চল্লিশেও থাকুক তারুণ্যের দিপ্তী
কুড়িতে বুড়ি আর চল্লিশে চালশে—এই প্রবাদগুলোকে এখন নতুন করে সাজানোর সময় এসেছে। কুড়ি পেরিয়ে চল্লিশে চালশে তো দূর অস্ত, এখন অনেকের শুরু হয়। সেই বয়সেও তারুণ্যের দীপ্তি ছড়াচ্ছেন অনেকেই। অনেকের চেহারা দেখে বোঝারই উপায় থাকে না, তিনি কুড়ি নাকি চল্লিশের মানুষ। যেমনটা সবাই বলেন যে বয়স একটা সংখ্যামাত্র। অনেকে সেটা প্রমাণ করে ছেড়েছেন।
ডাবল চিন রোধে ম্যাসাজ করুন-
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স বাড়ার গতিটাকে হয়তো রোধ করা যায় না। কিন্তু চেহারায় বয়সের ছাপটাকে এড়ানো যেতে পারে। এমনটাই জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। চল্লিশের কোঠায় এসে যে সমস্যা প্রবলভাবে দেখা দেয়, তা হলো হজমপ্রক্রিয়া কমে যাওয়া। এ ছাড়া মুখের টিস্যুগুলো ঝুলে যাওয়াও এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক সমস্যা। টিস্যুগুলো ঝুলে গেলে মুখের নিচে পড়ে ডাবল চিন। ফুলে গোল হয়ে যায় চোয়ালের দুই ধার। এসব সমস্যার পরিত্রাণ পেতে নিয়মিত নিচে থেকে ওপরের দিকে ম্যাসাজ করা উচিত। পারলারে সাধারণত এ ধরনের ম্যাসাজে স্টোন বা পাথরের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হাতের কাছে সেটা থাকলে ভালো। তবে না থাকলে চামচ ব্যবহার করার কথা জানালেন রাহিমা সুলতানা।
এ ধরনের ম্যাসাজের জন্য প্রথমে মুখের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এবার দুটো টেবিল চামচ দুই হাতে ধরে চোয়ালের নিচে থেকে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে টেনে নিন। চীনা আকুপ্রেশারের এই থেরাপি মুখে প্রয়োগ করলে ধীরে ধীরে মুখ একটা সুন্দর গড়ন পায়। চাইলে পাথরের চিরুনিও ব্যবহার করতে পারেন। চল্লিশের আরেকটি বড় সমস্যা, কপালের ত্বকে বলিরেখা পড়তে শুরু করা। এটিও বাড়িতে বসে দূর করা সম্ভব। বাজারে অনেক ধরনের ম্যাসাজ রোলার পাওয়া যায়। এ ধরনের পাথর বসানো রোলার দিয়ে কপালের নিচ থেকে ওপর বরাবর ম্যাসাজ করুন। দুটো ম্যাসাজই সপ্তাহে দুই দিনের বেশি না করাই ভালো।
পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে-
বয়স বাড়ার বড় সমস্যা ঘুমের গতি কমে আসা। বিভিন্ন কারণেই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে একটু বেশি বয়সে। ঘুমের ব্যাঘাতজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সুগন্ধি তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। যেকোনো সুগন্ধি তেল নিয়ে মাথার তালু, হাত ও পায়ের তালুতে ম্যাসাজ করুন। কারণ, স্নায়ুর শেষ বিন্দুগুলো এখানেই থাকে।
শর্করা কমিয়ে প্রোটিন বেশী গ্রহন করুন-
৩০ বছর বয়স থেকেই আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো হজমক্রিয়ার গতি কমে যাওয়া। আগের মতো সবকিছু খেয়ে ফেললে হজম না–ও হতে পারে। এ জন্য ৪০-এর দরজায় পা দেওয়ার আগেই খাবারদাবার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে মনে করেন পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার। ৪০-এর ঘরে গেলেই খাবার থেকে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো উচিত। বয়স বৃদ্ধিজনিত কারণে কোষের ক্ষয় পূরণ করা সম্ভব প্রোটিনের সাহায্যে। দুধ, ডিম, মাছ ছাড়াও প্রোটিনের অন্যতম উৎস মাংস। তাই খাবারের তালিকা থেকে মাংস বাদ ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন এই পুষ্টিবিদ। দিনে প্রতিবার খাবার গ্রহণের মধ্যে তিন ঘণ্টার বিরতি থাকতে হবে এবং দিনে অন্তত পাঁচবার খাবার গ্রহণ করতে হবে বলেও পরামর্শ দিলেন আখতারুন নাহার। এ ছাড়া প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ‘ব্যালান্স ডায়েট’ মেনে চলতে হবে।
৪০-এর ঘরে গেলেই খাবার থেকে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো উচিত। বয়স বৃদ্ধিজনিত কারণে কোষের ক্ষয় পূরণ করা সম্ভব প্রোটিনের সাহায্যে। দুধ, ডিম, মাছ ছাড়াও প্রোটিনের অন্যতম উৎস মাংস। তাই খাবারের তালিকা থেকে মাংস বাদ দেওয়া ঠিক নয়।
