ঊনিশ-কুড়ি বয়সে ফ্যাশন এক্সপেরিমেন্ট
যখন উনিশ কুড়ি, মনের মধ্যেও তখন নানা কিছুর উঁকিঝুঁকি। এভাবে না ওভাবে, নিজেকে সাজাতে হবে আরেকটু ভিন্নভাবে। প্রচেষ্টা থাকে সবার মাঝে আলাদা করতে হবে নিজেকে। এই বয়সই তো নিজেকে নিয়ে সাহসী নিরীক্ষা চালানোর উপযুক্ত সময়। তাই সাজগোজ আর হেয়ার স্টাইলের চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে পরিহিত পোশাকের ওপর।
একটা সময় ছিল, এই বয়সের ছেলেমেয়েরা নিজেদের হিপহপ লুকে উপস্থাপনের জন্য শুধুই প্রাধান্য দিত জিন্স, টি-শার্ট বা শার্টকে। এক কথায় ওয়েস্টার্ন পোশাকগুলোই তখন প্রাধান্য পেত। বর্তমানে এই সারিতে যোগ হয়েছে ফিউশনধর্মী পোশাক পর্ব। আঁটোসাঁটো ড্রেসে নিজেকে বন্দী না রেখে ধীরে ধীরে ট্রেন্ড সরে যাচ্ছে খানিকটা ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাকের দিকে। লুকে ভিন্নতা আনতে আর গরমে স্বস্তির জন্য এই পোশাকই এখন সেরা।
ঢিলেঢালা ফ্যাশন সম্পর্কে অনেকেই ভাবেন বেঢপ আকারের পোশাক মানানসই হয় না। অথচ এতে যে কাউকে দেখায় আকর্ষণীয়। এখন বড় সাইজের শার্টের পাশাপাশি টিউনিক, স্কার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেটও ওভার সাইজড পাওয়া যায়। মসিনো বা গুচি ব্র্যান্ডের মতো দেশীয় ডিজাইনাররা আজকাল এ ধরনের আউটফিটে বেশ প্রাধান্য দিচ্ছেন।
আজকাল মেয়েরা লুজ ফিটিং কুর্তি, টপস বা শার্টে নিজেকে দারুণভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন। স্কিনকালার টাইটস বা কুর্তির সঙ্গে রং মিলিয়ে পরছেন লোয়ার পার্ট। আপারপার্ট হিসেবে পাতলা সুতির ফোর পার্ট অথবা ওভার সাইজড পোশাকটি গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছেন। কেউ চাইলে গলায় একটি স্কার্ফ ঝুলিয়ে নিচ্ছেন। লম্বা ঝুলের ওয়ান পার্ট কামিজও এখন দারুণ মানানসই। জিন্সের সঙ্গে সিল্কের শার্ট খারাপ লাগবে না। তবে যে পোশাকই পরুন না কেন নতুন ট্রেন্ড ও স্টাইল মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। এখানে সমন্বয়টা জরুরি। যেমন টপস ও বটমসের কম্বিনেশন- দুটো মানানসই ও আকর্ষণীয় হওয়া প্রয়োজন। শুধু ওভার সাইজড কোনো ড্রেস পরলেই হলো না, ঠিকভাবে পরা হচ্ছে কি না, সেটাও দেখতে হয়।
বিগ সাইজ টপ পরলে স্লিম ফিটেড বটমস পরা চাই। এতে দুটোর কম্বিনেশন ও কনট্রাস্ট ঠিক থাকে। ঠিক তেমনি ঢিলেঢালা বটমসের সঙ্গে ফিটেড টপস দেখতে স্টাইলিশ। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে টপস যদি ওভার সাইজড শার্ট, টি-শার্ট বা টিউনিক হয়, তাহলে সঙ্গে স্কিন টাইট ট্রাউজার বা টাইটস মানানসই ও ট্রেন্ডি। অন্যদিকে বটমসে পালাজো বা বিগ সাইজের ট্রাউজার যদি পরা হয়, তাহলে টপস একটু ফিটেড হলে সামঞ্জস্যপূর্ণ দেখায়। মেয়েরা ওভার সাইজের মধ্য থেকে খানিকটা শেপ দেখাতে চাইলে অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করতে পারে। এ জন্য কোমরে ব্যবহার করতে হবে বেল্ট। সাজগোজে পোশাকের সঙ্গে একটি শোল্ডার ব্যাগই যথেষ্ট। পায়ের জুতাটিও সাধারণ হওয়া ভালো, হিল বা চকমকে স্টোনের দিকে না যাওয়াই ফ্যাশনসম্মত। নইলে পুরো গেটআপই বেখাপ্পা দেখাবে।
