শাড়ি পরার নানা ধরন
হালসময়ে শাড়ি পরার ধরন আর চিরায়ত স্টাইলে আবদ্ধ নেই। শাড়ি পরার নানা স্টাইল নিয়ে বলেছেন, পারসোনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত খান।
ধুতি স্টাইল-
ধুতির মতো করে শাড়ি? শুনতে অবাক লাগলেও দেখতে কিন্তু বেশ লাগে এই স্টাইলটি, জনপ্রিয়তাও বাড়ছে দিন দিন। ধুতির মতো করে পরা এই শাড়ির জন্য লাগবে না পেটিকোট; বরং শাড়িটা উঁচু করে পরার কারণে হাঁটাচলাতেও সুবিধা। ধুতি স্টাইল শাড়ি পরার জন্য শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিন লেগিংস বা প্যান্ট। পেটিকোটের বদলে এই প্যান্টের ওপরই পরতে হবে শাড়ি। শাড়ি পরার আগে পরে নিতে হবে জুতা। কারণ ধুতি-শাড়ি পরা হয় পায়ের গোড়ালি থেকে অনেকটা উঁচুতে। জুতার ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন উঁচু হিল। কারণ ধুতি শাড়িতে পায়ের দিকে নজর পড়ে বেশি। ধুতি স্টাইলে শাড়ি পরার ধরনই এত বিশেষ যে সেদিকেই নজর থাকে সবার। তাই প্রিন্টের শাড়ি না পরে একরঙা শাড়ি বেছে নিন। সুতি শাড়ি দিয়েও করতে পারেন এই স্টাইল। তবে নিজের সুবিধার জন্য জর্জেট কিংবা শিফনও হবে ভালো অপশন। ভিন্নভাবে শাড়ি পরার পাশাপাশি ব্লাউজ ও চুলের স্টাইলেও কিন্তু আনা চাই ভিন্নতা। নাহলে লুকের ষোলোকলা পূর্ণ হবে কিভাবে! নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী বেছে নিন পছন্দের লুক, তাক লাগিয়ে দিন সবাইকে।
যেভাবে পরবেন-
♦ এই স্টাইলের জন্য শাড়ি বড় হলে ভালো। ছোট শাড়িতে ভালো লাগবে না।
♦ প্রথমে শাড়ির আঁচলের অংশ থেকে বেশ কিছুটা ছেড়ে দিন। সামনে একটা গিঁট দিন।
♦ তারপর শাড়ির মাঝের অংশ ঘুরিয়ে কোমরে গুঁজে নিন। দুই পায়ের মধ্য দিয়ে ঘুরিয়ে গুঁজতে হবে।
♦ আঁচল সরু করে প্লিট করে নিন।
♦ এই কায়দায় শাড়ি শরীরের সঙ্গে দেড়বার ঘুরিয়ে পরুন।
♦ শাড়ির বাইরের অংশটাই দেখা যায়। তাই সে অনুযায়ী শাড়ি বাছাই করে পরুন।
ঢিলেঢালা আঁচল-
আঁচল দিন প্রচলিত নিয়মেই। তবে এবার আর আঁটসাঁট করে ব্লাউজ ঢেকে নয়; বরং একটু ঢিলে করে। ব্লাউজের একপাশ থাকুক একটু খোলা। শাড়ি পরার সময় আঁচলের অংশটা একটু বেশি লম্বা রাখুন। এতে আঁচল ঢিলেভাবে দিলে দেখতে ভালো লাগবে। এই স্টাইলের ক্ষেত্রেও ব্লাউজের ডিজাইন গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্লাউজের ডিজাইনের বেলায় একটু বৈচিত্র্য এলে মন্দ হয় না। ব্লাউজের রঙের বেলায়ও করতে পারেন এক্সপেরিমেন্ট। সাজ রাখুন মিনিমাল টোনে। সাজ হাইলাইট করবে শাড়ি পরার ঢং আর গাঢ় টোনের লিপস্টিক।
যেভাবে পরবেন-
♦ এই স্টাইলের জন্য শাড়ি পরার সাধারণ ধরন অনুসরণ করুন কুঁচি দেওয়া পর্যন্ত।
♦ শাড়ির কুঁচিটা যেন একেবারে সমান থাকে। ছোট-বড় হলে দেখতে ভালো লাগবে না।
♦ ছোট ছোট কুঁচি করতে হবে।
♦ আঁচল ছোট ভাঁজে সরু করে প্লিট করবেন।
♦ এই রীতিতে শাড়ির আঁচল লম্বা রাখতে হবে।
♦ একেবারে শেষে আঁচল ঢিলা রেখে ছেড়ে দিয়ে বাঁ কাঁধে পিন দিয়ে আটকে দিন।
ঐতিহ্যবাহী বাঙালি রীতি-
একপ্যাঁচে শাড়ি পরার এই ঢং বাঙালির বহু পুরনো রীতি। যখন ব্লাউজ পরার চল শুরু হয়নি তারও আগে থেকে। কুঁচি দিয়ে যখন থেকে ঠাকুরবাড়ির বউয়েরা শাড়ি পরা শুরু করল, তারপর এই স্টাইলের চল খানিক কমলেও এর সৌন্দর্যের আবেদন কমেনি এতটুকু। দুই পাশে আঁচল দিয়ে শাড়ি পরা হয় বলে দেখতে যেমন সুন্দর লাগে, সামলানোও সহজ হয়। এ ক্ষেত্রে শাড়িতে কুঁচি পড়ে না, আঁচলের অংশটাই থাকে বেশি। গতানুগতিকভাবে বাম কাঁধে আঁচল দেওয়ার পর বাড়তি অংশটুকু রেখে দিন ডান কাঁধে, হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী বাঙালি স্টাইলে পরা শাড়ি। এবার আঁচলের আগার চিকন অংশটুকু চাইলে আরেকটু সাজিয়ে নিতে পারেন নানা ধরনের ঝুনঝুনি বা ঝালর বেঁধে। এই স্টাইলে শাড়ির সঙ্গে সাধারণত কুঁচিওয়ালা ব্লাউজ মানায়। হেয়ারস্টাইলের বেলায় মাঝ বরাবর সিঁথি করে চুলে করতে পারেন খোঁপা, খোঁপায় ফুল গুঁজে আনতে পারেন বাড়তি সৌন্দর্য।