সকালের খাবারে রাখতে পারেন দুটি আটার রুটি, কম তেলে রান্না সবজি আর একটি সেদ্ধ ডিম। তিন ঘণ্টা বিরতির পর এক বাটি মুড়ি বা দুটি টোস্ট বিস্কুট অথবা পপকর্ন খেতে পারেন। দুপুরে দুই কাপ ভাতের সঙ্গে এক টুকরা মাংস বা মাছ খেতে পারেন। সঙ্গে রাখতে পারেন এক বাটি পাতলা ডাল এবং প্লেটভর্তি সালাদ। আবারও নির্ধারিত বিরতিতে দুধ বা ফলের তৈরি কোনো খাবার খেতে পারেন। রাতের খাবারে জন্য দুপুরের খাবারের মেনুটাই বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া যেকোনো সময় খেতে পারেন একমুঠো বাদাম, কিশমিশ বা খেজুর।
ব্যায়াম করতে হবে-
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে ৪০ বছরের পর শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে শারীরিকভাবে অনেকেই নমনীয় হয়ে পড়েন। যদি ২৫ বছর বয়সে ইয়োগা বা জিমের ব্যায়ামগুলো শুরু করা যায়, তাহলে শারীরিকভাবে অনেকটাই ফিট থাকা যায়—বললেন পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ফারজানা খানম।
ফারজানা খানম জানান, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলো ঠিকমতো করলেও চেহারায় প্রশান্তি ধরে রাখা যায়। এ ধরনের ব্যায়ামগুলো খুব কঠিন নয়। যেমন ঘরের কোনো খোলা স্থানে দুই দিকে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে পড়ুন। চোখ বন্ধ করে নাক দিয়ে এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনতে গুনতে বুক ভরে শ্বাস নিন। এবার ধীরে ধীরে ১ থেকে ১০ গুনতে গুনতে শ্বাস ছাড়ুন। সপ্তাহে পাঁচ দিন ৮ থেকে ১০ বার নিশ্বাস ছাড়া ও নেওয়ার ব্যায়ামটি করতে পারেন। ব্যায়ামটি স্নায়বিক দুর্বলতা কাটানোর পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা, স্মৃতিশক্তি ও মানসিক প্রশান্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া রক্তসঞ্চালন ও শারীরিক কাঠামো ঠিক রাখতে নিয়মিত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। সাঁতার কাটাও অনেক উপকারী শরীরের জন্য। এত শারীরিক পরিশ্রম করার পরও ঘুমাতে অনীহা কাজ করতে পারে অনেকের ভেতর। অল্প সময়ের ঘুমও ওজন বাড়ার বড় কারণ। ঘুম কম হলে হজমপ্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে ওজন বাড়তে পারে। পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য রাতের কাজের তালিকা তৈরি করুন। যেমন রাতে কতক্ষণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটাবেন, কতক্ষণ বই পড়বেন কিংবা অন্যান্য কাজ করবেন, সেগুলোর তালিকা তৈরি করে সময় মেনে কাজগুলো করতে শুরু করুন। প্রথম প্রথম সমস্যা হলেও পরে মানিয়ে যাবেন রুটিনের সঙ্গে। সুস্থ ও সতেজ থাকতে প্রতিদিন রাতে আট ঘণ্টা ঘুমানো খুব জরুরি বলে জানালেন ফারজানা খানম।
ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখুন-
বহুমূত্র ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগগুলো যদি কারও পরিবারে থেকে থাকে, সেগুলো শরীরে এই বয়সেই বাসা বাঁধতে শুরু করে। এ জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপনের প্রক্রিয়া বাতলে দিলেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক মানস কুমার গোস্বামী। তবে রোগগুলোর বংশগত কারণ না থাকলে অতটা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এ ছাড়া চল্লিশের পরই চোখের লেন্সের সম্প্রসারণশীলতা কমতে শুরু করে। যে কারণে কাছের জিনিসগুলো ঝাপসা দেখায়। এ জন্য চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে অবশ্যই চশমা ব্যবহার করতে হবে। যাঁদের কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা নেই, তাঁদের কিন্তু নিশ্চিন্ত হলে চলবে না। কারণ, এই বয়সে দৃষ্টি স্বাভাবিক থাকাই চোখের জন্য অস্বাভাবিক বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
ছবিঃ সংগৃহীত