এ ধরনের পোশাকে ফেব্রিকের কোয়ালিটির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে, যাতে এই পোশাক আরও আকর্ষণীয় দেখায়। পোশাকের কাট ও প্যাটার্ন নিয়েও গবেষণা চলছে। সদ্য যৌবনে পা দেওয়া মেয়েদের জন্য মূলত ক্যাজুয়াল লুক আনতে এই ধরনের পোশাক অসাধারণ। সিমপ্লিসিটি এই স্টাইলের বৈশিষ্ট্য। তাই যতটা সম্ভব মেকআপ ও অ্যাকসেসরিজ কম পরা ভালো। শুধু অ্যাকসেসরিজের মাধ্যমেও এই স্টাইল ফলো করা সম্ভব, সে জন্য বিগ সাইজ অ্যাকসেসরিজ পাওয়া যায়। তবে স্বতঃস্ফূর্ত থাকাটা জরুরি।
অ্যান্টি ফিট, লুজ ফিট বা ওভার সাইজ যে নামই হোক, দিন দিন সবাই এই স্টাইলের দিকে ঝুঁকছে। স্ট্রিট ফ্যাশন থেকে জাঁকজমক, ছুটির দিনের পোশাক থেকে ফরমাল, কিংবা ক্যাজুয়াল ওয়্যার থেকে রেড কার্পেট সব জায়গায় চোখে পড়বে এই ফ্যাশন। লুকে ভিন্নতা আনতে তো বটেই, গরম থেকে মুক্তি পেতেও এই ট্রেন্ড জমে উঠতে পারে।
পোশাকের সঙ্গে সাজগোজের ব্যাপারে খুব বেশি মনোযোগী না হলেও চলে। সাদামাটা সাজসজ্জা উপযুক্ত। কেউ চাইলে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে এন্টিক ম্যাটেরিয়ালের মালা, ব্রেসলেট বা চুড়ি, ঘড়ি, পুঁতির মালা, বিডসের মালা পরতে পারেন। তবে স্টাইলিশ এক্সেসরিজের ব্যবহার এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়।
পোশাকের সঙ্গে রং ম্যাচিং করে ওড়না পরতে পারেন অথবা একেবারে বিপরীত রংও বেছে নিতে পারেন। ফেন্সি ওড়নাগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা যেকোনো পোশাকের সঙ্গে একাধিকবার পরা যায়। জুতার ক্ষেত্রে স্লিপার, সু, কনভার্স, কেডস সবই মানিয়ে যায়। তবে হাই-হিল বা কারুকাজের জুতা একদমই মানাবে না।
রং বাংলাদেশ, নাগরদোলা, কে-ক্রাফট, আড়ং, বসুন্ধরা সিটিসহ দেশের প্রায় সব ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাবে এই ধরনের পোশাক। দাম পড়বে ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।
এ ছাড়া মনের মতো ট্রেন্ডি পোশাকটি বেছে নিতে নিউমার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনীচক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে যেতে পারেন। সুলভ মূল্যে হাজারো ডিজাইনের কুর্তি, কামিজ, শার্ট মিলবে এখানে। দাম পড়বে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ননব্র্যান্ডের পোশাকগুলো ৩৫০ থেকে শুরু হয়ে ১০০০ টাকা পর্যন্ত দাম পড়বে। কুর্তির সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট কিনতে পারবেন ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।
বিভিন্ন রঙের লেগিংস বা জেগিংস কিনতে পারবেন ২০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। সিঙ্গেল ওড়না কিনতে পারবেন ১৮০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। ফেন্সি ওড়নাগুলোর দামও হাতের নাগালে। প্রিন্টেড পোশাকে অনেকগুলো রঙের মিশেল থাকায় যে কোনো ওড়না বা প্যান্টের সঙ্গে পরা যাবে। দেখতেও বেশ ট্রেন্ডি লাগবে।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়