যেভাবে পরবেন-
♦ প্রথমে ডান দিকে শাড়ি গুঁজে এক পাক পেঁচিয়ে নিন।
♦ সাধারণত শাড়ি যেভাবে পরা হয় তার চেয়ে একটু চওড়া করে প্লিট করুন।
♦ তারপর বাঁ দিকে যেভাবে আঁচল করেন, সেভাবেই করুন।
♦ পেছনের বড় অংশটাকে সামনে ঘুরিয়ে এনে ডান কাঁধের ওপর ফেলে রাখুন। ডান কাঁধের আঁচলে একটা চাবির রিং ঝুলিয়ে নিলে মন্দ লাগবে না।
♦ এই রীতিতে শাড়ি পরতে আঁচল বড় রাখতে হবে।
সামনে আঁচল দিয়ে গুজরাটি স্টাইল-
ভারতের গুজরাট অঞ্চলের নারীদের নিজস্ব এই স্টাইল ভীষণ জনপ্রিয় পুরো উপমহাদেশেই। এমনকি শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপালের মেয়েরাও এই রীতির ভক্ত। গুজরাটি স্টাইলে আঁচলটি পেছনে না দিয়ে সামনে নিয়ে পরাই স্টাইল। আঁচল থাকে ডান কাঁধে পাটে ফেলা। কুঁচির ওপর ছেড়ে দেওয়া। এই স্টাইলে শাড়ি পরলে অনেকটাই লেহেঙ্গার মতো দেখায় বলে লুকে যোগ করে বাড়তি চমক। এ ক্ষেত্রে ব্লাউজের সামনের অংশ খোলা থাকে। চাইলে ব্লাউজে বিশেষ ডিজাইনও করে নিতে পারেন। লেহেঙ্গার সঙ্গে পরা টপসের মতো ব্লাউজ এই স্টাইলের শাড়ির সঙ্গে বেশ মানানসই। গলায় পরে নিন লম্বা কোনো মালা। ব্যস, হয়ে গেল স্টাইল।
যেভাবে পরবেন-
♦ গুজরাটি কায়দায় শাড়ি পরার প্রধান আকর্ষণই হলো আঁচল।
♦ এই স্টাইলের জন্য শাড়ি পরার সাধারণ ধরন অনুসরণ করুন কুঁচি দেওয়া পর্যন্ত।
♦ তারপর বাঁ দিকে আঁচল পিন না করে খোলা রেখে হাতের নিচ দিয়ে পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে আনুন ডান কাঁধের দিকে।
♦ এরপর আঁচলটাকে এনে ডান কাঁধে ফেলে পিন করে দিন।
♦ শাড়ির পাড় যদি জমকালো কাজ করা থাকে, তাহলে এই স্টাইলটা একেবারে পারফেক্ট।
মুমতাজ স্টাইল-
সত্তরের দশকে বলিউড নায়িকা মুমতাজ কয়েক ভাঁজে শাড়ি পরে আইকন হয়ে আছেন এখনো। ক্যাটস আই লাইনার, পাফ করা চুল আর কোমরের টুইস্ট এই রীতির অন্যতম আকর্ষণ। মানে কিনা মুমতাজের লুকটাও চাই। মুমতাজের মতো করে শাড়ি পরতে চাইলে শুরুতেই শাড়ি কোমরে গোঁজা শুরু করুন একটু ওপর থেকে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন শাড়ির সীমানা পায়ের গোড়ালির কয়েক ইঞ্চি ওপরে থাকে। এরপর শুরু করুন মুমতাজ স্টাইলে প্যাঁচানো। এবারও শাড়ি কোমরে গুঁজতে হবে কয়েক ইঞ্চি ওপর থেকে। প্যাঁচ যত বাড়বে, পায়ের গোড়ালি থেকে শাড়ির দূরত্বকেও তত বাড়াতে হবে। এই স্টাইলে শাড়ি পরতে চাইলে বেছে নিন শিফন অথবা জর্জেট। সাজে রেট্রো লুকই রেখে দিন। নইলে কী আর দেখতে মুমতাজ লাগবে!
যেভাবে পরবেন-
♦ প্রথমে ভালো করে শাড়ি কয়েকবার জড়িয়ে নিন। যেন টাইট থাকে।
♦ এবার বিভিন্ন পাকে শাড়ি ফোল্ড (ভাঁজ) করে বড় থেকে ছোট সাজান।
♦ পায়ের কাছে একটা পাক ছেড়ে দিয়ে, পরের পাকটি একটু বেশি করে তুলে কোমরে গুঁজে দিন।
♦ আবার পরের পাকটি আগের পাকের থেকে আরেকটু তুলুন।
♦ এভাবে শাড়ির শেষ পাক পর্যন্ত কোমরে গুঁজে দিন।
♦ আঁচলের অংশ বাঁ বা ডান যেকোনো কাঁধে পিন করুন। রেট্রো লুক বলে আঁচল ছোট হলেও দেখতে ভালো লাগবে।
সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