শীতের ফ্যাশনে জুতা
জুতা কিংবা স্যান্ডেল, নিত্যদিনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সঙ্গী। বর্তমান সভ্যতায় মানুষের ব্যবহার্য উপাদানের মধ্যে জুতা অন্যতম। শহরাঞ্চলে জুতা ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। বয়স-লিঙ্গ-দেশ-কাল ভেদে জুতার রয়েছে বাহারি ডিজাইন। জুতা বা জুতার উদ্ভাবন হয়েছিল মূলত মানুষের পা-এর নিরাপত্তা বিধানের জন্য, তবে এখন তা কেবল নিরাপত্তাই জোগায় না, বরং এটি সজ্জারও একটি অংশ।
বলা হয়ে থাকে, কারও জুতা দেখলেই বোঝা যায় লোকটা কেমন, তার ব্যক্তিত্ব কেমন। সত্যি বলতে, পোশাকের পাশাপাশি জুতাও মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। জুতাকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেও ভাবা হয়। এ কারণেই মাঝে মাঝে কিছু দেশে দেখা যায় নবদম্পতিদের গাড়ির সামনে পুরনো জুতা বাঁধা।
শীতে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাকের বাছাইয়ে। তবে নিজেকে পরিপাটি করে সাজানোর পর স্টাইলিশ দেখানোর জন্য আপনার প্রয়োজন ট্রেন্ডি জুতা। যা হতে হবে পোশাক, পরিবেশ ও বয়সের সঙ্গে অবশ্যই মানানসই। পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে জুতা পরার ক্ষেত্রে তরুণরা এখন বেশ সচেতন। সারা দিনের আপনার সঙ্গী যেহেতু জুতা তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। অফিসের পরিবেশে একরকম, আবার বন্ধুদের আড্ডায় একরকম, পার্টিতে গেলে একটু গর্জিয়াস, এভাবেই সম্মানভেদে বদলে যায় জুতার স্টাইল। তবে সময়ের পরিবর্তনে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জুতায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ফ্যাশনের পাশাপাশি আরামদায়ক জুতার গ্রহণযোগ্যতা এখন প্রাধান্য পাচ্ছে।
এখন শীতের কথা মাথায় রেখে জুতা নির্বাচন করা উচিত। সময়ের হাত ধরে ফ্যাশন জগতে এসেছে বেশ পরিবর্তন। বাজারে এখন তরুণদের নজর কনভার্সের দিকে। নতুন কালেকশন আর তার সঙ্গে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ বেশ চলছে। তবে রঙের দিক থেকে নীল ও হলুদ রংটা বেশি চলছে, পাশাপাশি এদের মিশ্রিত রংটাও বেশ আকর্ষণীয়। হালকা-গাঢ় বা মিক্সড লাল, সবুজ ও কালো রঙের কনভার্সের চাহিদাটাও বাজারে বেশি রয়েছে। লেদার, কাপড় বা জিন্স এমন অনেক কিছুর আদলেই কনভার্সগুলো তৈরি করা হয়েছে। কনভার্সের মধ্যেও রাখা হয়েছে কয়েকটি প্রকার। এর মধ্যে রয়েছে হাই কনভার্স, সেমি-হাই কনভার্স, শু কনভার্স, প্লেইন কনভার্স, স্পোর্টস কনভার্স, ফিতা কনভার্স ইত্যাদি। অফিস গেটআপ বা কর্পোরেট জগতে লেদারের জুতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এর চাহিদাও রয়েছে অনেক। তারুণ্যের ফ্যাশনকে প্রাধান্য দিয়ে এতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। অফিসিয়াল সু’র পাশাপাশি রয়েছে ক্যাজুয়াল জুতা। কেডস এবং বুটের আদলে তৈরি হচ্ছে এসব, যা আপনার স্মার্ট লুককে ধরে রাখবে। তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডিজাইন আসছে। জুতা এবং স্যান্ডেলের দাম নির্ভর করে ডিজাইন, ব্যবহার ম্যাটেরিয়াল এবং পণ্যের গুণগত মানের ওপর। লিবার্টি, বাটা, গ্যালারি এ্যাপেক্স, জেনিস, হাস পাপিজ, স্পার্ক গিয়ারের মতো বড় ব্র্যান্ডগুলোও শীতের কথা মাথায় রেখে তরুণ-তরুণীদের জন্য নিয়ে এসেছে দারুণ সব জুতার কালেকশন। তা ছাড়া এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে নান্দনিক ডিজাইনের সব জুতার কালেকশন।
কিছু পরামর্শ : শখের জুতা-স্যান্ডেলের যত্ন নিন। আর টিকিয়ে রাখুন অনেক দিন।
ক) পা ও কাজের ধরন বুঝে জুতা নির্বাচন করা উচিত। এর ফলে কাজ খুব সহজে ও আরামে সম্পন্ন করা যায়।
খ) কাপড়ের জুতা, স্যান্ডেল : কাপড়ের জুতা স্যান্ডেল শীতের সময় বেশি পরা হয়। তাই ধুলাবালি বেশি জমে যায়। কাপড়ের জুতা ময়লা হলে পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ধুয়ে রোদে শুকালেই পরিষ্কার হয়ে যায়। রাখার সময় পলিথিনে ভরে রাখুন। তাহলে অনেক দিন ভালো থাকবে।
গ) সবসময় ব্যবহারের জন্য যে জুতা গুছিয়ে রাখবেন সেটি পরিষ্কার করার পর খোলা জায়গায় না রেখে কাগজ অথবা কাঠের বক্সের ভেতর রাখুন। এতে জুতা ধুলাবালি ও আর্দ্রতা থেকে রক্ষা পাবে।
ঘ) চামড়ার জুতা-স্যান্ডেল বদ্ধ জায়গায় না রাখাই ভালো।আলো-বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় সুতির কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখলে ভালো থাকবে বেশি দিন।
ঙ) চামড়ার জুতা সরাসরি রোদে রাখবেন না। এতে চামড়া খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চ) জুতার কালির সঙ্গে যে কোনো পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়ে তারপর কালি করুন। এতে জুতা বেশিদিন ভালো থাকবে আর বর্ষায় পানি লাগলে জুতার খুব বেশি ক্ষতি হবে না।
ছ) অনেক সময় জুতা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হয়। দুর্গন্ধ কমাতে জুতার মধ্যে পারফিউম স্প্রে করতে পারেন, গন্ধ চলে যাবে।
জ) জুতা কোনোভাবে ভিজে গেলে, বাড়ি ফিরে যেখানে-সেখানে ফেলে রাখবেন না। যতই ক্লান্ত থাকুন না কেন একটু সময় করে জুতায় লেগে থাকা কাদা ও নোংরা পরিষ্কার করে ফেলুন। তা না হলে ময়লাটা জুতায় শক্ত হয়ে জেঁকে বসবে। আর তা থেকে আপনার পায়ে ইনফেকশনও হতে পারে।
সূত্র- দৈনিক যুগান্তর
ছবি-সংগৃহীত