কর্মজীবী নারীর ছিমছাম গয়না
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা। অফিসে যেতে শাড়ি হোক বা কামিজ কিংবা হাল ফ্যাশনের পশ্চিমা পোশাক—পছন্দের অনুষঙ্গে গয়না তাঁর চাই। তাই বলে সব গয়না তো আর অফিসের পরিবেশে খাপ খায় না। অফিসে কেমন গয়না পরবেন, জানাচ্ছেন ডিজাইনার কনসালট্যান্ট চন্দ্রশেখর সাহাঃ
অফিসের গয়না এমন হওয়া উচিত যেন তা অন্যের চোখকে পীড়া না দেয়। সেন্স অব প্রোপরশন—অর্থাৎ পরিমিতিবোধ যেন থাকে সাজ-পোশাকে। অফিসের পরিবেশ আর বন্ধুর আড্ডা এক নয়, এ কথা আর নতুন কী! সেটা তো কমবেশি সবাই বোঝেন। সাজের বেলায় গয়নার বাছাইয়েও সেটি মনে রাখা দরকার। গাউন পরে যেমন অফিস করা বেমানান, তেমনি চওড়া হারও সেখানে একেবারে বেখাপ্পা। অফিসে পরার জন্য অর্নামেন্ট বক্সে তাই সাধারণ কিন্তু স্মার্ট গয়না রাখাই দস্তুর।
অনেকেই শাড়ি পরে অফিস করেন। অফিসে পরার শাড়ি যেমন খুব জমকালো হবে না, তেমনি তার সঙ্গের গয়নাটিও হতে হবে স্লিম অ্যান্ড স্লিক। সোনা-রুপার আবেদন চিরন্তন। ছোট কানপাশা বা পাথরের দুলের সঙ্গে চিকন চেইন পরা যেতে পারে। অফিসেও নানা উপলক্ষে অনুষ্ঠান হয়। তেমন দিনে রুপার চিকন চোকার তাঁতের শাড়িতে বেশ মানিয়ে যাবে। হাতে ব্রেসলেট বা বালা পরতে পারেন। তবে তা যেন খুব ভারি নকশার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আজকের কর্মব্যস্ত নারীর বেশির ভাগই সালোয়ার-কামিজে স্বচ্ছন্দ। তাঁরা শুধু কানে তুলে নিন এক জোড়া দুল। লম্বা বা ঝোলা দুল এড়িয়ে টপ বা নিদেনপক্ষে হালকা ঝুলের কানের দুল পরতে পারেন। গয়নার প্রতি ভালোবাসা গভীর হলে, কামিজের সঙ্গে বালাও মানিয়ে যাবে। নকশায় বেছে নিন সনাতনি বা ঐতিহ্যবাহী আদলের বালা। চিকন চুড়িও পরতে পারেন। অফিসের পরিবেশে মানিয়ে যায় এমন আংটিও আঙুলে পরে নিতে পারেন। সোনা, রুপার পাশাপাশি এখন মেটালও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নকশার বৈচিত্র্য আর সাশ্রয়ী বলে মেটালের গয়নার কদর এখন সর্বত্র।
করপোরেট কর্মীরা পশ্চিমা পোশাকে অফিসে পরতে পারেন ছোট কানপাশা, টপস বা ছোট ঝুলের কানের দুল। হাতে ব্রেসলেট, আঙুলে আংটি, ব্যস। এর চেয়ে বাড়তি কিছু হলেই বরং জবরজং লাগবে দেখতে।
হীরার গয়নাও লুকে এনে দিতে পারে আভিজাত্য। এখন গয়নার নামিদামি ব্র্যান্ডগুলো স্বতন্ত্রভাবেই নিয়ে এসেছে অফিস কালেকশন। তাদের শোরুমগুলোতেও চাইলে একবার ঢু মারতে পারেন। যেকোনো পোশাকে গলায় পেনডেন্ট বা লকেট পরা যেতেই পারে।
মুক্তার আবেদন চিরকালীন। কানে মুক্তার ছোট দুল, হাতে ব্রেসলেট বা সরু বালা পরে দেখুন। গলায় মুক্তার মালা। সহকর্মীর চোখেও জাগবে সমীহ। সাদা, সোনালি ও মিষ্টি গোলাপি রঙের মুক্তা সব পোশাকেই মানিয়ে যায়।
পাথরের গয়নাও হতে পারে আপনার অফিসসঙ্গী। সাদা স্টোন, রুবি, পান্না, জারকান—যেটিই পরুন না কেন, তার রং যেন খুব চকচকে না হয়। পাথরের আকারও যেন খুব বড় না হয়ে যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। মনে রাখুন, সাজ যেমন হালকা হবে, তেমনি গয়নার বাছাই হবে মিনিম্যালিস্ট ডিজাইনের। মেটাল, স্টোন, ইমিটেশনের গয়না তো সব বিপণিবিতানে সহজেই মিলে যাবে। সোনা ও রুপার বেলায় একটু দেখে পরখ করে কেনাই ভালো। যে গয়নাটি পরেই অফিস করুন না কেন, নিজের ব্যক্তিত্ব, পরিমিতিবোধ আর রুচির প্রকাশ যেন আপনার এই পছন্দের অনুষঙ্গের মধ্য দিয়েই ঘটে, সেটি ভুলবেন না।
গয়নার যত্ন
❏ সারা দিন অফিস করার পর ঘরে এসে গয়না খুলে রাখলেই তো হলো না। রাস্তার ধুলাবালি, ঘাম—অনেক কিছুই জড়িয়ে যাচ্ছে শখের গয়নার গায়। তাই তারও চাই একটু বাড়তি যত্ন। গয়না খুলে পাতলা কাপড় বা তুলা দিয়ে মুছে নিয়ে টিস্যু পেপারে মুড়ে গয়নার বাক্সে তুলে রাখুন। বাতাসের সংস্পর্শে মেটাল তো বটেই, এমনকি সোনা-রুপার রং আর মানও কমে। তাই টিস্যু বা পাতলা কাপড়ে মুড়ে রাখা ভালো।
❏ সোনা পুরনো হলে উজ্জ্বলতা কমে যায়। একটি পাত্রে পানি নিয়ে তার মধ্যে খানিকটা ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে সোনার গয়নায় অল্প টুথপেস্ট লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে টুথব্রাশ দিয়ে আলতো করে ঘষে নিন। দেখবেন তা উজ্জ্বলতা ফিরে পাবে।
❏ রুপার গয়না ভালোভাবে মুছে তাতে ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে শুকনা সুতি কাপড় দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে নিন।
❏ মুক্তার গয়না নরম ও ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে রাখুন। মনে রাখবেন, মুক্তার গয়না প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা একেবারে ঠিক নয়।
❏ কুসুম গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে তা দিয়ে পাথর বসানো গয়না পরিষ্কার করলে গয়না ঝকঝকে হয়ে উঠবে।
❏ অ্যান্টিক বা মেটালের গয়না একটুখানি লেবুর রসে ঘষে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে তা ঝকঝকে হবে।
❏ হীরার গয়না পরিষ্কার করতে অল্প টুথপেস্ট ব্রাশে নিয়ে ঘষে, পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর মুছে নিয়ে টিস্যু দিয়ে মুড়ে রাখুন। হীরার গয়না কিন্তু সোনা-রুপার সঙ্গে এক বাক্সে কখনোই রাখবেন না।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ
ছবিঃ সংগৃহীত