংশ নারীই জীবনে টাকার চেয়ে ভালবাসাকেই বেশী প্রাধান্য দেয়। নারী চায় আপনি তাকে বুঝবেন, তার প্রতি মায়া দেখাবেন ইত্যাদি।

যে সকল মানুষ সঙ্গীর প্রতি আবেগ দেখানোকে দূর্বলতা মনে করে অথবা শীতল আচরণ করাটাকে পুরুষত্ব মনে করে তাদের সর্ম্পক ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, আর একসময় এমন অবস্থায় পৌছায় যেখান থেকে সম্পর্ক আর আগের অবস্থায় ফেরানো যায় না। তাই সঙ্গীর সাথে থাকুন, তার সুখগুলো, দুঃখগুলো শুনুন সেটাই সে চায়।

৯. তাকে বদলাতে চান-

সে যা তাই দেখে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল, আপনি নিশ্চয়ই এমন কারো সাথে থাকতে চান না যে আপনার কথায় সব বদলে ফেলবে। যদি আপনি তেমনটাই চান, সেই মানুষটাই বদলে যাবে যে আপনার সাথে থাকতে এসেছিল।

১০. অন্যের সাথে তুলনা-

বেশীর ভাগ নারী সবচেয়ে কমন যে সমস্যার জন্য তার ভালোবাসার পুরুষ কে ছেড়ে যায়, যখন তার পুরুষসঙ্গী অন্য নারীর সাথে তাকে তুলনা করতে থাকে ।বিশেষ করে যদি তার অতীত গার্লফ্রেন্ডের সাথে তুলনা করে।

প্রতিটা মানুষই আলাদা, এটা খুবই অপমানজনক যদি অন্যের সাথে আপনি তাকে তুলনা করেন। এতে তার মনে হতে থাকবে সে আপনার জন্যে যে স্যাক্রিফাইস করছে সেটাকে আপনি হিসেবেই ধরছেন না, তার ছোটখাটো খুঁতগুলোকে মাইক্রোস্কোপের নিচে নিয়ে বড় করে দেখছেন, আর তাকে অপমান করছেন।

১১. ছোট বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাওয়া-

অনেক দীর্ঘ সম্পর্কও বড় বড় সমস্যার চেয়ে ছোট সমস্যাতেই ভাঙে বেশী। যারা ছোটখাট বিষয়গুলোতে সচেতন থাকে তারাই জীবনে সুখী হতে পারে। কারন তারা ছোটখাটো বিষয়ে যত্ন নেয়ার মধ্যেও সুখ খুজে পায়।

 

ছবিঃ সংগৃহীত